যানবাহন

গাড়ি কেনাবেচার পরামর্শ

চিন্তা করছেন গাড়িটা বেচে দিবেন। সেরে নিন কিছু প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি। এতে আপনারও যেমন  সুবিধা হবে, ক্রেতাও সহজে জেনে  নিতে পারবেন গাড়ির খুঁটিনাটি। আর প্রস্তুতিটা ভালো না হলে যে দামে গাড়ি বিক্রি করতে চাইছেন, সে দামে বিক্রি করতে পারবেন না। আপনার গাড়ি, তারপরও নতুন করে গাড়িটা সম্পর্কে আরেকবার জেনে নিন।  যদি  ছোট-খাট কিছু  ঠিক করার দরকার হয়, তাও সেরে ফেলুন।  এই সামান্য কিছুই বেশ বাড়তি আয় করতে আপনাকে সাহায্য করবে।

গাড়ির অবস্থা জেনে নিন :

গাড়িটা বাইরের দিকে কেমন দেখাচ্ছে? ঝকঝকে তকতকে? এসবের আগে গাড়িটা নিয়ে যান গ্যারেজে। অভিজ্ঞ মিস্ত্রিকে দেখান। যদি বিক্রি করার জন্য সব কিছু নতুন করে ঠিক করতে হয়, তা করতে যাবার দরকার নেই। ক্রেতা নিজেও গাড়িটা ভালো কওে দেখেশেুনে নেবেন। আপনার মিস্ত্রির কাছ থেকে  জেনে নিন কি কি সমস্যা আছে। সেগুলোর একটা তালিকা করে ফেলুন। যিনি গাড়ি কিনবেন তিনিও নিশ্চই অভিজ্ঞ কাউকে নিয়ে আসবেন। ক্রেতার যেসব সমস্যা চিহ্নিত করবেন সেগুলো আপনার লিস্টে নাও থাকতে পারে।  আপনি  যখন সবকিছু জেনে ক্রেতার সাথে দাম নিয়ে আলোচনা করবেন, তখন অবশ্যই আপনি বাড়তি সুবিধা পাবেন। আর ক্রেতা তো সব সময় দাম কমাতে চাইবেই!

গাড়ি ঠিক করার রেকর্ড হাতে রাখুন : হতে পারে আপনি কখনও গাড়ির ব্যাটারি ঠিক করেছেন, ব্রেক বদলেছেন অথবা এগজস্টিং সিস্টেমের কাজ করিয়েছেন। এসবের পুরো রেকর্ড রেখে দিন। ক্রেতাকে দেখান আপনি কি কি জিনিস সম্পুর্ন নতুন লাগিয়েছেন।  এগুলো সাথে থাকলে অবশ্যই দাম নির্ধারণ করতে আলাদা জোর পাবেন। বেচার আগে গাড়িটাকে একবার টিউন তো করেই নিতে পারেন। দেখবেন ক্রেতাও খুশি আর আপনিও বেশি দাম পেলেন। মন্দ কি!

ঝকঝকে তকতকে :

এটা আসলেই দরকার। আগে দর্শন, পরে কিন্তু গুনের বিচার। মিস্ত্রিকে দেখালেন, সব ঠিকঠাক করলেন কিন্তু একবার গাড়িটা  ওয়াশ করলেন না: তাহলে  কিন্তু তরকারির দরে বেচতে হবে।  একবার ভালোমত ওয়াশ করে নিন। অন্তত দশবছরের পুরনো তো দেকাবে না! দাম পকেটে ভরবেন আপনি, এখন সিদ্ধান্তও আপনার।

ব্যক্তিগত সম্পত্তি, যে কিনবে তার : 

গাড়ির ক্রেতা যখন গাড়ির পাশে দাঁড়াবে , কেনার জন্য মনস্থির করবে, তখন তার কল্পনা কি হবে? গাড়িতে চড়ে হ্ওায়া খেয়ে বেড়াচ্ছে অথবা খুব প্রয়োজনে গাড়িটা তার জন্য কাজে লাগছে- এরকম একটি চিত্র কিন্তু তার মনের মধ্যে আঁকা হয়েছে। এখন গাড়ির মধ্যে যদি আপনার প্রয়োজনীয় জিনিস রেখে দেন তাহলে ক্রেতার কিন্তু মোটেই ভালো লাগার কারণ নেই। ব্যাকসিটে একটা ময়লা কিছু পড়ে আছে, গ্লাসে স্টিকার লাগানো, বক্সে মালপত্র- অবশ্যই এগুলো রাখবেন না। যা রাখতে পারেন- গাড়ির মুল কাগজপত্র।

গাড়ির ভেতরটা খেয়াল করুন :

যখন কার ওয়াশে নিবেন, গাড়ির ভেতরটা সেসময় ভালোভাবে ধুয়ে নিন। খেয়াল করবেন সিটের কোনায় যাতে ময়লা না থাকে। গাড়ির ভেতর থেকে যেন দুর্গন্ধ বের না হয়।  সিটের কোনায় বা অন্য কোথাও যদি ছিদ্র থাকে তাহলে  সিট কাভার লাগিয়ে দিন। সিট কাভার লাগানোর আগে ভালোভাবে ভ্যাকুয়াম ক্লিন করে নিন।

ডিটেইলিং:

আপনি যদি কোন পেশাদার ব্যক্তির কাছে নিয়ে যান গাড়ির ডিটেইলিং’এর জন্য, তাহলে টাকার যথাযথ ব্যবহার হতে পারে। তাদের কাছে গাড়ির ফাটল, নির্গমনস্থল, জানালার ভেতরটা এবং চাকার রিম পরিস্কার করার জন্য যন্ত্রপাতি আছে। ক্রেতা আপনার গাড়ির জন্য যাতে ভালো দাম বলে সেজন্য এটা বিনিয়োগ হিসাবে কাজ করবে। আপনি যদি এটা ডিটেইলড করাতে না পারেন তবে নিজে নিজেই ছোট পরিসরে তা করার চেষ্টা করুন। গাড়ির ভেতরটা ধুয়ে দিন, এয়ার ভেস্ট থেকে ধুলা পরিস্কার করুন এবং গাড়ির ভেতর থেকে প্লাস্টিক এবং কাঁচ পরিস্কার করুন ।

সম্ভাব্য ক্রেতা পরিস্কার, যথাযথ রক্ষনাবেক্ষন করা হয়েছে এ ধরনের গাড়ি দেখে ধরে নেয় যে আপনি এটাকে যতদিন চালিয়েছেন বেশ যত্নের সাথে চালিয়েছেন।  এটি গাড়ি কেনার সময়ে ক্রেতাকে উৎসাহিত করে। আপনি যদি গাড়ির ডিটেইল্ড করিয়ে রাখেন, রেকডর্স মেইনটেইন হাতে রাখেন এবং সাম্প্রতিক সময়েই গাড়ি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করিয়ে রাখেন তাহলে খুব দ্রুত বিক্রি করে ফেলতে পারবেন।

গাড়ির দাম নির্ধারন:

আপনাকে গাড়ির জন্য প্রযোজ্য যে দাম তা নির্ধারন করতে হবে, আবেগতাড়িত হয়ে কোন দাম বলা যাবে না। আপনার কাছে দীর্ঘদিন ধরে থাকা গাড়িটি সম্ভাব্য ক্রেতার কাছে পাঁচ, সাত অথবা দশ বছরের পুরানো মনে হতে পারে যা কিনা গাড়ি বিক্রির ক্ষেত্রে একটি সমস্যার সৃষ্টি করে।

গাড়ির মূল্য:

আপনার গাড়ির দাম ঠিক করতে একই ধরনের এবং যতদিন আপনি ব্যবহার করেছেন ততদিনের পুরানো আরেকটি গাড়ির দাম দেখুন। গাড়ির অবস্থা বিবেচনা করে তার দাম ঠিক করাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।  ভালো অবস্থার একটি গাড়ি ক্রেতার কাছে মনে হবে এই মাত্র শো রুম থেকে আনা হয়েছে।  আপনার গাড়ি যদি কিছুদিনের পুরানো হয় তবে এটি সাধারনত খুব ভালো অবস্থায় থাকে না। গাড়ির বাইরের অংশে আঘাতের ফলে কোন গর্ত, সিটে ছেড়া-ফাড়া কিংবা বাহ্যিক ত্রুটি গাড়ির দাম কমিয়ে দেয়। যান্ত্রিক ত্রুটিও গাড়ির দাম কমিয়ে দেয়।

ক্লাসিফাইড সাইট:

আপনার গাড়ির মতো একই মডেলের, একই মেয়াদের গাড়ির দাম কিরকম সেটা জানার সবচেয়ে সহজ এবং উপযুক্ত মাধ্যম হল ক্লাসিফাইড সাইটগুলো। আপনি যদি খুব দ্রুত আপনার গাড়ি বিক্রি করতে চান তাহলে এসব সাইটে আন্যান্য গাড়ির চেয়ে দাম একটু কম বলুন। মার্কেটপ্লেসে বিক্রির জন্য গাড়িগুলো থেকে আপনি গাড়ির গড় দাম সম্পর্কেও জানতে পারবেন।

বিজ্ঞাপনের জন্য ছবি:

ক্রেতা আপনার গাড়ির টেষ্ট ড্রাইভের জন্য নেবার পূর্বে গাড়িটি পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে দেখতে চাইবে। সঠিক মাইলেজ’এর চিত্র তুলে ধরতে গাড়ির ড্যাশবোর্ডের ছবি তুলে নিন।  গাড়ির বাইরের অংশের বিভিন্ন এঙ্গেল থেকে ছবি তুলুন যাতে গাড়িতে আঘাতপ্রাপ্ত গর্ত এবং আচড়ের দাগ গুলো দেখা যায় এবং অবশ্যই এসব কিছুই গাড়ির বিজ্ঞাপনে উল্লেখ করবেন। নিশ্চিত হয়ে নিন পুঙ্খানুপুঙ্খ বা নিখূত ছবি নেওয়ার জন্য যথেষ্ট আলো আছে। পুঙ্খানুপুঙ্খ ছবি নেওয়ার জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত সময় হল দিনের প্রথম ভাগ যখন সূর্যের আলো মাথার উপর থাকে।

বিক্রির জন্য গাড়ির বিজ্ঞাপন দিন:

গাড়ির জন্য দাম ঠিক করে ফেললে আপনি স্থানীয় সংবাদপত্র অথবা অনলাইনে ক্লাসিফাইড সেটির বিজ্ঞাপন দিতে পারেন। ক্লাসিফাইড সাইটের ক্ষেত্রে বিক্রয় ডট কম বিজ্ঞাপন দেয়ার জন্য বেছে নিতে পারেন।
গ্রাহকদের আগ্রহ বাড়াতে বিজ্ঞাপনটি আকর্ষণীয় করে তৈরি করুন।

বিজ্ঞাপন শুরু করুন সবচেয়ে প্রয়োজনীয় তথ্য যেমন গাড়ি নির্মান এবং মডেল সেই সাথে কোন বছরে তৈরি করা হয়েছে সেগুলো দিয়ে।  সর্তকতার সাথে আপনার গাড়িতে সাম্প্রতিক সময়ে কোন মেরামত করা হয়েছে কিনা সেটা বিজ্ঞাপনে উল্লেখ করুন।  যদি এটিতে আরো কোনো প্রয়োজনীয় তথ্য যেমন নতুন স্টেরিও, প্্্ওায়ার উইন্ডোজ অথবা অন্যান্য বিষয়গুলোও উল্লেখ করুন। এছাড়া এমন কোনো বিষয় যা ক্রেতাকে আকর্ষণ করতে পারবে বলে আপনার মনে হয় সেগুলোও উল্লেখ করুন।

সৎ থাকুন:

কোন জটিল সমস্যা থাকলে সেটি বিজ্ঞাপনের শুরুতেই উল্লেখ করুন। ক্রেতার হয়তো গাড়ির পেছনের দরজায় কোন গর্ত থাকলে কোন আপত্তি থাকবে না। কিন্তু আপনি যদি সেটা উল্লেখ না করেন, তবে ক্রেতার কাছে বিশ্বাযোগ্যতা হারাতে পারেন এবং তিনি সন্দেহ করতে পারেন আরো কোনো সমস্যা আপনি লুকাচ্ছেন কি না।  গুরুতর সমস্যাগুলো উল্লেখ করলেও ছোট-খাটো সমস্যা যেমন রেডিওর নব খুলে গেছে এগুলো না উল্লেখ করলেও চলবে।  তুচ্ছ বা অযৌক্তিক বিবরণ দেবার দরকার নেই।

আপনার সাথে ক্রেতা যাতে সহজে যোগাযোগ করতে পারে সেটি উল্লেখ করেছেন কিনা সে ব্যাপারে নিশ্চিত হন। আপনার ফোন নাম্বার এবং সেই সাথে কোন সময় ফোন করলে আপনাকে পাওয়া যাবে তা উল্লেখ করুন। টেষ্ট ড্রাইভের জন্য উপযুক্ত সময়ই বিজ্ঞাপনে দিয়ে দিন।

গাড়ি ভালোভাবে পরিস্কার রাখলে এবং বিস্তারিত রেকর্ডসহ ভালোমতো রক্ষণাবেক্ষণ করা হলে সহযেই অনেক আগ্রহী ক্রেতা তা পছন্দ করবে। ক্রেতার সাথে দেখা করার জন্য তৈরি থাকুন এবং টেষ্ট ড্রাইভে তার সঙ্গে থাকুন, আর এভাবেই খুব দ্রুতআপনার গাড়ি বিক্রি হয়ে যাবে।

Facebook Comments
সাবস্ক্রাইব করুন

No spam guarantee.

Show More

Related Articles

Back to top button
Close
Close