যানবাহন

ব্যবহৃত গাড়ির পরীক্ষামূলক চালনা

অতি সস্তা দামে ব্যবহৃত গাড়ি কিনতে হলে তা অনলাইনে ক্রয় করাটা একটি উত্তম উপায় হতে পারে, তবে অনলাইনে বিক্রয়যোগ্য গাড়ি যাচাইবাছাই করার কিছু বিশেষ ঝক্কিঝামেলা রয়েছে। নিজে উপস্থিত হয়ে না দেখা পর্যন্ত কোনো গাড়ি কেনা উচিত হবে না যদিনা তা প্রাচীন ধাঁচের কোনো গাড়ি হয়ে থাকে যেটি আপনি পুনরায় ব্যবহার করতে চান। ব্যবহারের ফলে জীর্ণ হয়ে যাওয়া কোনো প্রাচীন ধাঁচের গাড়ির ক্ষেত্রে আপনি নিশ্চিত জানেন যে, সেটিতে অবশ্যই কিছু মেরামত করিয়ে নিতে হবে। এছাড়া অন্য যেকোনো গাড়ি ক্রয়ের ক্ষেত্রে নিজে উপস্থিত হয়ে দেখে নেয়াই উচিত।
ছবি বা আলোকচিত্র
বিভিন্ন কৌণিক অবস্থান থেকে নেয়া গাড়িটির ভেতরের ছবি আপনাকে গাড়িটির গুণগত মান সম্পর্কে ধারণা প্রদান করবে। ঢাকায় বিক্রয়যোগ্য গাড়িগুলোর বাইরের ছবি থেকে আপনি সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন যে, সেটি আপনার পক্ষে নিজে উপস্থিত হয়ে দেখে আসার উপযুক্ত কি না। গুটিকয়েক ছবি দেখেই ধরে নেবেন না যে, গাড়িটির অবস্থা ভালো। ছবি দেখে আপনি বুঝতে পারবেন না যে, গাড়িটি আসলে রাস্তায় চালাতে অথবা চলতি পথের আরও সব যানবাহনের ভীড়ে চলার ক্ষেত্রে কেমন হবে।
পরীক্ষা
বাংলাদেশে আপনি যখন কোনো গাড়ির বিক্রেতার সাথে যোগাযোগ করে তা পরীক্ষামূলকভাবে চালানোর সিদ্ধান্ত নেবেন এবং পরীক্ষামূলকভাবে চালানোর জন্য তৈরি হবেন, তখন গাড়ির মধ্যে প্রবেশের পূর্বে আপানার কিছু করণীয় রয়েছে। চালকের আসনে বসার পূর্বে বাইরের অংশটি ভাল করে দেখে নেবেন।
বর্হিভাগ
টায়ার
চাবি ঘুরিয়ে গাড়িটি চালু করার আগেই গাড়ির টায়ারের খাঁজগুলো (tread) পরীক্ষা করে দেখলে আপনি গাড়িটি সম্পর্কে অনেক কিছুই জানতে পারবেন। টায়ারের উপরের খাঁজগুলো একই মাপের হওয়ার কথা। টায়ার যদি পুরাতন হয়ে থাকে তবে খাঁজগুলো মচকানো ও পুরাতন দেখাবে, তারপরও আপনাকে বেশ কিছু খাঁজ পরীক্ষা করে দেখতে হবে। যে টায়ারটির বাহিরের বা ভিতরের ধারগুলো দ্রুত ক্ষয় হয়ে গেছে বুঝতে হবে সেগুলোর কাঠামোবদ্ধ অবস্থানে (frame alignment) সমস্যা রয়েছে। গাড়িটির সামনের অংশের কাঠামোবদ্ধ অবস্থানটি (front end alignment) হয়ত অনেকদিন থেকেই ঠিক নেই অথবা অতীতের কোনো দুর্ঘটনাজনিত কারনে কাঠামো বিকৃতির (wrapping of the frame) মত গুরুতর কোনো সমস্যা রয়েছে।
গাড়ির তলদেশ
টায়ার পরীক্ষা করার সময় গাড়ির তলদেশের মাটির দিকে লক্ষ্য করুন। সেখানে কোনো তরল পদার্থের উপস্থিতি বা কোনো ভেজা দাগ থাকলে তা গাড়িতে কোনো ফুটো (leak) থাকার ইঙ্গিত দেয়। সেই ফুটো হতে পারে তেলের ট্যাংক থেকে শুরু করে এন্টি ফ্রিজ ব্যবস্থা (anti-freeze) পর্যন্ত যেকোনো জায়গায়। এটি একটি মারাত্মক সমস্যা, যে কারনে ব্যবহৃত গাড়িটি নিয়ে আপনাকে প্রায়ই গ্যারেজে যাওয়ার ভোগান্তি পোহাতে হতে পারে।
দরজা ও ইঞ্জিনের ঢাকনা
গাড়ির কাঠামোটির ধার বরাবর পরীক্ষা করে দেখুন সেখানে কোনো ভাঁজ বা দুমড়ানো অংশ রয়েছে কিনা। যদি তা থাকে তাহলে বুঝতে হবে গাড়িটির বডিতে (body) মেরমাতি কাজ করা হয়েছিল। সবগুলো দরজা ঠিকমত খোলা ও বন্ধ করা যায় কিনা তা নিশ্চিত করুন। সেগুলো যথানিয়মে আটকে যায় কিনা তা ও খেয়াল করুন। গাড়ির সামনের ঢাকনাটি (trunk) সহজভাবে খোলে ও বন্ধ হয় কিনা দেখে নিন। এসকল ক্ষেত্রে যেকোনো ধরনের অস্বাভাবিকতা থাকলে বুঝতে হবে যে, গাড়িটি অতীতে দুর্ঘটনায় পতিত হয়েছিল যে কথাটি বিক্রেতা প্রকাশ করতে চাচ্ছেন না।
লাইট ও সিগন্যাল ব্যবস্থা
গাড়ির হেডলাইট, পেছনের লাইট ও টার্ন সিগন্যালগুলো চালু অবস্থায় থাকা দরকার। গাড়ির মালিককে গাড়ির ভিতরে বসতে বলুন এবং সবগুলো লাইট অন করতে বলুন যাতে করে আপনি গাড়ির চারপাশে ঘুরে সেগুলোর কার্যকারিতা দেখে নিতে পারেন। লাইট সংক্রান্ত সমস্যাগুলো মাঝে মাঝে খুবই সাধারণ হয়ে থাকে, যেক্ষেত্রে শুধু বাল্ব বদলিয়ে নিলেই চলে। আবার মাঝে মাঝে তা গাড়িটির বৈদ্যুতিক সমস্যার (electrical problems) কারনেও হয়ে থাকে।
অন্তর্ভাগ
কার্পেটের নিচে
নতুন কার্পেট বিছিয়ে গাড়িটির অনেক ক্রটি ঢেকে রাখা হয়ে থাকতে পারে। কাপের্টের এক কোণা উঠিয়ে দেখে নিশ্চিত হোন যে গাড়ির মেঝেতে (floorboards) কোনো মরিচা নেই। এটি গাড়ির অনেক সমস্যার ইঙ্গিত দেয়। এটির নিচের দিক থেকে মরিচাযুক্ত হয়ে থাকতে পারে যা যেকোনো বিপদ ঘটাতে পারে। অতীতে গাড়ির উইন্ডশিল্ড পরিবর্তনের সময় তা ঠিকভাবে প্রতিস্থাপিত না হওয়ায় উইন্ডশিল্ডের নিশ্ছিদ্রকরণ ব্যবস্থায় ত্রুটি থাকতে পারে। এ থেকে ইঙ্গিত পাওয়া যাবে যে, গাড়িটিকে প্রায়ই বন্যার পানির মধ্য দিয়ে অথবা প্রবল বৃষ্টির মধ্য দিয়ে চালানো হতো।
গাড়ির কাঠামোতে মরিচা
গাড়ির দরজা ঠিকভাবে আটকায় কিনা তা পরীক্ষা করার সময় সেগুলোর ধার বরাবর লক্ষ্য করে দেখুন যে, সেখানে কোনো মরিচা রয়েছে কিনা। সামনের ঢাকনাটিও একইভাবে দেখে নিন। মরিচা একটি গাড়িকে নষ্ট করে ফেলতে পারে এবং এর কাঠামোটিকে দূর্বল করে দিতে পারে। দরজা মরিচাযুক্ত হয়ে থাকলে সে ব্যাপারে অবশ্যই গাড়িটির মালিকের কাছে জেরা করে জেনে নিতে হবে।
গন্ধ
কেউ যখন তার গাড়িটি বিক্রয় করতে চাইবেন তখন তিনি তা পরিষ্কার ও ঝকঝকে করে রাখবেন, যেন ভিতরে কোনো স্থায়ী গন্ধ না থাকে। গাড়িটিতে যদি এয়ার ফ্রেশনার দেয়া থাকে তবে অল্প সময়ের জন্য এর দরজা ও জানালাগুলো খুলে দিন। সুমিষ্ট গন্ধ চলে গেলে আপনি বুঝতে পারবেন গাড়ির ভিতরের আসল গন্ধটি কেমন, এবং নিজেকে আপনি গন্ধটির সাথে মানিয়ে নিতে পারবেন কিনা তাও বুঝতে পারবেন। হতে পারে গাড়িটি একজন ধূমপায়ীর অথবা পোষা প্রাণীর মালিকের ছিল। আপনি অ-ধূমপায়ী হয়ে থাকলে হয়ত এ ব্যাপারটি সাথে মানিয়ে নিতে পারবেন না।
যান্ত্রিক সজ্জা
গাড়িটির চালকের আসনটি পরীক্ষা করে দেখুন। নড়াচড়ার পক্ষে এটি কতটা আরমদায়ক তা নিশ্চিত হোন। আপনি এমন একটি গাড়ি বাড়িতে নিয়ে আসতে চাইবেন না যেটির আসন শক্ত এবং যেটিতে চড়ে এক বা দুই ঘন্টার ভ্রমণ শেষে আপনার বারোটা বেজে যাবে। আপনি যদি তাতে কুশন যুক্ত করে নেন, তারপরও অসুবিধাজনক একটি আসন ভবিষ্যতে আপনার পিঠের সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
পরীক্ষামূলক চালনা
ব্রেক
গাড়িটিকে শুধুই গলিপথে চালিয়ে দেখবেন না বরং এটিকে নিয়ে নিকটবর্তী হাইওয়েতে চলে যান। হাইওয়েতে যাওয়ার পথে মাঝেমাঝেই এর গতি বাড়ান ও দ্রুত ব্রেক কষে দেখুন। ব্রেক প্যাডেলের জোর কম থাকলে বুঝতে হবে যে, গাড়িতে নতুন ব্রেক প্যাড লাগানোর মতো অতি সাধারণ কিছু কাজ করিয়ে নিতে হবে, অথবা ক্যালিপার্স বা ব্রেক অ্যাসেম্বেল করানোর মত আরও কিছু কাজ করিয়ে নিতে হতে পারে।
উচ্চ গতি
হাইওয়েতে চলার সময় গাড়িটিকে নির্ধারিত উচ্চ গতিসীমায় চালিয়ে দিন এবং এর দিকে মনোযোগ দিন। গাড়িটির শব্দ ঠিকভাবে শুনতে রেডিও বন্ধ রাখুন। গাড়ির কিছু কিছু সমস্যা থাকে যা ধরা পড়ে কেবলমাত্র তখনই যখন গাড়িটি উচ্চ গতিতে চলে। গাড়িটির সঠিক লেন ধরে চলার প্রবণতাটি অনুভব করে দেখুন। গাড়িটি কি মৃদু কম্পনের সাথে চলছে? হুডের নিচ থেকে কি কোনো শব্দ আসছে? স্টিয়ারিং হুইলটি কি আলগোছে ধরে রাখা যাচ্ছে? গাড়ির গিয়ার ট্রান্সমিশন ম্যানুয়্যাল অথবা স্ট্যান্ডার্ড যেমনই হোক না কেন, গিয়ার পরিবর্তনের সময় কি তা মসৃণভাবে করা যাচ্ছে?
গাড়ি কেনার সময় যখন এটি পরীক্ষামূলকভাবে চালাবেন তখন গাড়ি চালনার বিভিন্ন কৌশল প্রয়োগ করে ইচ্ছেমতো চালিয়ে দেখুন এবং দশ মিনিটের বেশি সময় নিয়ে চালান। গাড়িটি উচ্চ গতিতে চালালে কোনো সমস্যা হয় কিনা এবং দীর্ঘ সময় ধরে চালালে তা অতিরিক্ত গরম হয় কিনা এসবই আপনি দেখে নিতে চাইতে পারেন।
পরীক্ষামূলক চালনায় আপনার কাছে ধরা পড়েছে কিন্তু গাড়ির মালিক আপনার কাছে প্রকাশ করেন নি এমন অনেক সমস্যাই যদি গাড়িটিতে থাকে তবে সেটি বাদ দিয়ে অন্যটির খোঁজ করুন। একটি ব্যবহৃত গাড়ির কিছু সমস্যা থাকতেই পারে, তবে আপনাকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে, আপনি আপনার গাড়িতে মোটামুটি কোন ধরনের সমস্যা মানিয়ে নিয়ে চলতে পারবেন।

Facebook Comments
সাবস্ক্রাইব করুন

No spam guarantee.

Show More

Related Articles

Back to top button
Close
Close