মোবাইল

অ্যান্ডরয়েড মোবাইল ফোনে কীভাবে ম্যাসেজিং অ্যাপ ব্যবহার করবেন?

সাম্প্রতিককালে, ইন্টারনেট ব্রাউজ থেকে শুরু করে ছবি তোলা, সব ক্ষেত্রেই আমরা মোবাইল ফোনের উপর নির্ভরশীল। কিন্তু, আমরা প্রায়ই ভুলে যাই যে একে অপরের সাথে কথা বলার জন্যও অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল ফোন দরকার। ব্যবহারকারীদের জন্য এই বিষয়টি সহজ করতে রয়েছে অগণিত ম্যাসেজিং অ্যাপ। এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে ম্যাসেজিং অ্যাপ-এর উপর লিখিত নিচের সহায়িকাটি দেখুন:

সর্বপ্রথমে রয়েছে হোয়াটসঅ্যাপ, যেটি এমন একটি অ্যাপ যা দিয়ে বিভিন্ন দেশের ব্যবহারকারীরা কোন রকম ঝামেলা এবং চার্জ ছাড়াই একে অন্যের সাথে চ্যাট করতে পারে। কারণ আপনার যা দরকার তা হচ্ছে মোবাইল নেটওয়ার্কে হোয়াটসঅ্যাপের ব্যবহার। এখানে আপনাকে ইউজার নেম তৈরি, পাসওয়ার্ড বা পিনের উপর নির্ভর করতে হবে না। বরং, এই অ্যাপটি সরাসরি আপনার মোবাইল নাম্বার ব্যবহার করে। এই কারণেই হোয়াটসঅ্যাপ বর্তমানে অ্যান্ড্রয়েড ফোনের সবচেয়ে জনপ্রিয় ম্যাসেজিং অ্যাপ। যখন এই অ্যাপটি প্রথম আসে তখন এটি সম্পূর্ণ বিনামূল্যে ছিল। এখন, প্রথম বছর ব্যবহারে এর কোন খরচ নেই কিন্তু পরবর্তী প্রতি বছরের জন্য খরচ $০.৯৯। এটি স্যামসাং থেকে এইচটিসি, নেক্সাস থেকে এলজি ফোন, সকল ব্যবহারকারীদের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। হোয়াটসঅ্যাপ দিয়ে আপনি টেক্সট ম্যাসেজ, ভিডিও, ভয়েস ম্যাসেজ এবং ছবি পাঠাতে পারবেন। এতে গ্রুপ চ্যাটেরও সুবিধা রয়েছে, যা অ্যাপটিকে মোবাইল ফোন গ্রাহকদের কাছে একটি আদর্শ অ্যাপে পরিণত করেছে।

এরপর রয়েছে স্ন্যাপচ্যাট অ্যাপটি। এই অ্যাপটি ইদানিংকালে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে, কারণ এর দ্বারা ফোনে কিছু সেভ করা ছাড়াই আপনি ছবি ও ম্যাসেজ পাঠাতে পারবেন যাতে ফোনের মেমরি নষ্ট হবে না। হ্যাঁ, স্ন্যাপচ্যাট দিয়ে ব্যবহারকারীরা সর্বোচ্চ গতিতে ব্যক্তিগত ছবি শেয়ার করতে পারবেন। সত্যি বলতে, এই ম্যাসেজগুলো প্রাপকের প্রান্তে সর্বোচ্চ দশ সেকেন্ড পর্যন্ত দেখা যাবে। যিনি ছবি পাঠাচ্ছেন তিনি ঠিক করতে পারবেন কত সময়ের জন্য ম্যাসেজটি দেখা যাবে। যদিও, ব্যবহারকারীরা তাঁদেরকে পাঠানো যে কোনো ছবির স্ক্রিনশট রেখে দিতে পারবেন। তাই ব্যবহারকারীকে সতর্ক হতে হবে তিনি কী পাঠাচ্ছেন এবং কাকে পাঠাচ্ছেন। স্ন্যাপচ্যাটে টেক্সট সংযোগ, ছবি আঁকা এবং ফিল্টার যোগ সহ ছবি এডিট করা সম্ভব। স্ন্যাপচ্যাটের মাধ্যমে আপনি ছবি বা ভিডিও যেমন পাঠাতে পারবেন ঠিক তেমনি তাঁদের কাছে লিখিত টেক্সটও পাঠাতে পারবেন। অর্থাৎ, এটি পরিবার ও বন্ধুবান্ধবের সাথে চ্যাট করার একটি অসাধারণ উপায়।

স্কাইপ আরেকটি ফ্রি ম্যাসেজিং অ্যাপ যার জনপ্রিয়তা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই অ্যাপটি প্রথম ডেস্কটপ কম্পিউটারের একটি সাধারণ প্রোগ্রাম হিসেবে ব্যবহার হতো, কিন্তু পরবর্তীতে এটি ফোনের ভিডিও কলিং অ্যাপ হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। কিন্তু, সময় গড়িয়ে বর্তমানে এটি কেবল ভিডিও এবং ভয়েস কলিং পরিষেবাই নয় বরং তারও চেয়ে বেশী কিছু। এখন ব্যবহারকারীরা আইএম-এর মতো একে অপরের সাথে চ্যাট করতে পারবেন। স্কাইপে একে অপরকে কাস্টম স্মাইলি পাঠাতে পারবেন। এতে গ্রুপ ম্যাসেজিং ফিচারটি রয়েছে। ম্যাসেজের সাথে ব্যবহারকারীরা মিডিয়া ফাইল এবং ভিডিও ম্যাসেজ পাঠাতে পারবেন। অন্যান্য ম্যাসেজিং অ্যাপ-এর মতো এটি শুধু মোবাইল নাম্বারের উপর নির্ভর করে না। বরং, এই অ্যাপে অ্যাক্সেসের জন্য তাঁদের ইউজার নেম ও পাসওয়ার্ড তৈরি করতে হবে।

এটা ঠিক যে আজকাল চারদিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের জয়জয়কার, যা সারা পৃথিবীর মানুষের কাছে একে অপরের সাথে যোগাযোগের এক চমৎকার মাধ্যম। আরেকটি খুব জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগের সাইট হচ্ছে টুইটার এবং সৌভাগ্যবশত এর জন্য একটি ফ্রি অ্যাপ রয়েছে। ১৪০ ক্যারেক্টারের এই সামাজিক যোগাযোগ সাইটে এর নিজস্ব অ্যাপ রয়েছে যা দিয়ে ব্যবহারকারীরা পড়তে ও টুইট করতে পারেন। যারা মোবাইল ফোন কিনতে যাচ্ছেন এমন অনেকেই প্রশ্ন করতে পারেন এটি কি আসলেই কোনো ম্যাসেজিং অ্যাপ, কিন্তু হ্যাঁ, এটি একটি ম্যাসেজিং অ্যাপ। সর্বোপরি, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের উদ্দেশ্যই হচ্ছে আপনার চারপাশের সব মানুষের সাথে সংযুক্ত রাখা। টুইটারে, আপনি অন্যান্য ম্যাসেজিং অ্যাপের মতো মানুষের সাথে চ্যাট করতে পারবেন। আপনি আপনার টুইটে ভিডিও লিঙ্ক ও ছবি যুক্ত করতে পারবেন। অ্যাপটিতে টুইটারের সব ফিচার রয়েছে অর্থাৎ আপনি সরাসরি ম্যাসেজ পাঠাতে এবং হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করতে পারবেন।

সবশেষে রয়েছে গো এসএমএস প্রো (Go SMS Pro) নামে একটি ফ্রি অ্যাপ। যারা শতশত মোবাইল ফোন দেখে সবশেষে অ্যান্ডরয়েড ফোন ব্যবহার করছেন তাঁরা আপনাকে এটা বলতে পারবেন যে অ্যান্ডরয়েড আপনাকে এক ধরনের কাস্টম ফিল দেবে যা আপনি কোনো আইফোনে পাবেন না। অ্যান্ডরয়েড ফোনে আপনার হাতেই সব ক্ষমতা ও নিয়ন্ত্রণ যা আইওএস বা উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেমে পাবেন না। তাই আপনি যখন কেনাবেচার ওয়েবসাইট থেকে অ্যান্ডরয়েড ফোনটি বেছে নেবেন তখন আপনি প্লে স্টোরে থাকা যে কোনো কাস্টম ম্যাসেজিং অ্যাপ ব্যবহার করতে পারবেন। কেবল অ্যান্ডরয়েডে কাজ করে এমন ম্যাসেজিং অ্যাপের মধ্যে অন্যতম সেরা হচ্ছে গো এসএমএস অ্যাপটি। এর বেসিক ভার্শনটি পুরোপুরি ফ্রি কিন্তু এর উন্নত আরেকটি ভার্শন রয়েছে যার জন্য আপনাকে অর্থ ব্যয় করতে হবে। গো এসএমএস অ্যাপটির পেইড ভার্শনটিতে কোনো অ্যাড নেই, ল্যাঙ্গুয়েজ প্যাকেজ ডাউনলোড করা যায় এবং অনেক ধরনের থিম পাবেন। গো এসএমএস অ্যাপটিতে অনেক কাস্টম স্মাইলি ও ইমোজি পাবেন। আপনি যখন অন্য ব্যবহারকারীর সাথে ম্যাসেজ আদান প্রদান করছেন তখন চ্যাট বাবলের মতো করে আসবে। যেই ফিচারটি গ্রাহকদের মন কেড়েছে তা হচ্ছে এর শিডিউল্ড টেক্সট পাঠানোর সুবিধা। তাই অসময়ে আপনার কোনো গুরুত্তপুর্ণ ম্যাসেজের কথা মনে পড়লে আপনি তা পাঠাতে আর ভুলে যাবেন না। এখানে আপনি আপনার নোটিফিকেশন কাস্টোমাইজ করতে পারবেন, অর্থাৎ ব্যক্তি অনুযায়ী আপনি ভিন্ন আইকন, টোন, ভাইব্রেশন ব্যবহার করতে পারবেন। তাই কে আপনার সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করছে তা জানতে এখন আর আপনাকে ফোনের দিকে তাকাতে হবে না।

মোবাইলে ম্যাসেজিং আজকালকার জীবনের অত্যন্ত গুরুত্তপুর্ণ একটি অংশ। আমাদের শত ব্যস্ততার মাঝে আমারা একে অন্যের সাথে যোগাযোগের জন্য ম্যাসেজিং অ্যাপের উপর নির্ভর করি। তাই বাজারের সবচেয়ে ভালো ও কার্যকর ম্যাসেজিং অ্যাপের জন্য অর্থ ব্যয় করা খুব গুরুত্বপূর্ণ। সৌভাগ্যবশত, বাজারে এমন অনেক অ্যাপ রয়েছে যার জন্য কোনো চার্জ দিতে হবে না।

Facebook Comments
সাবস্ক্রাইব করুন

No spam guarantee.

Show More

Related Articles

Back to top button
Close
Close