চাকরি

কাস্টমার সার্ভিস বা গ্রাহক পরিষেবা খাতে চাকুরি

কাস্টমার সার্ভিস খাতে চাকুরি খুবই আকর্ষণীয় হতে পারে। কাস্টমার সার্ভিস এমন একটি খাত যেখানে তেমন কোনো পূর্ব অভিজ্ঞতার প্রয়োজন হয় না এবং এটি এমন একটি চাকুরি যা মোটামুটি যে কেউই সহজে পেতে পারে। এ কারণেই কর্মজগতে নবীনদের জন্য অথবা যারা শুধুই কিছুটা অতিরিক্ত অর্থ আয়ের উপায় খুঁজছেন তাদের জন্য এটি একটি পছন্দের চাকুরি। যাহোক, এমন কিছু মৌলিক বিষয় রয়েছে যেগুলো মেনে চললে একজন ব্যক্তি কাস্টমার সার্ভিসের চাকুরিতে ভালো করতে পারবেন।

১. উচ্চমানের যোগাযোগ দক্ষতা
কাস্টমার সার্ভিস চাকুরির জন্য প্রধান গুরুত্বপূর্ণ যোগ্যতা হলো আপনার গ্রাহকদের সাথে পরিষ্কারভাবে যোগাযোগ করার সামর্থ। তারা যেন অবশ্যই আপনার কথা বুঝতে পারে, এবং তাদের সমস্যার সমাধানটি স্পষ্ট ভাষায় ও সংক্ষিপ্তভাবে বুঝিয়ে দেয়ার সামর্থও আপনার থাকতে হবে। আপনি যদি যোগাযোগের দক্ষতায় খুব একটা পারদর্শী না হয়ে থাকেন তাতে চিন্তার কারণ নেই। এটি এমন একটি দক্ষতা যা কিছুটা সময় ব্যয় করলেই শেখা যায়।
২. আত্ম নিয়ন্ত্রণ
আপনাকে এর মোকাবেলা করতে হবে। কিছু গ্রাহক আপনার বিরক্তি উদ্রেক করবে এবং তাদের সাথে পেরে ওঠা কঠিন হবে। আপনি যখন এ জাতীয় গ্রাহকের সম্মুখীন হবেন তখন খুব সহজেই আপনি মেজাজ হারাতে পারেন এবং তাদের কাছে পরাজিত হয়ে যেতে পারেন। যাহোক, গ্রাহক যতই বিরক্ত উদ্রেককারী হোন না কেন আপনাকে সবসময়ই পেশাদার আচরণ বজায় রাখতে হবে। আর এ কারণেই কাস্টমার সার্ভিস কর্মীদেরকে সবসময়ই অসাধারণ আত্মনিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা বজায় রাখতে হয়।
৩. সহমর্মি
অন্যদিকে, কিছু গ্রাহক আবার খুবই অপ্রস্তুত বোধ করেন। আপনি যখন কাস্টমার সার্ভিসয় কাজ করবেন তখন আপনাকে অবশ্যই সহমর্মি হতে হবে এবং অন্যকে বোঝার ক্ষমতা থাকতে হবে, কারণ আপনার কাজ হচ্ছে গ্রাহকের জীবনযাত্রাকে সহজ করতে সাহায্য করা। এতে করে আপনি যে কারো চাকর বনে যাবেন তা নয় বরং আপনি গ্রাহকের বন্ধুতে পরিণত হবেন।
৪. জ্ঞান
সব কাস্টমার সার্ভিস এক ধরনের নয়। তারপরও, সেগুলোর প্রতিটির ক্ষেত্রে যে পণ্যটির ব্যাপারে আপনি গ্রাহককে পরিষেবা প্রদান করবেন সেটি সম্পর্কে কাজ চালানোর মত ন্যূনতম জ্ঞান আপনার থাকতে হবে। আপনি যদি পণ্যটির খুঁটিনাটি বিষয় না জেনে থাকেন তবে প্রয়োজনীয় তথ্য তাৎক্ষণিকভাবে জেনে নেয়ার ব্যবস্থা আপনার থাকতে হবে। আর এর দ্বারাই নির্ধারিত হবে যে, আপনি বিষয়টির সমাধান দিতে পারবেন না কি সবকিছু গুলিয়ে ফেলবেন।
৫. ফোনে যোগাযোগের দক্ষতা
কাস্টমার সার্ভিসর বেশিরভাগ কাজ একান্তভাবে টেলিফোনেই করা হয়ে থাকে। এর অর্থ হলো ফোনে যোগাযোগের ক্ষেত্রে আপনার ভালো দক্ষতা থাকতে হবে: ফোন করার সরঞ্জামাদির যথাযথ ব্যবহার জানা, একসঙ্গে অনেকগুলো কল সামলানো এবং কোনো নির্দিষ্ট গ্রাহকের সঙ্গে কথা বলার সময় তার উপর থেকে মনোযোগ না হারানো। আপনি যদি কারো মুখোমুখি না থেকে কথা বলেন সেক্ষেত্রে আলোচনা বা বিষয়বস্তুর উপর মনোযোগ ধরে রাখা কঠিন আর এ কারণেই পরিষ্কারভাবে ব্যাখ্যা করে বুঝানোর দক্ষতাটি অতীব গুরুত্বপূর্ণ।
৬. কঠোর পেশাগত নৈতিকতা
কাস্টমার সার্ভিসে কাজ করতে হলে কঠোর পেশাগত নৈতিকতা থাকতে হবে। যেখানে কোনো গ্রাহকের সাথে দায়সারাভাবে কথা বলে দ্রুতই কলটি কেটে দেয়া সম্ভব সেখানে আরও একটু বেশি সময় নিয়ে গ্রাহকের জন্য কর্তব্যের চাইতেও একটু বেশি কিছু করলে তা প্রকারান্তরে আপনার জন্যই সম্মান বয়ে নিয়ে আসবে, যা হয়ত অন্যান্য কাস্টমার সার্ভিসদানকারী পাবে না। এটি যে শুধু আপনার নিয়োগদাতার চোখেই আপনাকে সম্মানিত করে তুলবে তা নয় বরং গ্রাহকরাও আপনার সঙ্গ পেয়ে সম্মানিত বোধ করবে। এই সাধারণ কাজটিই আপনার ভবিষ্যত পদোন্নতি ও বেতনবৃদ্ধির পথ খুলে দেবে।
৭. সাধারণ মানুষের সাথে কাজের অভিজ্ঞতা অর্জন করুন
কাস্টমার সার্ভিসের একটি বাজে দিক হলো অনেক লোকই তাদের সমস্যার জন্য আপনাকে দায়ী করবে। এ বিষয়টিকে ব্যক্তিগতভাবে নেবেন না- সাধারণ মানুষ যখন আপনার কোম্পানীতে কল করে তখন তারা সেরকম দৃষ্টিভঙ্গিই পোষণ করে। এ কারণেই অযৌক্তিক আচরণ মোকাবেলা করার অভিজ্ঞতা থাকাটা জরুরি; তাতে করে আপনার পক্ষে বিষয়টিকে ব্যক্তিগতভাবে নেয়ার এবং গ্রাহকের আচরণে আহত হওয়ার প্রবণতা কমে যাবে।
৮. গ্রাহক তোষণ
কাস্টমার সার্ভিস প্রদানকারীদেরকে পরিষেবা গ্রহণকারী গ্রাহককে কিছুটা তোষণ বা প্রশংসা করতেই হবে। গ্রাহকই হলেন সেই ব্যক্তি যার কারণে আজ তারা চাকুরিতে নিযুক্ত রয়েছেন; আপনার গ্রাহকের সমস্যাটিকে নিজের সমস্যা হিসেবে দেখুন এবং সেই বিবেচনাতেই সমাধান দিন। তাদেরকে বুঝতে এটা আপনাকে সাহায্য করবে যদিও গ্রাহকের আচরণ সবসময় বাড়াবাড়ি বলেই মনে হয়।
৯. অন্যদের সাথে মিলেমিশে কাজ করুন
আপনি যখন কাস্টমার সার্ভিস প্রদান করেন তখন আপনি একাকী থাকেন না। আপনি সেখানে একটি বড় সার্ভিস প্রদানকারী দলের অংশ হিসেবে থাকেন যারা সমস্যার সমাধান দিতে দিনের পর দিন একত্রে কাজ করে চলেছেন। তাই, একটি বৃহত্তর দলের অংশ হিসেবে কাজ করার জন্য আপনাকে পুরোপুরি উপযুক্ত হতে হবে। মোটের উপর, এর অর্থ হলো, যতই আপনি বেশি গ্রাহককে উন্নততর পরিষেবা প্রদান করতে পারবেন আপনি ততই দলের সাথে একত্মতা অনুভব করবেন যারা আপনাকে সমস্যাসৃষ্টিকারী কোনো গ্রাহককে সামলাতে কিংবা হঠাৎ উদ্ভুত কোনো পরিস্থিতি সামলাতে আন্তরিক সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন।
১০. যোগাযোগের দক্ষতার অতিরিক্ত যে প্রধান গুরুত্বপূর্ণ গুণটি প্রয়োজন তা হলো, ধৈর্য্য। আপনি যদি কম বোদ্ধা গ্রাহকদের সাথে ধৈর্য্যশীল না হতে পারেন তবে আপনি তাদেরকে সাহায্য করতে পারবেন না। ধীরে ধীরে বুঝিয়ে বলুন এবং বিষয়টি তাদেরকে বোঝাতে আপনার যা যা করা দরকার তা সবই করুন।
কাজ খুঁজে পাওয়া
কাস্টমার সার্ভিসের চাকুরি খুঁজে পাওয়ার অনেক উপায় রয়েছে। পত্রিকায় শ্রেণিবদ্ধ বিজ্ঞাপনে চোখ রাখাটা একটি উপায় হতে পারে অথবা আপনি Bikroy.com এর মত কোনো ওয়েবসাইটে খুঁজে দেখতে পারেন যেখানে ঢাকা ও চট্টগ্রামের চাকুরির তালিকা দেয়া থাকে। কোনো কোম্পানীতে পদ খালি আছে কিনা আপনি তাও খোঁজ নিয়ে দেখতে পারেন। কাজ খুঁজে পাওয়ার সবচেয়ে ভালো উপায় হলো আপনি যে কাজ করতে চান এবং আপনি যে ভালো কাজ পারেন সে ব্যাপারে কিছু কথা লিখে জানিয়ে দেয়া। বিভিন্ন কোম্পানী প্রতিনিয়ত এমনসব কর্মী খুঁজে চলেছে যারা তাদের কাজ ভালো দক্ষতার সাথে সম্পন্ন করতে পারে; এবং আপনি যদি নিজেকে একজন গুরুত্বপূর্ণ কর্মী হিসেবে প্রমাণ করতে পারেন তবে তারা আপনাকে লুফে নেবে।
আপনি সাময়িক কোনো কাজ খুঁজছেন কি না সেটিও কোনো ব্যাপার নয়। ঢাকায়, চট্টগ্রামে অথবা আপনার নিজের এলাকায় এ ধরনের চাকুরি খুঁজে দেখুন যে কোনো একটি পেয়েই যাবেন। আপনি যদি আগের নিয়োগকর্তার নিকট থেকে সুপারিশপত্র আনতে পারেন তবে আপনার জন্য চাকুরি খোঁজা সহজ হবে এবং ভালো একটি চাকুরিতে আপনার পদায়ন অনেক বেশি নিশ্চিত হবে। যাহোক, মনে রাখবেন, চাকুরির সন্ধানে মাঝে মাঝে খানিকটা সময় ব্যয় করতে হতে পারে, তাই কখনও ধৈর্য্য না হারিয়ে লেগে থাকাটা জরুরি।

Facebook Comments
সাবস্ক্রাইব করুন

No spam guarantee.

Show More

Related Articles

Back to top button
Close
Close