চাকরি

প্রতিষ্ঠানের জন্য খুঁজে নিন যোগ্য সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার

আপনি কি কোনো সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং প্রতিষ্ঠানে কর্মরত? কিংবা প্রজেক্ট ম্যানেজার হিসেবে কাজ করছেন কোথাও? তাহলে, একজন যোগ্য সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার কে খুঁজে বের করে নিয়োগ দেওয়ার এই পথ কিছুটা কঠিন হতে পারে। বিশেষত এমন এক সময়, যখন সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারদের চাহিদা তুঙ্গে। 

প্রযুক্তি নির্ভর বর্তমান পৃথিবীতে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়াররা প্রায় সকল ইন্ডাস্ট্রির সাথেই যুক্ত এবং প্রতিনিয়ত তারা ব্যবসাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে মুখ্য কিছু ভূমিকা পালন করছেন। আপনার প্রতিষ্ঠানের সকল নেটওয়ার্কিং চ্যানেল এবং অপারেটিং সিস্টেম সর্বোচ্চ সুবিধা নিশ্চিত করতে পারছে কিনা তা যাচাই এবং চালনা করার জন্যেই মূলত একজন সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার প্রয়োজন। 

ছোটখাটো স্টার্ট-আপ কিংবা বহুজাতিক ব্যবসা, প্রায় সকল প্রতিষ্ঠানই সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার সহ এই জাতীয় অন্যান্য পদ যেমনঃ কোডার, প্রোগ্রামার, এবং কোয়ালিটি অ্যাসুরেন্স ইঞ্জিনিয়ার নিয়োগের ক্ষেত্রে বাঁধার সম্মুখীন হতে পারে। এই তালিকায় কি আপনিও রয়েছেন? হয়তো আপনিও বেশ কিছু দিন ধরে আপনার প্রতিষ্ঠানের জন্য যোগ্য একজন সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার খুঁজছেন।  

চিন্তার কোনো কারণ নেই। নিচে উল্লেখিত আমাদের আলোচনাকৃত উপায়গুলো এবং বাংলাদেশে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং চাকরি সংক্রান্ত বিজ্ঞাপন কীভাবে দেবেন তা সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন। 

কাদেরকে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার বলা হয়? 

নিয়োগের পূর্ববর্তী পর্যায়ে, আপনি যদি নিজে একজন সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার না হয়ে থাকেন তাহলে তাদের কাজ সম্পর্কে কিছুটা জানাশোনা করে নিলে ভালো হয়। এক কথায়, সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়াররা মূলত কম্পিউটার প্রোগ্রাম বা অ্যাপ্লিকেশন তৈরি এবং ডেভেলপ করে থাকেন। 

বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের জন্যই সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার এবং সফটওয়্যার ডেভেলপারদের একই পদ হিসেবে দেখা হলেও, ডেভেলপার হিসেবে তাদেরকে অবহিত করা হয় যারা ব্রাউজার থেকে একটি সফটওয়্যারকে SaaS (software as a service) হিসেবে তৈরি এবং অপারেট করে থাকেন। 

এছাড়াও একজন সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারের যেসমস্ত বিষয়ে জ্ঞান থাকা প্রয়োজনীয়ঃ 

  • কম্পিউটার সায়েন্স 
  • ডাটাবেজ, কোডিং, এবং প্রোগ্রামিং
  • ডাটা স্ট্রাকচার ও এলগরিদম
  • অ্যাপ্লিকেশন ডিবাগিং এবং টেস্টিং 
  • সফটওয়্যার স্ট্রাকচারিং এবং ম্যাপিং 

এছাড়াও একজন ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে যেহেতু ব্যবসায়িক ক্লায়েন্ট, অন্যান্য ইঞ্জিনিয়ার, এবং কলিগদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগের প্রয়োজন হয়, তাই একজন সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারের জন্য পর্যাপ্ত নেটওয়ার্কিং জ্ঞান থাকা বাঞ্ছনীয়। 

কেন একজন সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার নিয়োগ দেবেন? 

বেশ কিছু কারণেই আপনার প্রতিষ্ঠানের জন্য একজন সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারের প্রয়োজন হতে পারে, যার মধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য কিছু হলোঃ 

  • প্রতিষ্ঠানের চাহিদা এবং ব্র্যান্ডিং মাথায় রেখে প্রতিটি প্রজেক্টের একটি পূর্ণাঙ্গ সফটওয়্যার সাইকেল ডিজাইন এবং তৈরি করা। 
  • বর্তমান সিস্টেমকে পুনরায় যাচাই করার মাধ্যমে কোনো ইরোর থাকলে তা নিরসন করা। 
  • ইউনিট টেস্ট, এবং কোড রিভিউ এর মাধ্যমে অ্যাপ্লিকেশন এবং নেটওয়ার্কিং সল্যুশন তৈরি করা 
  • প্রতিষ্ঠানের পণ্য এবং সেবার পরিমাণ বৃদ্ধির সাথে প্রতিষ্ঠানের অ্যাপ্লিকেশন বা সফটওয়্যার হালনাগাদ রাখা। 

কীভাবে একজন সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার নিয়োগ দেবেন? 

প্রায় সমস্ত নিয়োগের ক্ষেত্রেই বাঁধাধরা কোনো নিয়ম প্রযোজ্য না হলেও, চাকরি প্রার্থীদের মাঝে কিছু গুণাবলী এবং আপনার প্রতিষ্ঠানের সংস্কৃতিকে তুলে ধরার মাধ্যমে আপনি নিয়োগের প্রক্রিয়াকে কিছুটা সহজ করতে পারেন। 

নিয়োগের সময় সংক্ষিপ্ত করুন

বাংলাদেশে চাহিদার শীর্ষে থাকা চাকরিগুলোর মধ্যে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং অন্যতম। তাই বেশিরভাগ চাকরি প্রত্যাশীরা এক মাসের মধ্যেই তাদের নতুন চাকরি খুঁজে পেয়ে যান। সুতরাং নিয়োগদাতা হিসেবে আপনাকে দ্রুততা এবং সফলতার সাথে প্রক্রিয়াটি শেষ করতে হবে। যার মাধ্যমে আপনি সম্ভাব্য প্রার্থীদের মধ্যে থেকে আপনার প্রতিষ্ঠানের জন্য উপযুক্ত কাউকে বেছে নিতে পারবেন। 

প্রার্থীর কোডিং দক্ষতা যাচাই করুন

প্রতিষ্ঠানের জন্য সঠিক সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার যাচাই করার অন্যতম প্রধান একটি উপায় হলো সম্ভাব্য প্রার্থীদের কোডিং দক্ষতা সম্পর্কে অবগত হওয়া। এই টেস্ট বা পরীক্ষার জন্য টেকনিক্যাল নিয়োগদাতা এবং এইচ আর এর সহযোগিতা নিতে পারেন। 

নিয়োগ প্রক্রিয়ার উপরে জোর দিন

একজন নিয়োগপ্রার্থীকে কখনো শুরুতেই আপনার ইচ্ছেমত একটি কোডিং টেস্ট দিয়ে তা সমাধান করতে বলবেন না। বরং আপনি মূলত যে ধরণের সমস্যা নিরসনের জন্য তাকে নিয়োগ দেবেন, সেই ব্যাপারে ইন্টারভিউ এর সময়েই আলোচনা করে নেওয়া ভালো, এবং সেই অনুযায়ী তার দক্ষতা যাচাই করুন। 

প্রার্থীর সামনে একটি গোছালো কালচার উপস্থাপন করুন

আপনার প্রতিষ্ঠানের “সংস্কৃতি” হিসেবে কাজের ধরণ, প্রক্রিয়া, এবং অগ্রাধিকারগুলোকে নিয়োগপ্রার্থীদের সামনে তুলে ধরুন। কারণ একটি গোছালো প্রতিষ্ঠানের “সংস্কৃতি” শুধুমাত্র কাগজে-কলমেই থাকে না, বরং ম্যানেজমেন্ট থেকে শুরু করে সাধারণ কর্মীরাও এতে বিশ্বাস রেখে চলেন।   

কর্মক্ষেত্রের পরিবেশ 

একটি আকর্ষণীয় প্রতিষ্ঠান সব সময়ই তাদের কর্মীদের পেশাদার এবং ব্যক্তিজীবনে সাফল্য নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বিভিন্ন কার্যক্রমের সাথে তাদের যুক্ত করে রাখে। এবং যেহেতু এই সংস্কৃতিগুলোর সাফল্য অফিসে কর্মরত সবার একসাথে কাজ করার প্রবণতাকে নির্ধারণ করে, তাই আপনাকে বর্তমান এবং আসন্ন কর্মীদের কথা মাথায় রেখে উপযুক্ত কর্ম পরিবেশ এবং সর্বাধুনিক প্রযুক্তি নিশ্চিত করতে হবে।  

পেশাগত দক্ষতা বৃদ্ধির কোর্স

পেশাগত জীবনে সাফল্য মূলত কর্মীদের বেড়ে ওঠার সম্ভাবনা, শেখার সুযোগ, এবং দক্ষতা বৃদ্ধির উপরে নির্ভর করে। বাংলাদেশে এমন অনেক প্রতিষ্ঠান রয়েছে যারা শুধুমাত্র কর্মীদের দক্ষতা বৃদ্ধি এবং অন্যান্য সৃজনশীলতা বাড়ানোর লক্ষ্যে নির্দিষ্ট বাজেট বরাদ্দ রাখে। এছাড়াও এ জাতীয় উদ্যোগ নিলে নতুনরা আপনার প্রতিষ্ঠানের ব্যাপারে আগ্রহী হবে।

একজন দক্ষ সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার আপনার ব্যবসার প্রসারে যোগ করতে পারে এক অনন্য মাত্রা

সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারদের জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষতা এবং যোগ্যতা 

প্রতিষ্ঠান ভিত্তিক সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারদের চাহিদাগুলো আলাদা হলেও, সচরাচর যেসমস্ত দক্ষতা এবং যোগ্যতার বিবেচনায় তাদেরকে নিয়োগ দেওয়া হয় তার ভিত্তিকে নিচে কিছু প্রস্তাবিত এবং প্রয়োজনীয় দক্ষতা সম্পর্কে আলোচনা করা হলো। 

প্রয়োজনীয় দক্ষতা এবং যোগ্যতাপ্রস্তাবিত দক্ষতা এবং যোগ্যতা 
সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং এবং নেটওয়ার্কিং-এ প্রয়োজনীয় অভিজ্ঞতা ছাড়াও জাভা, সি++, এবং পাইথন ভাষায় অভিজ্ঞতাএসকিউএল এবং ওআরএম টেকনোলজির মত ডাটাবেজ সম্পর্কে জ্ঞান  
টেস্ট অটোমেশন-এ পারদর্শিতা ম্যাজেন্টো অথবা ওয়ার্ডপ্রেস-এর মত কন্টেন্ট ম্যানেজমেন্ট প্ল্যাটফর্ম সম্পর্কে ধারণা 
ওয়েব কেন্দ্রিক প্ল্যাটফর্মে র‍্যাপিড ডেভেলপমেন্ট সাইকেল অভিজ্ঞতাবিভিন্ন ফ্রেমওয়ার্ক ব্যবহার করে ওয়েব ডেভেলপমেন্ট করার ব্যবহারিক জ্ঞান
ডিজাইনিং, কোডিং, এবং সমস্যা সমাধানে দক্ষতা এইচটিএমএল৫ এবং সিএস এস৩ সস্পর্কে জানাশোনা

বাংলাদেশে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারদের বেতন কাঠামো 

আমাদের দেশে দক্ষতার পাশাপাশি প্রতিষ্ঠান ভেদেও সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারদের বেতন আলাদা হয়ে থাকে। টিয়ার ৪ (১০০ বা তদুর্ধ কর্মী রয়েছে এমন প্রতিষ্ঠান) একটি প্রতিষ্ঠান একজন সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারকে মাসে প্রায় ১৫ থেকে ২৫ হাজার টাকা স্যালারি প্রদান করে। 

টিয়ার ৩ (৫০০ বা তদুর্ধ কর্মী রয়েছে এমন প্রতিষ্ঠান) একটি প্রতিষ্ঠান থেকে একজন সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার মাসে প্রায় ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা উপার্জন করতে পারেন। 

টিয়ার ২ (১০০০-৫০০০ কর্মী রয়েছে এমন প্রতিষ্ঠান) লেভেলের একটি প্রতিষ্ঠান থেকে একজন সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার মাসে প্রায় ২৫ থেকে ৩৫ হাজার টাকা উপার্জন করতে পারেন। 

টিয়ার ১ (বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান) লেভেলের একটি প্রতিষ্ঠান থেকে একজন সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার মাসে প্রায় ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা উপার্জন করতে পারেন। 

আমাদের দেশে প্রতিষ্ঠান ভেদে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারদের বেতন কাঠামো ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে। তবে গড়ে একজন বাংলাদেশি সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার সাধারণত বার্ষিক ৪,৮০,০০০ টাকা উপার্জন করে থাকেন।  

শেষকথা  

একজন মানানসই এবং যোগ্য সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার বা সফটওয়্যার ডেভেলপার নিয়োগ দেওয়া নিঃসন্দেহে আপনার প্রতিষ্ঠানের মুনাফা অর্জনের পক্ষে সহায়ক কিন্তু সম্পুর্ণ লেখাটি পড়ার পর আপনি নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছেন কাজটি এতখানি সহজ নয়। 

তবে চিন্তার কোনো কারণ নেই, আমরা আশা করি উপরে আলোচনাকৃত উপায়গুলোর মাধ্যমে সহজেই কাঙ্ক্ষিত ব্যক্তিকে আপনার প্রতিষ্ঠানে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে নিয়োগ দিতে পারবেন। তবে, মনে রাখতে হবে সফল নিয়োগ শুধুই একটি লক্ষ্য নয়, বরং একটি গন্তব্য। চাকরির বিজ্ঞাপন দেওয়া থেকে নিয়োগ পর্যন্ত যাতে পুরো প্রক্রিয়াটি সুষ্ঠু ভাবে সম্পন্ন হয় তা আপনাকে নিশ্চিত করতে হবে।  

নিঃসন্দেহে নিয়োগ প্রক্রিয়ার এই যাত্রা প্রতিষ্ঠান এবং ইন্ডাস্ট্রি অনুযায়ী আলাদা আলাদা হবে। তাই আপনাকে আপনার প্রতিষ্ঠানের ধরণ জেনে সেই অনুযায়ী এগোতে হবে। নানান চড়াই-উৎরাই পার করে খুঁজে আনতে হবে মেধাবী এবং দক্ষ কর্মীদের।    

Facebook Comments
সাবস্ক্রাইব করুন

No spam guarantee.

Show More

Related Articles

Back to top button
Close
Close