যানবাহন

আমাদের দেশের জনপ্রিয় ৫ টি মোটরবাইক

এদেশে সবচেয়ে সুলভ এবং কার্যকর পরিবহনগুলোর অন্যতম হলো মোটরবাইক। যাদের গাড়ি কেনার সামর্থ নাই তারা মোটরবাইক কিনতে পারেন এবং গাড়ির মত একই দ্রুততায় তাদের গন্তব্যে পৌঁছতে পারেন। মোটরবাইকে চড়ার আরেক সুবিধা হলো এটিকে গাড়ির দুই লেনের মাঝবরাবর দিয়ে চালিয়ে নেয়া যায়। গাড়ি যেখানে চলতে পারে না সেখানে মোটরবাইক চালিয়ে যাওয়ার এই সুবিধার কারনে বিপুল সংখ্যক যানবাহন অধ্যুষিত সংকীর্ণ শহুরে পরিবেশে চলাচলের জন্য এটি একটি কাঙ্খিত ও দ্রুতগামী বাহনে পরিণত হয়েছে। যদিও এদেশে ব্যবহৃত মোটরবাইক বিক্রির প্রচলন সাধারণভাবে বহু বছর ধরেই চালু রয়েছে, তারপরও কিছু কিছু মডেল রয়েছে যেগুলো লোকেরা বিশেষভাবে পছন্দ করে থাকে। এই নির্দিষ্ট মডেলগুলো প্রধানত এদের নির্ভরযোগ্যতা, রক্ষণাবেক্ষণের স্বল্প খরচ ও বস্তুতঃ তাদের উচ্চ জ্বালানী সাশ্রয়ের কারনে দেশব্যাপি বিপুল জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। আসুন আমাদের দেশের মানুষের পছন্দনীয় ৫ টি মডেলের মোটরবাইক দেখে নেয়া যাক:

১। সিঙ্গার এসএম ১০০ (Singer SM 100)
মূল্য: ৬৫,০০০ টাকা (65,000 BDT)
সর্বোচ্চ টর্ক: ৬.২ এনএম/৭,৫০০ আরপিএম (6.2 Nm / 7,500 rpm)
সর্বোচ্চ শক্তি: ৭.৪ বিএইচপি/৮,৫০০ আরপিএম (7.4 BHP / 8,500 rpm)
ইঞ্জিন: ১০০সিসি (100cc)
এদেশে সিঙ্গার এসএম১০০ (Singer SM 100) সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় মোটরবাইক হওয়ার প্রাথমিক কারণ হলো এর অতি সুলভ মূল্য। আপনি মাত্র ৬৫,০০০ টাকায় এটি কিনতে পারেন, আর এই বাস্তব কারণেই এই বাইকটি, বলতে গেলে, যেকোনো মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রয়েছে। এই বাইকটিতে ইলেক্ট্রিক্যাল স্টার্টার সিস্টেম (electrical starter system) রয়েছে। এই বাইকটি যারা ব্যবহার করছেন তাদের কাছে এটি অত্যন্ত নির্ভরযোগ্য হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে। এক্ষেত্রে শুধু দরকারি রক্ষণাবেক্ষণের কাজটি নিয়মিতভাবে করাটা গুরুত্বপূর্ণ। যেকোনো মোটরবাইকের রক্ষণাবেক্ষণের কাজটি জটিল হলেও সিঙ্গার এসএম১০০ এর মত বাইকের ক্ষেত্রে তা করাটা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এটির মত তুলনামূলক কম মূল্যের একটি বাইকে উচ্চমূল্যের বাইকে ব্যবহৃত যন্ত্রাংশের মত অতটা উচ্চমানের যন্ত্রাংশ ব্যবহার করা হয় না। আপনি যদি সঠিক পদ্ধতিতে যত্ন নেন, কেবল সেক্ষেত্রেই এই বাইকের যন্ত্রাংশগুলো দীর্ঘদিন টিকবে। এই বাইকের যতটা জ্বালানী সাশ্রয় ক্ষমতা রয়েছে তাতে আপনি অভিযোগ করার কোনো সুযোগই পাবেন না। মোটের উপর, যত্রতত্র যাতায়াতে কিংবা কর্মস্থলে বা স্কুলে যাওয়ার জন্যও এটি একটি ভালো মোটরবাইক। তবে এটি কোনো প্রকার দৌড় প্রতিযোগিতার (street racing) উপযুক্ত নয়। এর ইঞ্জিনটি সেভাবে তৈরি নয় এবং খুব বেশি শক্তিশালী নয়।

২। ওয়ালটন ফিউশন এক্স (Walton Fusion EX)
মূল্য: ১১৬,০০০ টাকা (116,000 BDT)
সর্বোচ্চ টর্ক: ৮.৯ এনএম/৭,৫০০ আরপিএম (8.9 Nm / 7,500 rpm)
সর্বোচ্চ শক্তি: ১২ বিএইচপি/৭,৫০০ আরপিএম (12 BHP / 7,500 rpm)
ইঞ্জিন: ১২৫সিসি (125cc)
এদেশে বিক্রিত অনেক ধরনের ওয়ালটন মোটরবাইকের চাইতে এটি আলাদা। নজরকাড়া চেহারা আর নিখুঁত কর্মদক্ষতাসম্পন্ন মোটরবাইক তৈরিতে ওয়ালটনের সুখ্যাতি রয়েছে। ফিউশন এক্স (Fusion EX) এ ফিউশনের (Fusion) প্রচলিত ভার্সনগুলোর মত একই ইঞ্জিন রয়েছে। দক্ষতা ও ক্ষমতার দিক থেকেও এটি একই রকম। যাহোক, ওয়ালটন (Walton) ফিউশন এক্স (Fusion EX) কে ফিউশনের আগের সংস্করণগুলোর চাইতে আরও বেশি সুন্দর দেখানোর জন্য এর চেহারাতে বড় ধরনের কিছু পরিবর্তন এনেছে। এর রয়েছে ডিজিটাল স্পিডোমিটার (speedometer)। দীর্ঘ পথযাত্রার জন্য একটি আদর্শ বাইকে পরিণত করতে এতে অনেক বড় একটি গ্যাস ট্যাংকও (gas tank) রাখা হয়েছে। বাইকে ভ্রমণের পক্ষে এদেশের অনেক রাস্তাই যেহেতু উঁচুনিচু আর বেশি ঝাঁকুনি প্রবণ (bumpy), তাই দেখেশুনে এমন একটি বাইক নিতে হবে যেটিতে ঝাঁকুনি প্রতিরোধক ব্যবস্থা (solid suspension system) ভালো রয়েছে। ফিউশন এক্স এর এমন এক ঝাঁকুনি প্রতিরোধক ব্যবস্থা রয়েছে যা আপনাকে খুব উঁচুনিচু রাস্তাতেও কোনো প্রকার সমস্যা ছাড়াই মসৃণভাবে চলার সামর্থ প্রদান করবে।

৩। লিফান কেপি ১৫০ (Lifan KP 150)
মূল্য: ১৫৫,০০০ টাকা (155,000 BDT)
সর্বোচ্চ টর্ক: ১৩.৩ এনএম/৫,৫০০ আরপিএম (13.3 Nm / 5,500 rpm)
সর্বোচ্চ শক্তি: ১৩.২ বিএইচপি/৭,৫০০ আরপিএম (13.2 BHP / 7,500 rpm)
ইঞ্জিন: ১৫০সিসি (150cc)
লিফান কেপি ১৫০ হলো সেই ধরনের একটি বাইক যেটিতে চড়ে না বেড়ানো পর্যন্ত আপনি এর মাহাত্ম্য বুঝতে পারবেন না। এর মালিকরা সবসময়ই এর নিপুণ নিয়ন্ত্রণ আর কঠিন বাঁক (make sharp turns) অনায়াসে ঘোরার সামর্থের ব্যাপারে প্রশংসা করে চলেছেন। এর চেহারাটি বেশ খেলুড়ে ধরনের (sporty) যা আজকাল অনেকেই পছন্দ করছেন। এটি দৌড় প্রতিযোগিতার জন্য এবং শহরের রাস্তায় সাধারণ চলাফেরার জন্য সমানভাবে উপযুক্ত। এই বাইকটি এতটাই কাজের জিনিস যে, অনেকেই এটি কিনতে আগ্রহ পোষণ করেন। সম্প্রতি লিফান ১৫০ (Lifan KP 150) এর বিক্রি প্রচুর বেড়ে গেছে। এই বাইকটির অন্যতম সেরা বৈশিষ্ট্য হলো এর পিছনের চাকায় সংযুক্ত স্ট্যান্ডার্ড ডিস্ক ব্রেক (disc brake) যা বাজারে প্রচলিত অন্যান্য অনেক বাইকে মূল বৈশিষ্ট্য হিসেবে থাকে না। এর জ্বালানী সাশ্রয় ক্ষমতাও পুরোপুরি মাত্রায় গ্রহণযোগ্য, বিশেষ করে এই শক্তিসম্পন্ন বাইকের ক্ষেত্রে। এর ঝাঁকুনি প্রতিরোধ ব্যবস্থা (suspension) ও ব্রেক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা (braking) অত্যাধুনিক এবং এই মানের বাইকের যাকিছু বৈশিষ্ট্য আশা করা যায় তা সবই এতে রয়েছে। এটি চালু করতে (entry) চাবির ব্যবহার করাটা কারো কারো জন্য কিছুটা জটিল মনে হতে পারে, কিন্তু বাইক চুরি ঠেকানোর পক্ষে এটি একটি উত্তম ব্যবস্থা।

৪। রানার বুলেট (Runner Bullet)
মূল্য: ৯৮,০০০ টাকা (98,000 BDT)
সর্বোচ্চ টর্ক: ৭.৬ এনএম/৫,৫০০ আরপিএম (7.6 Nm / 5,500 rpm)
সর্বোচ্চ শক্তি: ৭.১ বিএইচপি/৮,০০০ আরপিএম (7.1 BHP / 8,000 rpm)
ইঞ্জিন: ১০০সিসি (100cc)
এখানে সেখানে বেড়ানোর জন্য এবং সাধারণ যাতায়াতের কাজে ব্যবহারের জন্য এটি আদর্শ মানের বাইক। যাহোক, আপনি যদি উচ্চ দক্ষতাসম্পন্ন এমন কোনো বাইক চান যেটি আপনি দৌড় প্রতিযোগিতা কিংবা বন্ধুদেরকে চমক দেখাতে ব্যবহার করতে পারবেন তাহলে এটি কেনা আপনার উচিত হবে না। রানার বুলেটের রয়েছে আরইভি কাউন্টার (REV counter) ইঞ্জিন কিল সুইচ (engine kill switch) ইলেক্ট্রিক্যাল সুইচ (electrical switches) এবং সামনের চাকায় ডিস্ক ব্রেক (disc brake)। ফুয়েল ট্যাংকটি পর্যাপ্ত পরিমাণে জ্বালানী ধারনের পক্ষে যথেষ্ট বড়। তাই বারবার জ্বালানী না নিয়েই আপনি অনেক পথ পাড়ি দিতে পারবেন। এটির ব্যাপারে কিছু কিছু আরোহী যে একমাত্র অভিযোগটি করে থাকেন তা হলো, বাইকটির শেষ প্রান্তীয় নিম্ন ঘুর্ণন সঞ্চারক বলের অভাব (lack of low end torque)।

৫। রানার টার্বো (Runner Turbo)
মূল্য: ১৩৪,০০০ টাকা (134,000 BDT)
সর্বোচ্চ টর্ক: ১১.৬ এনএম/৫,৫০০ আরপিএম (11.6 Nm / 5,500 rpm)
সর্বোচ্চ শক্তি: ১১.৩ বিএইচপি/৭,০০০ আরপিএম (11.3 BHP / 7,000 rpm)
ইঞ্জিন: ১৫০সিসি (150cc)
এই বাইকটির শক্তির আসল জায়গা হলো এটিকে খুব সহজেই সরু রাস্তায় চালিয়ে নেয়া যায়। এমনকি খুব সরু জায়গার মধ্যেও এই বাইকটি চলিয়ে নেয়া কোনো ব্যাপারই নয়। রানার টার্বোর জ্বালানী সাশ্রয় ক্ষমতা সম্পর্কে বলতে হয় যে, অন্যান্য ১৫০সিসি বাইকের সাথে তুলনা করলে এর জ্বালানী সাশ্রয় ক্ষমতা গড়মানের। কিছু কিছু আরোহী অভিযোগ করে থাকেন যে, এর ঝাঁকুনি প্রতিরোধক ব্যবস্থাটি তাদের অভ্যস্ততার চাইতে একটু বেশিই সংবেদনশীল। যাহোক, প্রয়োজন হলে এটিকে সমন্বয় করে নেয়া যায়। এই বাইকটি কেনার সবচেয়ে বড় সুবিধাগুলোর অন্যতম হলো রানারের পক্ষ থেকে (Runner) প্রদত্ত তিন বৎসরের বিক্রয়ত্তোর সেবার নিশ্চয়তা।

Facebook Comments
সাবস্ক্রাইব করুন

No spam guarantee.

Show More

Related Articles

Back to top button
Close
Close