ইলেকট্রনিক্সটিপস ও গাইড

কীভাবে নিজের জন্য সঠিক ইয়ারবাডস বেছে নেবেন?

ট্রু ওয়্যারলেস ইয়ারবাডস বা ওয়্যারলেস ইয়ারবাডস বর্তমানে অন্যতম জনপ্রিয় একটি প্রযুক্তি পণ্য। প্রায় প্রতিটি ইয়ারফোন প্রস্তুতকারক কোম্পানিই তাদের নিজস্ব মডেলের ইয়ারবাডস বাজারে আনার প্রতিযোগিতায় নেমেছে।

দেশের বাজারে আপনি চাইলে পছন্দের আকার, ডিজাইন, মূল্য এবং এমনকি ব্র্যান্ড ভিত্তিক আপনার পছন্দের ইয়ারবাডস কিনতে পারেন সহজেই। তবে, বাজারে থাকা এই ডিভাইসগুলোর বেশিরভাগই নিম্ন মানের হয়ে থাকে এবং দীর্ঘ সময়ের জন্য টেকসই হয় না। তাহলে আপনি গুণগত দিক দিয়ে একজোড়া ভালো ইয়ারবাডস কিনবেন কীভাবে?

ইয়ারবাডস এমন একটি গ্যাজেট যা আমরা প্রতিদিন ব্যবহার করি, বিশেষ করে অনেকে ব্যায়াম করার সময় অথবা কাজে যাওয়ার পথে ব্যবহার করে থাকেন। সুতরাং, আপনি যদি গান কিংবা অডিওবুক শোনাকে উপভোগ করে থাকেন তবে আপনার কাছে থাকা চাই সঠিক একজোড়া ইয়ারবাডস।

বাজারে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা হাজার হাজার ওয়্যারলেস ইয়ারফোন বা ইয়ারবাডস থেকে আপনার জন্য সঠিক জোড়াটি বেছে নেওয়া চ্যালেঞ্জিং হতে পারে। সুতরাং আপনি যদি এই মুহূর্তে একজোড়া পারফেক্ট ইয়ারবাডসের সন্ধানে থাকেন এবং দেশের বাজারে ইয়ারবাডসের দাম সম্পর্কে জানতে চান, তাহলে আপনাকে কিছু বিষয় খেয়াল রাখতে হবে। 

ইয়ারবাডস কেনার সময় যা যা লক্ষ্য রাখতে হবে

ইয়ারবাডস কেনার সময় গ্রাহকরা সাধারণত তিনটি ব্যাপারে প্রাধান্য দিয়ে থাকেনঃ ব্র্যান্ড, ডিজাইন এবং দাম। প্রথমত, যদি তাদের কোনো বিশেষ ব্র্যান্ড পছন্দ থাকে তবে তারা সেই ব্র্যান্ডের ইয়ারবাডস বাজারে আছে কিনা তা খোঁজ করেন।

তারপর তারা লক্ষ্য করেন ইয়ারবাডসের সামগ্রিক ডিজাইন। ইয়ারবাডসটি দেখতে আকর্ষণীয় কিনা বা এটি কি তাদের পছন্দের রঙে বাজারে পাওয়া যায়? সর্বোপরি গ্রাহকেরা ইয়ারবাডসের মূল্য বা দাম লক্ষ্য করে থাকেন। এটা কি তাদের বাজেটের সাথে মানানসই? নাকি একই দামে অন্য কোনো মডেল থেকে আরও ভালো কিছু ফিচার পাওয়া যেতে পারে?

নিজের জন্য সঠিক ইয়ারবাডস বেছে নেওয়ার সময় এই বিষয়গুলো বেশ প্রয়োজনীয় হতে পারে। তবে, শুধুমাত্র এই বিষয়গুলোই যথেষ্ট নয় অর্থাৎ এই তথ্যগুলো আপনাকে সঠিক ইয়ারবাডস খুঁজে পেতে সাহায্য করবে না। বরং আপনার বাজেটের মধ্যে সেরা ইয়ারবাডস পেতে হলে নিচে উল্লেখিত বিষয়গুলো যাচাই করে দেখতে পারেন। 

ইয়ারবাডসের ফিচার ও লুক

বাজারে ইয়ারবাডস খোঁজার সময় আপনি মুখোমুখি হবেন নিত্যনতুন সব পণ্যের যাদের রয়েছে আধুনিক কিছু বৈশিষ্ট্য। তবে এক্ষেত্রে আপনার ব্যবহারের জন্য প্রাসঙ্গিক বৈশিষ্ট্য মিলিয়ে খোঁজার চেষ্টা করুন। উদাহরণস্বরূপ, যদি আপনি জিমে বা ওয়াশরুমে আপনার ইয়ারবাডস ব্যবহার করতে না চান, তাহলে ওয়াটার রেসিস্ট্যান্ট বা পানি-প্রতিরোধী ইয়ারবাডস সন্ধান না করাই শ্রেয়, বরং, আপনি ওই বাজেটের মধ্যে অন্যান্য সেরা বাডসগুলো খুঁজে দেখতে পারেন।

বর্তমানে প্রয়োজনীয় কিছু ইয়ারবাডস ফিচারের মধ্যে রয়েছে শক্তিশালী কানেক্টিভিটি, ফোন কল রিসিভ করা এবং সুষ্ঠু ভাবে কথা বলা, দ্রুত ডিভাইসের সাথে সংযোগ স্থাপনের সক্ষমতা, এবং ভয়েস অ্যাসিস্টেন্স সাপোর্ট। তবে ২০২১ সালে ইয়ারবাডস কেনার জন্য মনঃস্থির করে থাকলে কমপক্ষে ব্লুটুথ ভার্সন ৫.০ এবং অন্যান্য কানেক্টিভিটি আছে এরকম ইয়ারবাডস বেছে নিতে হবে।

আপনি যদি ইয়ারবাডসের উপরের অংশে টাচ ভিত্তিক ফিচার চান, তাহলে সেই ফিচার আছে এরকম বাডস খোঁজ করুন। তবে আপনি যদি বিছানায়, খেলাধুলা করার সময় বা পানির আশেপাশে আপনার ইয়ারবাডস ব্যবহার করতে চান, তাহলে টাচ প্রযুক্তির জন্য আপনার অগোচরেই সেগুলো স্বয়ংক্রিয়ভাবে চালু বা বন্ধ হয়ে যেতে পারে। অন্যদিকে ফিজিক্যাল বাটনের ইয়ারবাডসগুলো নিয়ন্ত্রণ করা সুবিধাজনক তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এগুলোতে ওয়াটার রেজিস্ট্যান্স সুবিধা থাকে না।

ইয়ারবাডসের ধরণ ও বিশেষত্ব

বর্তমানে বাজারে প্রায় সকল আকার এবং ডিজাইনেই ইয়ারবাডস পাওয়া যায়। আপনাকে শুধুমাত্র ইয়ারবাডস ব্যবহার করে আপনি যা যা করতে চান তার উপর নির্ভর করে অর্থাৎ আপনার প্রয়োজন অনুসারে ইয়ারবাডসের ধরণ নির্বাচন করতে হবে। উদাহরণস্বরূপ, আপনি যদি শুধুমাত্র গান শুনতে চান, সেক্ষেত্রে সেরা অডিও কোয়ালিটি দিতে সক্ষম এমন ইয়ারবাডস বেছে নেওয়া উচিত, অন্যদিকে আপনি যদি জিম করার সময় ইয়ারবাডস ব্যবহার করতে চান তাহলে নিরাপদ ফিটিং এবং ওয়াটার রেজিস্ট্যান্স ফিচারযুক্ত ইয়ারবাডস আপনার জন্য মানানসই। এছাড়াও বাজারে থাকা আরও কিছু ধরণের ইয়ারবাডসের মধ্যে রয়েছেঃ 

  • সাউন্ড আইসোলেশনঃ এই ইয়ারবাডসগুলো কাছাকাছি কোথাও ঘটছে এমন শব্দকে বিচ্ছিন্ন করতে সাহায্য করে থাকে। অর্থাৎ আপনাকে মানসম্মত মিউজিক্যাল অভিজ্ঞতা দেওয়ার জন্য আশেপাশের অন্যান্য শব্দগুলোকে ব্লক করে। সাউন্ড আইসোলেশন ফিচার সমৃদ্ধ ইয়ারবাডস ভারী ট্রাফিক বা জনাকীর্ণ জায়গায় গান শোনার জন্য বেশ উপযোগী।
  • অ্যাক্টিভ নয়েজ ক্যান্সেলেশনঃ সাউন্ড আইসোলেশন যেমন অডিওকে অন্য শব্দ থেকে আলাদা করে রাখে, তেমন অ্যাক্টিভ নয়েজ ক্যান্সেলেশন আপনার চারপাশে যেকোনো ধরনের নয়েজ বা আওয়াজকে রোধ করে রাখে। এই ইয়ারবাডসগুলোতে ব্যবহার করা হয়েছে ‘হিয়ার-থ্রু’ প্রযুক্তি যাতে ব্যবহারকারীরা তাদের পছন্দ অনুযায়ী শব্দ-রোধের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।
  • ঘাম প্রতিরোধীঃ যদি আপনি সকালে/সন্ধ্যায় জগিং করার সময় বা জিমে ব্যায়াম করার সময় গান শুনে থাকেন, তাহলে আপনি ঘাম প্রতিরোধযোগ্য বা সোয়েট রেসিস্ট্যান্ট ইয়ারবাডস ব্যবহার করতে পারেন। এই ইয়ারবাডসগুলো সাধারণত ঘাম প্রতিরোধী হিসেবে তৈরি করা হয়।
  • ব্লুটুথঃ আপনি যদি সহজে ব্যবহারযোগ্য কোনো অডিও ডিভাইস কেনার কথা ভেবে থাকেন, তাহলে আপনি ব্লুটুথ ইয়ারবাডস কিনতে পারেন। বাজারে পাওয়া যায় এমন বেশিরভাগ ইয়ারবাডস ডিভাইসের সাথে সংযোগের জন্য ব্লুটুথ প্রযুক্তি ব্যবহার করে থাকে। এছাড়াও আপনি যদি খেলাধুলা বা ব্যায়াম করে থাকেন যার জন্য প্রচুর নড়াচড়ার প্রয়োজন হয়, তাহলে আপনি স্বাচ্ছন্দ্যে এই ইয়ারবাডসগুলো ব্যবহার করতে পারেন। 

ব্যাটারি লাইফ (কেস ও ইয়ারবাডস)

ইয়ারবাডস কেনার ক্ষেত্রে ব্যাটারি লাইফ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এবং আপনি সহজাত ভাবেই এটিকে বাদ দিয়ে ইয়ারবাডস কেনার কথা ভাবতে পারবেন না। আপনার বাডসগুলোতে যত বেশি ব্যাটারি বা চার্জ ধারণক্ষমতা থাকবে, আপনি সেগুলোকে একবার চার্জ দেওয়ার মাধ্যমে তত বেশি গান বা অডিও উপভোগ করতে পারবেন। অন্যদিকে, বাডসের কেসের যত বেশি ব্যাটারি ধারণক্ষমতা থাকবে ততবার এর মাধ্যমে বাডসগুলো চার্জ করা যাবে।

বেশিরভাগ ইয়ারবাডস ব্র্যান্ড তাদের মিউজিক প্লেব্যাক সময়কে ব্যাটারি লাইফ স্প্যান হিসেবে প্রচার করে থাকে। তবে ফোন রিসিভ করার ক্ষেত্রে এই সংখ্যা কিছুটা কমতে পারে। সাধারণত বাডসে ৪-৬ ঘন্টা ব্যাটারি লাইফ থাকে এবং কেসের মাধ্যমে যাতে কমপক্ষে তিনবার বাডসগুলো চার্জ করা যায় এমন মডেলের ইয়ারবাডস কেনার চেষ্টা করুন। 

ইয়ার টিপস

ইয়ারবাডস কেনার সময় সবচেয়ে উপেক্ষিত বিষয়গুলোর মধ্যে একটি হলো ইয়ার টিপস। অনেক সময়, সিলিকন জাতীয় ইয়ার টিপসগুলো কানের ক্যানাল বা ছিদ্রের সাথে খাপ খাইয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে খুব ছোট বা খুব অগভীর হয়ে থাকে ফলে আপনি গান বা মিউজিকের অভিজ্ঞতার সাথে বাহ্যিক শব্দ শুনতে পাবেন। আবার আপনি বাইরে থেকে আলাদা ইয়ার টিপসও ব্যবহার করতে পারবেন না কারণ ইয়ারবাডস টিপস সহ চার্জ করতে হয়।

সুতরাং, কেনার সময় আপনার পছন্দের ইয়ারবাডসের সাথে আপনি যে ইয়ার টিপসগুলো পাচ্ছেন তা আপনার কানে ঠিকঠাক ফিট হয় কিনা নিশ্চিত হয়ে নিন। তবে কিছু ইয়ারবাডসে ইয়ার-ফিন থাকে যা বাডসগুলোকে পুরোপুরি কানে ফিট হতে সাহায্য করে।

দরদাম 

বর্তমানে বাজারে অনেক কম মূল্যে নানান ইয়ারবাডস পাওয়া যায়, কিন্তু আমাদের মতে সেগুলো না কেনাই শ্রেয়। আপনি আপনার পছন্দের অডিও গ্যাজেটের উপর যে পরিমাণ খরচ করতে ইচ্ছুক তাই নির্ধারণ করে দেবে যে আপনি মূলত কোন ধরণের পণ্য দেখবেন।

ভালো ইয়ারবাডসগুলোর ক্ষেত্রে সাধারণত দরদাম করার সুযোগ থাকে না। যেহেতু দীর্ঘ সময় সেবা প্রদানের জন্য ভালো মানের ব্লুটুথ চিপ ও ব্যাটারির প্রয়োজন হয় তাই প্রিমিয়াম একজোড়া ইয়ারবাডসের জন্য খরচ করতে প্রস্তুত থাকুন এবং উপভোগ করুন স্পটিফাই

সামঞ্জস্যতা 

বেশিরভাগ ব্যবহারকারীর চাওয়া থাকে যে তাদের ইয়ারবাডস আইওএস, অ্যান্ড্রয়েড স্মার্টফোন এবং ট্যাবের সাথে সহজেই যুক্ত হতে পারবে। এই ডিভাইসগুলোর সাথে ব্লুটুথ ইয়ারবাডসের সংযুক্ত হওয়ার ক্ষেত্রে কোনো ধরণের সমস্যা থাকা উচিত নয়। শুধুমাত্র কয়েকটি ক্লিকের মাধ্যমেই সংযোগ করা যায় এবং কিছু কিছু ইয়ারবাডস একসাথে একাধিক ডিভাইসের সাথে সংযোগ করা যায়।

শেষ কথা 

ওয়্যারলেস ইয়ারবাডস টুইস্টিং বা জট লেগে যাওয়া তারের ঝামেলা ছাড়াই অডিও শোনা এবং উপভোগ করার জন্য দুর্দান্ত ডিভাইস। যারা স্বাচ্ছন্দে ঘুরে বেড়াতে চান তাদের জন্য বেশ এই ডিভাইসগুলো বেশ কার্যকরী।

তবে এর একমাত্র নেতিবাচক দিক হলো ব্যাটারি লাইফ ও ফিটিং সমস্যা। তাই কেনার আগে, আমাদের উল্লেখ করা চেকলিস্ট মিলিয়ে নিন এবং আমরা আশা করি এর মাধ্যমে আপনি সহজেই বুঝতে পারবেন আপনি কী চান।

হ্যাপি লিসেনিং! 

Facebook Comments
সাবস্ক্রাইব করুন

No spam guarantee.

Show More

Related Articles

Back to top button
Close
Close