চাকরিটপ ও বেস্ট

২০২০ সালের সেরা ৫টি চাহিদা সম্পন্ন চাকরি

বিগত কয়েক বছরে দেশব্যাপী আমরা ক্যারিয়ার বাছাইয়ের ক্ষেত্রগুলোর মধ্যে এক আমূল পরিবর্তন ঘটে যেতে দেখেছি।

প্রথাগত ৯টা থেকে ৫টার চাকরির কথা আজকাল তেমন সাড়া জাগায় না, বরং ইন্টারনেট ব্যবহার করে টাকা উপার্জনের দিকেই মানুষের আগ্রহ সবচেয়ে বেশি। নতুন প্রজন্মের কর্মজীবী মানুষগুলো আজকাল আর পত্রিকার পাতায় চাকরির বিজ্ঞপ্তিগুলো নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করেন না। বরং তারা তাদের বেশির ভাগ সময় অনলাইনে কিংবা নিজ নিজ সোশ্যাল নেটওয়ার্ক বড় করার পেছনে কাটান – শুধুমাত্র ক্যারিয়ারের জন্য পারফেক্ট একটি চাকরির আশায়।

আকর্ষণীয় উচ্চ বেতনের চাকরি গুলো এখন শুধুমাত্র সর্বোচ্চ স্তরের কর্মকর্তাদের জন্য বরাদ্দ থাকে না। এখন তুলনামূলক মাঝারী মানের চাকরিগুলোতেও পাওয়া যাচ্ছে আকর্ষণীয় বেতন। অনলাইন ভিত্তিক সার্ভিসগুলো, যেমন রাইড শেয়ারিং ও ক্রমবর্ধমান ই-কমার্স সাইট এবং অনলাইন শপগুলোর উঠতি জনপ্রিয়তার কারণে দেশের জনসংখ্যার একটা বড় অংশ প্রচলিত চাকরিগুলোর থেকে সরে যাচ্ছেন এবং অনলাইনে তাদের সার্ভিস দেয়া শুরু করেছেন।

চাকরির ধরণ ও পদ্ধতিতে বিশাল পরিবর্তন আসার দরুন আসছে ২০২০ সালে ঠিক কোন ধরণের কাজগুলো জনপ্রিয় হয়ে থাকবে সেটার কিছুটা আন্দাজ আমরা করতে পারছি। আজকের প্রতিবেদনে আমরা আসছে বছরে বাংলাদেশে যেসব চাকরিগুলোর সুযোগ সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি থাকবে তার কয়েকটি সম্পর্কে জানবো।

যদিও দেশের বাজারে অগণিত চাকরির আনাগোনা রয়েছে, আজ আমরা এখানে বাংলাদেশে দ্রুত বেড়ে ওঠা সেরা ৫ টি চাকরির কথা বলবো। আর এখানে উল্লেখ করা চাকরিগুলোর মধ্যে আপনার পছন্দ ও যোগ্যতার বিচারে যেকোনো  একটি ক্ষেত্রের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা অন্যটির চেয়ে কোন অংশে কম নয়। 

কল সেন্টারের চাকরি

যেকোনো  সার্ভিস ভিত্তিক কোম্পানির জন্যই কল সেন্টার এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। একটি ব্যবসায় লাভবান হওয়ার জন্য কাস্টমার অর্থাৎ গ্রাহকদের সাথে ভালো সম্পর্ক বজায় রাখার গুরুত্ব অপরিসীম। আর কোম্পানির সাথে গ্রাহকের বন্ধন মজবুত করার সবচেয়ে সেরা উপায় হচ্ছে ফোনে পরিচালিত সর্বোত্তম সার্ভিসে বিনিয়োগ করা এবং সেই ভূমিকা পালন করার জন্য মানসম্মত কর্মচারী নিয়োগ দেয়া।

কিন্তু আপনার জন্য এই চাকরিতে ঠিক কী কী সুবিধা রয়েছে? একজন কল সেন্টার এজেন্ট হিসেবে কাজ করার কিছু প্রধান সুযোগ সুবিধা নিচে উল্লেখ করা হলোোঃ

তুলনামূলক ভালো ইনকাম

অন্যান্য প্রাথমিক স্তরের চাকরির তুলনায় কল সেন্টারগুলোয় তুলনামূলক ভাবে বেশ ভালো বেতনের চাকরি করা সম্ভব। নির্দিষ্ট কিছু সময়ের ক্ষেত্রে কল সেন্টার এজেন্টরা কিছুটা বাড়তি আর্থিক সুবিধা পেয়ে থাকেন এবং ওভার টাইম করার ক্ষেত্রেও বাড়তি উপার্জন করার সুবিধা দেয়া হয়। যেমন রাতের শিফটে কিংবা ছুটির দিনগুলোতে কাজ করলে বেতন বেশি হয়। আপনি যদি একজন কল সেন্টার এজেন্ট হিসেবে কাজ করেন, তাহলে যত বার আপনি নতুন কোনো সেল করতে পারবেন, ততবার আপনার বেসিক বেতনের পাশাপাশি একটা বাড়তি কমিশন উপার্জন করার সুবিধাও পাবেন।

এছাড়াও কোনো একটি প্রতিষ্ঠান তাদের নিয়মিত কর্মচারীদের যেসব সীমাবদ্ধ সুযোগ সুবিধা দেন সেগুলো অর্জন করার একটা সুযোগ আপনিও পেতে পারেন।

পূর্ব অভিজ্ঞতার প্রয়োজন নেই

যেকোনো  চাকরিতে আবেদন করার সময় বেশির ভাগ মানুষ যেই চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হন, তা হলো পর্যাপ্ত পরিমাণ অভিজ্ঞতা। তবে আপনার জন্য সুখবর হচ্ছে যে কল সেন্টারের চাকরি একটি যথেষ্ট ঝামেলা বিহীন চাকরি। আর একজন কল সেন্টার এজেন্ট হওয়ার সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো, যে এতে কোন ধরণের পূর্ব অভিজ্ঞতা থাকার প্রয়োজন নেই। যদি আপনি বাংলা অথবা ইংরেজিতে সাবলীল ভাবে কথা বলতে জানেন এবং একটা লিখিত ফরম্যাটের তালিকা মুখস্ত করতে পারেন, তাহলে এই চাকরি আপনার জন্য একদম পারফেক্ট!

তুলনামূলক কম কাজের চাপ

অন্যান্য বিভিন্ন চাকরিতে প্রতি সপ্তাহে আপনাকে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ প্রজেক্ট নিয়ে কাজ করার চাপ সামলাতে হবে। সেই তুলনায় কল সেন্টারের চাকরি বেশ সরল ধাঁচের কাজ। দৈনিক টার্গেটের হিসেবে আপনার এই চাকরিতে কাজ বেশ গোছানো এবং প্রতিদিন বাসায় যাওয়ার পর সেই কাজ নিয়ে আপনাকে কোনো রকম চিন্তাও করতে হবে না। প্রতি সপ্তাহে আদর্শ ভাবে ৪০ ঘন্টার মত কাজ করতে পারলে বাকি পুরোটা সময় আপনি কাজের চাপ ভুলে গিয়ে আপনার পরিবার ও বন্ধুদের সাথে সময় কাটাতে পারবেন নিশ্চিন্তে। বাড়তি কোন ডেডলাইন কিংবা টার্গেট ইত্যাদি নিয়ে আপনাকে কোন টেনশনই করতে হবে না।

আরো ভালো চাকরি পাওয়ার রাস্তা খুলে যায়

যদি আপনার কোন ভালো কোম্পানিতে সম্মানিত একটি পদবীতে কাজ করার দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা বা ইচ্ছা থাকে, তাহলে আমরা পরামর্শ দেব যে আপনি তাদের প্রতিষ্ঠানে প্রথমে একজন কল সেন্টার এজেন্ট হিসেবে কাজ শুরু করেন। বেশির ভাগ কোম্পানিতেই প্রতিষ্ঠানের মধ্যে পরিচিত কাউকে চাকরি দেয়ার একটা ব্যাপক প্রচলন রয়েছে। কেননা এই ভাবে প্রতিষ্ঠানের রীতি নীতি এবং ইতিহাস ভালোভাবে জানেন এমন কাউকে চাকরিতে নিয়োগ দিলে নিয়োগ দানের পদ্ধতিতে খরচ ও ঝামেলা বেশ ভালো রকম কমে যায়।

আপনার আকাঙ্ক্ষিত একটি কোম্পানিতে একজন কল সেন্টার এজেন্ট হওয়ার মাধ্যমে আপনি শুরু থেকেই অন্যান্য সম্ভাব্য আবেদনকারীদের তুলনায় এক ধাপ এগিয়ে থাকতে পারবেন। কেননা কোম্পানিটি কীভাবে কাজ করে সেই সম্পর্কে আগাম একটা ধারণা আপনার হয়ে যায়। আর এভাবেই আপনার সত্যিকারের স্বপ্নের চাকরিটি পেয়ে যাওয়ার পথে আপনি অনেকটাই এগিয়ে যেতে পারবেন।

মার্কেটিং এবং সেলস-এর চাকরি

বিভিন্ন প্রতিদ্বন্দ্বী কোম্পানিগুলোর মধ্যে বাড়তে থাকা রেষারেষি এবং অগণিত সংখ্যায় নতুন পণ্য, সার্ভিস ইত্যাদির উৎপাদনের সাথে সাথে শক্তিশালী মার্কেটিং এবং সেলস পারসনের চাহিদাও এখন আগের চেয়ে অনেক গুণে বেড়ে গেছে। সেলস এবং লাভের উপর মার্কেটিং সরাসরি প্রভাব ফেলে, তাই যেকোনো  ব্যবসার জন্য এটা সব সময়ই একটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। আর ঠিক সেজন্যই কোম্পানিগুলো তাদের ব্যবসায় নতুন নতুন আইডিয়া নিয়ে আসার জন্য দক্ষ মার্কেটিং বিশেষজ্ঞ ও কর্মকর্তাদের খোঁজ করেন সব সময়।

ই-কমার্স অর্থাৎ অনলাইন মার্কেটপ্লেসগুলোর দ্রুত বেড়ে ওঠার সাথে তাল মিলিয়ে অনেক প্রতিষ্ঠানই অনলাইনে প্রচারমূলক ক্যাম্পেইন করার দিকে ঝুঁকছেন। আজকাল অনলাইন ব্যবসাগুলোর মধ্যে অনেকেই তাদের মার্কেটিং-এর চাহিদা পূরণ করার জন্য ইন্টারনেট পরিচালনায় দক্ষ লোক খুঁজছেন। যাতে করে তাদের পণ্য ও সার্ভিস সম্পর্কে অনলাইনে সঠিক ভাবে প্রচারণা চালানো সম্ভব হয়।

মার্কেটিং অথবা সেলস টিমের হয়ে কাজ করার নানা রকম সুবিধা নিচে উল্লেখ করা হলোঃ

বেশ ভালো মানের বেতন

আগে উল্লেখ করা পেশাটির মত এই ধরণের চাকরিতে বেশ ভালো অংকের বেতন উপার্জন করা সম্ভব। যেকোনো  ব্যবসার জন্য মার্কেটিং একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ এবং কাস্টমারের চোখে কোম্পানির ভাবমূর্তি ধরে রাখতে বা বিনষ্ট করার পেছনে এটি বিশাল ভূমিকা পালন করে। অতএব এই মার্কেটিং এর পেছনে আপনি কি পরিমাণ শ্রম ও বুদ্ধি খরচ করছেন, তা দিয়ে সমগ্র কোম্পানির পারফর্মেন্সের উপর বিরাট প্রভাব পড়তে পারে। আর সেজন্যই যেকোনো  কোম্পানিতেই মার্কেটিং টিমকে বেশ ভালো রকম বেতন দেয়া হয়, যাতে করে আপনি ব্র্যান্ডের প্রচারণার পেছনে নিশ্চিত ভাবে আপনার সবচেয়ে সেরা পারফর্মেন্স দেয়ার চেষ্টা করবেন।

স্থানান্তরযোগ্য দক্ষতা

আপনি যদি বেসিক মার্কেটিং ও সেলস এর কলা কৌশলগুলো রপ্ত করতে পারেন, তাহলে সেই দক্ষতাকে আপনি পরবর্তী যেকোনো  কোম্পানিতে কাজ করার সময় সফল ভাবে কাজে লাগাতে পারবেন। কীভাবে একটি পণ্য বিক্রি করা যায় সেই জ্ঞান আপনার মধ্যে থাকার সবচেয়ে দারুণ ব্যাপার হচ্ছে যে আপনি শুধুমাত্র একটা কোম্পানিতেই সীমাবদ্ধ হয়ে থাকবেন না – আপনার এই দক্ষতাগুলোকে বিভিন্ন ইন্ডাস্ট্রির মধ্যে যেকোনো চাকরির ক্ষেত্রে প্রয়োগ করতে পারবেন। এই দক্ষতাগুলো আপনার জন্য ভবিষ্যতে আরো অনেক রকম সম্ভাবনার দরজা খুলে দেবে। একই সাথে আপনাকে যেকোনো পদে ক্যারিয়ারের পথ অবলম্বন করার রাস্তাও তৈরি করে দেবে।

আরো ভালো চাকরির নিরাপত্তা

যেখানে ব্যবসার অনেক রকম ধাপেই সময়ের সাথে চাহিদা কমে যাওয়ার ঝুঁকি থেকে যায়, সেখানে ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানগুলোতে মার্কেটিং ও সেলস ডিপার্টমেন্টের প্রয়োজন ফুরিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। যেকোনো ব্যবসার জন্য পণ্য ও সার্ভিসই হচ্ছে তাদের মূল হাতিয়ার, আর সফল ভাবে সেগুলো সেল করতে পারার দক্ষতা সব সময় প্রথম প্রাধান্য হয়েই থাকবে। আর সেজন্যই একজন মার্কেটিং ও সেলসের কর্মী হিসেবে প্রয়োজন কিংবা প্রাধান্যের অভাবে আপনার চাকরি হারানোর ঝুঁকি প্রায় কখনও নেই বললেই চলে।

ড্রাইভিং-এর চাকরি

উবার এবং অন্যান্য রাইড শেয়ারিং অ্যাপস গুলোর আবির্ভাব হওয়ার সাথে সাথে রাইডারদের চাহিদা বিগত কয়েক বছর ধরে বেড়ে চলেছে। আর এর থেকে নিজস্ব বাহন রয়েছে এমন বিভিন্ন ব্লু কলার কর্মীদের কর্মসংস্থানের সম্ভাবনাও নতুন আলোর মুখ দেখতে পেরেছে।

বিভিন্ন রাইড শেয়ারিং অ্যাপসে আপনার সার্ভিস রেজিস্ট্রেশন করার মাধ্যমে আপনি কিছু দারুণ সুবিধা লাভ করতে পারবেন। নিচে তার কিছু অংশ তুলে ধরছিঃ

স্বাধীনতা ও নমনীয়তা

রাইড শেয়ারিং সার্ভিস গুলোর সবচেয়ে সেরা ব্যাপার হচ্ছে যে এখানে ড্রাইভাররা তাদের কাজ করার সময় ও মেয়াদ নিজেদের ইচ্ছামত ঠিক করে নিতে পারেন। অর্থাৎ কখন কাজ করবেন আর কতক্ষণ ধরে করবেন, তা সম্পূর্ণ আপনার নিজের নিয়ন্ত্রণে থাকবে। আপনার দৈনিক কাজ ও উৎপাদনশীলতা পুরোপুরি আপনার নিজের হাতে এবং প্রতিদিন কোনো নির্দিষ্ট কোটা পূরণ করার জন্য কোনো রকম চাপ আপনার উপর থাকবে না। রাইড শেয়ারিং কোম্পানিগুলো আপনার কাজের উপর কোনো কড়া নজরদারি করে না। তারা শুধুমাত্র তাদের কাস্টমারদের যে কোনো রকম অভিযোগ জমা পড়লে সেটা নিয়ে কিছুটা মাথা ঘামায়, আর আপনার বাহনটিকে জিপিএসের সাহায্যে ট্র্যাক করে সেটার অবস্থান রেকর্ড করে। অতএব একজন রাইডার হওয়ার মাধ্যমে আপনি সম্পূর্ণ আপনার নিজের নিয়মে কাজ করার পূর্ণ স্বাধীনতা পাচ্ছেন, এবং কোন ধরণের উচ্চতর কর্তৃপক্ষের কাছে জবাবদিহি করার বাধ্য বাধকতা আপনার থাকছে না।

আকর্ষণীয় উপার্জন

সম্প্রতি দ্যা ফাইন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেস -এর একটি প্রতিবেদনে প্রকাশ করা হয়েছে যে বাংলাদেশে একজন রাইডার প্রতি মাসে গড়ে প্রায় ৪০ থেকে ৬০ হাজার টাকা উপার্জন করতে পারেন। আর ফুল-টাইম কাজ করার ক্ষেত্রে তাদের দৈনিক ইনকাম গড়ে ১৭০০ টাকার মত হয়। একটি রাইড শেয়ারিং ব্যবসার সাথে সংযুক্ত হওয়ার সবচেয়ে দারুণ ব্যাপারটা হচ্ছে যে তারা আপনার মোট উপার্জন থেকে শতকরা হিসাবে মাত্র সামান্য একটা অংশ কেটে রাখেন। আর বাকি সিংহভাগ অংশ সরাসরি আপনার হাতে চলে আসে। প্রচলিত ড্রাইভিং এর চাকরির সাথে তুলনা করলে এটা টাকা কামানোর একটা দারুণ উপায়, যেখানে বাংলাদেশে সাধারণ একজন ড্রাইভারের বেতন মাসে মাত্র ২০ হাজার টাকা।

ডেলিভারির চাকরি

আপনি যদি একটি মোটরবাইক বা সাইকেলের মালিক হন, আর সেটা ব্যবহার করে কিছু সার্ভিস দেয়ার ইচ্ছা আপনার থাকে – কিন্তু ড্রাইভিং চাকরির মত সরাসরি কাস্টমারদের সাথে কাজ করার ব্যাপারে আগ্রহী না হন, তাহলে সম্ভবত একজন ডেলিভারি পারসন হওয়াই আপনার জন্য সেরা সিদ্ধান্ত হবে। এই চাকরিটি বেশ ভালো রকম সোজা সাপটা এবং এতে তুলনামূলক ভাবে কোন রকম ঝামেলা নেই বললেই চলে। এক্ষেত্রে আপনাকে শুধু ঢাকা শহরকে নিজের নাড়ি নক্ষত্রের মত চেনা থাকতে হবে!

বর্তমানে হাংরিনাকি এবং ফুডপান্ডার মত জনপ্রিয় দু’টি ফুড ডেলিভারি অ্যাপসের সাথে ডেলিভারি সার্ভিসের চাকরি পাওয়া যায়। এছাড়াও দারাজ-এর মত প্যাকেজ ডেলিভারি সার্ভিসগুলোতেও আপনি চাইলে ডেলিভারি ম্যান হিসেবে চাকরি করতে পারবেন।

ড্রাইভিং এর চাকরির মতই ডেলিভারিম্যানের চাকরিতেও আপনারা পাবেন বেশ কিছু সুযোগ সুবিধা:

কাজের সময় ও মেয়াদে বাড়তি সুযোগ সুবিধা:

ঠিক রাইড শেয়ারিং এর মতই আপনি ডেলিভারির চাকরিতে প্রত্যেক কর্মদিবসে ঠিক কতটুকু সময় কাজ করবেন সেই ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়ার যথেষ্ট স্বাধীনতা পাবেন। এক দিনে আপনি কখন, কতটুকু সময় ধরে এবং কোন কোন লোকেশনে আপনার সার্ভিস দিতে পারবেন সেটা নিতান্তই আপনার সিদ্ধান্ত হবে। যখনই আপনার হাতে অবসর সময় থাকবে এবং ডেলিভারি সার্ভিসে কাজ করার ইচ্ছা হবে, ঠিক তখনই শুধু অ্যাপ-এ লগ ইন করবেন আর কাজ শুরু করে দিবেন!

উপার্জন বেশ ভালো:

সাধারণত বাংলাদেশে এই ধরণের অ্যাপসে সাইন আপ করা একজন ডেলিভারিম্যান দিন প্রতি গড়ে ৭০০ টাকার  মত উপার্জন করতে পারেন। প্রাথমিক ভাবে এত অল্প পরিমাণ বিনিয়োগ করে এই ধরণের উপার্জন করাটা আসলে বেশ ভালো একটা অপশন। বেশির ভাগ ডেলিভারির চাকরিতে সাধারণত শুধু একটা বাইসাইকেল থাকলেই চলে, যা কিনা বড় মোটর গাড়ি বা বাইকের তুলনায় অনেক বেশি সাশ্রয়ী। একটি ব্লু কলার চাকরি হিসেবে দিন প্রতি এই ধরণের বড় অংকের উপার্জন আসলে সত্যিই অনেক দুর্লভ একটা ব্যাপার।

ফ্রিল্যান্সিং এবং পার্ট-টাইম চাকরি

ফ্রিল্যান্সিং ও পার্ট-টাইম চাকরি মূলত তরুণ প্রজন্মের মধ্যে ব্যাপক হারে প্রচলিত হয়ে গেছে। আমি নিজেও Bikroy-এ একজন পার্ট-টাইম ফ্রিল্যান্স লেখক হিসেবে কাজ করছি, আর আমি জোর দিয়ে বলতে পারি যে এই কাজে সত্যিই অনেক রকম সুবিধা রয়েছে! 

দেশে ও বিদেশে বিভিন্ন সেরা আকর্ষণীয় ও লোভনীয় কিছু ফ্রিল্যান্স চাকরির মধ্যে গ্রাফিক্স ডিজাইন এবং ডাটা অ্যানালিটিক্স অন্যতম।

গ্রাফিক্স ডিজাইন

এই ক্ষেত্রটিতে কাজের ধরণ ও পরিমাণ বেশ প্রসারিত ও বৈচিত্র্যময়। এতে মিডিয়ার একাধিক টাইপ নিয়ে কাজ করা হয়। একজন গ্রাফিক্স ডিজাইনের কাজ হচ্ছে এমন কিছু প্রভাবশালী ভিজ্যুয়াল যোগাযোগ প্রতিষ্ঠা করা, যা একটি কোম্পানিকে বাকি সব কোম্পানির থেকে আলাদা করে তোলে।

একজন ফ্রিল্যান্স গ্রাফিক্স ডিজাইনার হিসেবে আপনার কাজ হবে বিভিন্ন কোম্পানির সাথে আপনার সার্ভিস দানের চুক্তি করা এবং বিভিন্ন দৃষ্টিনন্দন ও সৃজনশীল ভিজ্যুয়াল তৈরি করা। হোক সেটা কোনো কোম্পানির লোগো, বিজ্ঞাপন, অ্যাপস, এমনকি তাদের ওয়েবসাইটও – আপনার দায়িত্ব হলো এমন কিছু তৈরি করা যা মানুষের নজর কাড়তে বাধ্য।

ডাটা অ্যানালিটিক্স 

সম্প্রতি ডাটা অ্যানালাইসিসের চাহিদায় এক ব্যাপক উত্থান লক্ষ্য করা যাচ্ছে – কিন্তু এই ভূমিকা পালন করার জন্য যথেষ্ট পরিমাণ স্পেশালিস্ট মার্কেটে নেই। আর সেজন্যই আমাদের বিশ্বাস, সামনের বছরগুলোতে একজন ডাটা সায়েন্টিস্ট হওয়া আপনার ক্যারিয়ারের জন্য অন্যতম সেরা একটি সিদ্ধান্ত হয়ে উঠতে পারে।

বিপুল পরিমাণ ডাটা নিয়ে কাজ করতে জানলে এবং পাইথন ও এসকিউএলের মত ডাটা অ্যানালিটিক্স টুলস ব্যবহার করায় দক্ষ হতে পারলে মাসে আপনার পক্ষে বেশ ভালো একটা অংকের উপার্জন করা সম্ভব। আর এ সব কিছুই আপনি করতে পারবেন আপনার নিজের ঘরে বসে, স্বাচ্ছন্দ্যে।

এই ধরণের ফ্রিল্যান্সিং করার একমাত্র সীমাবদ্ধতা হচ্ছে যে আপনাকে বিভিন্ন ইন্ডাস্ট্রির কাস্টমারদের কাছ থেকে প্রতিনিয়ত কাজ পাওয়ার জন্য ডাটা অ্যানালাইসিসের উপর বিশেষ পারদর্শী হতে হবে।

শেষকথা

দিন কে দিন অনলাইন সার্ভিসের চাহিদা ক্রমাগত বেড়ে যাওয়ার কারণে ২০২০ সাল অনলাইন ভিত্তিক কর্মসংস্থানের জন্য বেশ সম্ভাবনাময় এক বছর হয়ে উঠবে বলে মনে হচ্ছে। সেই দিন আর খুব একটা দূরে নয়, যখন ৯টা থেকে ৫টার চাকরি সবার চোখে সেকেলে হয়ে উঠবে, আর নমনীয় সুযোগ সুবিধার চাকরিই আদর্শ হিসেবে দেখা হবে।

উপরে উল্লেখ করা যেকোনো  একটি চাকরিতে আবেদন করার কথা ভাবছেন? আজই ভিজিট করুন Bikroy.com/Jobs -এ, আর খুঁজে পান ঢাকা সহ দেশের বিভিন্ন শহরে শত শত কোম্পানির পক্ষ থেকে অজস্র চাকরির বিজ্ঞাপন।

গ্রাহকদের নিয়মিত কিছু প্রশ্নের উত্তর

ভালো ভালো চাকরির বিজ্ঞাপন কোথায় খুঁজে পাব?

চাকরির সার্কুলার ছাড়াও চাকরির বিজ্ঞাপন খুঁজে পাওয়ার অসংখ্য উৎস রয়েছে। বেশির ভাগ চাকরির বিজ্ঞাপনই অনলাইনে বিভিন্ন সাইট, যেমন- বিডি জবস, লিংকড ইন, এমনকি ফেসবুকেও পোস্ট করা হয়ে থাকে। কিন্তু চাকরি খুঁজে পাওয়ার সবচেয়ে সুবিধাজনক ও কার্যকরী উপায় হচ্ছে BikroyJOBS -এর মত একটি নির্ভরযোগ্য ও সহজ ওয়েবসাইট ভিজিট করা। এখানে আপনি আপনার সুবিধা অনুযায়ী সুসজ্জিত ক্যাটাগরি থেকে বেছে নিয়ে খুঁজে পাবেন হাজার হাজার চাকরির বিজ্ঞাপন। তাই আপনার  পছন্দ ও চাহিদা অনুযায়ী সার্চ করে খুব সহজেই আবেদন করতে পারবেন দেশের সেরা চাকরিগুলোতে।

এই ধরণের চাকরি পাওয়ার জন্য কী কী দক্ষতা থাকা প্রয়োজন?

এটা নির্ভর করবে আপনি ঠিক কোন ধরণের কাজ যোগ দিতে চাচ্ছেন, আর সে সব চাকরিতে আপনাকে ঠিক কতটা জটিল কাজ করতে হবে তার উপর। তবে প্রায় যেকোনো  চাকরির ক্ষেত্রেই সাধারণ কিছু দক্ষতা থাকা প্রায় সবার জন্য আবশ্যক, সেগুলো হলো আপনার সফট স্কিলস। একদিকে আপনার শিক্ষাগত যোগ্যতা নিঃসন্দেহে নিয়োগকারীদের চোখে আপনার ভালো ইমপ্রেশন তৈরি করতে সাহায্য করবে। কিন্তু যেকোনো  জায়গায় টিকে যাওয়ার জন্য নিশ্চিত ভাবে আপনার সফট স্কিলস গুলোই সবচেয়ে বড় ভূমিকা পালন করবে।

এই চাকরি গুলো আমার জন্য উপযুক্ত কি না তা কীভাবে বুঝবো?

যেকোনো  চাকরিতে আবেদন করার সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে প্রাথমিক ভাবে কিছু বেসিক রিসার্চ করে নেয়া উত্তম। এই লিংকে ক্লিক করে আমাদের প্রতিবেদনটি এক নজর পড়ে দেখে নিন একটি চাকরিতে আবেদন করার আগে আপনার ঠিক কী কী জানা দরকার। তাহলেই আপনার জন্য একটি চাকরি ঠিক কতটা উপযুক্ত তা আপনি ভালো ভাবে বুঝতে পারবেন।

একটা ভালো সিভি কীভাবে তৈরি করতে পারি?

নিয়োগ পাওয়ার জন্য একটি ভালো সিভি তৈরির সঠিক নিয়মগুলো জানা খুবই জরুরি। অনলাইনে অসংখ্য সাইট রয়েছে যেগুলো আপনাকে একটি পারফেক্ট সিভি তৈরি করতে সাহায্য করবে, যেখানে আপনার সম্পর্কে সব রকম সঠিক ডিটেইল উল্লেখ করতে পারবেন। নিশ্চিত ভাবে নিয়োগকারীদের নজরে পড়ার জন্য সফল একটা সিভি তৈরি করার বিভিন্ন দরকারি টিপস খুঁজে পেতে আমাদের এই প্রতিবেদনটি পড়ে দেখতে পারেন।

Facebook Comments
সাবস্ক্রাইব করুন

No spam guarantee.

Show More

Related Articles

Back to top button
Close
Close