যানবাহন

বাইসাইকেল কেনার আগে যে ৪টি বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে

আপনার পুরনো বাইসাইকেলটি বদলে ফেলতে চাইছেন? কিংবা নতুন সাইকেল কেনার কথা ভাবছেন? তাহলে আপনাকে কিছুটা দ্বিধার মধ্যে পড়তে হতে পারে। তবে এর অর্থ এই নয় যে প্রথমবার সাইকেল কেনার সময় চোখের সামনে যা পড়বে তাই কিনে ফেলবেন। তাই বাইসাইকেল কেনার আগে আপনার প্রয়োজন বুঝে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

ঠিক যেই মুহূর্তে আপনি জানবেন ঠিক কেমন বাইসাইকেল আপনার প্রয়োজন, তখন উপস্থিত বিকল্পগুলো থেকে নিজের পছন্দের সাইকেলটি বেছে নেওয়া আপনার জন্য সহজ হবে। তবে আপনার কী চাই তা আপনাকেই ভেবে বের করতে হবে।   

তাই সাইকেল কেনার সময় যে বিষয়গুলো খেয়াল রাখতে হবে এবং দেশের বাজারে বর্তমানে বাইসাইকেলের দাম সম্পর্কে আপনাকে অবহিত করতেই আমাদের আজকের এই আয়োজন।  

নতুন এবং পুরাতন বাইসাইকেল কেনার মধ্যে পার্থক্য

শুধুমাত্র সাইকেলই নয়, যেকোনো ধরণের যানবাহন কেনার সময় অনেকেরই কম দামে ভালো পণ্য কেনার প্রতি আকর্ষণ থাকে। এছাড়াও আপনি স্বল্প বাজেটের মধ্যে সাইকেল কিনতে চাইলে ব্যবহৃত সাইকেলের ব্যাপারে খোঁজ খবর রাখতে পারেন। 

তবে পুরাতন সাইকেল কেনার আগে আপনার মনে কিছু প্রশ্নের উদ্রেক হতে পারে। যেমনঃ সাইকেলটি কতদিন ব্যবহার করা হয়েছে, কতবার সেটিকে মেরামত করা হয়েছে, এবং নানাবিধ অন্যান্য প্রশ্ন। তবে সাইকেলের “ড্রাইভট্রেইন”-এর ব্যাপারে বিস্তারিত জানতে পারলে, উপরোক্ত বেশিরভাগ প্রশ্নের উত্তর আপনি একেবারেই পেয়ে যাবেন। 

নতুন রাইডার হিসেবে সাইকেলের ড্রাইভচেইনের যন্ত্রাংশগুলো কীভাবে এবং কখন বদলাতে হবে তা জানা থাকলে সাইকেলের পেছনে কত টাকা ব্যয় করা উচিত বা করবেন তা আন্দাজ করতে সুবিধা হবে। তবে খরচের পরিমাণ যদি নতুন সাইকেলের কাছাকাছি হয় তবে নতুন সাইকেল কেনার কথাই ভাবা উচিত। চলুন দেখে নেয়া যাক সাইকেল কেনার আগে যে ৪টি বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে। 

১. প্রয়োজন অনুযায়ী বাইসাইকেলের সঠিক সাইজ বাছাই করুন 

ভুল সাইজের একটি সাইকেল কিনে ফেললে আপনি যতদিন পর্যন্ত সেটি চালাতে অভ্যস্ত না হচ্ছেন ততদিন পর্যন্ত তা আপনার বিরক্তির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। এমনকি আপনার পিঠ এবং কোমর ব্যথার কারণ হতে পারে একটুখানি অসচেতনতা। সঠিক আকার বা সাইজের একটি বাইসাইকেল শুধু আপনাকে দারুণ একটি রাইডিং অভিজ্ঞতাই দিবে না একইসাথে তা আপনার পায়ের জন্যেও আরামদায়ক হবে। সঠিক সাইজের সাইকেলটি বেছে নিতে যা যা লক্ষ্য করতে হবেঃ 

  • সাইকেলের ফ্রেম সাইজ 
  • প্যাডেল-এর অবস্থান 
  • স্যাডেল 
  • হ্যান্ডেল বারের উচ্চতা 

শুরুতেই যা জানা উচিত তা হলো আপনার শারীরিক আয়তন সম্পর্কে জানা। সঠিক ভাবে সাইকেল চালানোর জন্য আপনার কনুই এবং পায়ের ভাজের সামঞ্জস্য থাকাটা প্রয়োজনীয়।  

বর্তমানে বাজারে হ্যান্ডেল বার প্রয়োজন অনুযায়ী ঠিক করে নেওয়া যায় এরকম অনেক সাইকেল পাওয়া যায়, তবে আপনি যদি নির্দিষ্ট হ্যান্ডেল বারের সাইকেল কিনতে আগ্রহী হয়ে থাকেন সেক্ষেত্রে তা আপনার শারীরিক উচ্চতা অনুযায়ী কেনা উচিত। 

২. কেমন ব্রেকিং সিস্টেম চাইছেন? 

অপেক্ষাকৃত ধীর অথবা সমস্যাযুক্ত ব্রেকিং সিস্টেম থাকলে আপনার অন্যদের চেয়ে দুর্ঘটনার কবলে পড়ার সম্ভাবনা বেড়ে যাবে। এক্ষেত্রে ত্রুটিমুক্ত ব্রেকিং সিস্টেম অত্যন্ত প্রয়োজন। চলুন দেখে নেওয়া যাক দেশের বাজারে যে ধরণের ব্রেকিং সিস্টেমগুলো পাওয়া যায়ঃ 

  • ডিস্ক ব্রেকঃ প্রায় সবরকম আবহাওয়াতেই ডিস্ক ব্রেক ব্যবহারযোগ্য। আপনার পছন্দনুযায়ী ক্যাবল ডিস্ক ব্রেক অথবা হাইব্রিড ডিস্ক ব্রেক বেছে নিতে পারেন। যদিও আমাদের দেশের সাইকেল ব্যবহারকারীদের কাছে ক্যাবল ডিস্ক-এর চাহিদা বেশি। 
  • রিম ব্রেকঃ রিম ব্রেকের সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো এই ব্রেকগুলো সহজেই বদলানো যায় এবং কিছুটা কম যত্নেই দীর্ঘদিন সেবা পাওয়া যায়। রিম ব্রেক মূলত হ্যান্ড লিভার এবং ক্যাবলের সাথে মূল ব্রেকিং সিস্টেমের সাথে যুক্ত থাকে। 
  • ড্রাম ব্রেকঃ ড্রাম ব্রেকের রক্ষণাবেক্ষণ একেবারে কম করলেই হয়। হাইব্রিড এবং কমিউটার সাইকেলের জন্য ড্রাম ব্রেক বেশ মানানসই। তবে যারা মাউন্টেইন বাইক কিনতে চান তাদের জন্য ড্রাম ব্রেক সিস্টেম ব্যবহার করা ঠিক হবে না। 
  • কোস্টার ব্রেকঃ বেশিরভাগ সাধারণ মানের বাইক এবং ছোটদের সাইকেলগুলোতে সচরাচর কোস্টার ব্রেক ব্যবহার করা হয়। 

সাইকেলের ধরণ এবং কী প্রয়োজনে সাইকেল ব্যবহার করবেন সেটা অনুযায়ী ব্রেকিং সিস্টেম বেছে নেওয়াটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। 

Know your requirements before buying a cycle
প্রয়োজন বুঝে বেছে নিতে হবে নিজের পছন্দের বাইসাইকেল

৩. সঠিক গিয়ারের বাইক 

বাইসাইকেল গিয়ারের রয়েছে এক বিশাল জগত। এখানে আপনি যেমন এক গিয়ারের ব্রেকিং সিস্টেম পাবেন আবার তেমনি কিছু কিছু বাইকের রয়েছে ২০টির বেশি গিয়ার। যেমন, যারা পাহাড়ি রাস্তার জন্য বাইক কিনতে আগ্রহী তাদের ক্ষেত্রে বেশি গিয়ারের বাইক উপযোগী আবার সমতলে চালানোর জন্য কম সংখ্যক গিয়ার প্রয়োজন। চলুন দেখে নেওয়া যাক দেশের বাজারে কোন সাইকেলের জন্য কীরকম গিয়ার দরকারঃ  

  • রোড বাইকঃ রোড বাইকগুলো সচরাচর ১৮টির মত গিয়ারে আসে কিন্তু অনেক রোড বাইকেই রয়েছে ৩০টির অধিক গিয়ার। এগুলো মূলত কগ এবং চেইন রিং এর উপর নির্ভর করে আসে। তবে নতুন রাইডার হিসেবে কম সংখ্যক গিয়ারের বাইক চালানোই শ্রেয়। 
  • মাউন্টেইন বাইকঃ মাউন্টেইন বাইকগুলো হাইকিং করার জন্য ব্যবহার করা হয়। বাংলাদেশের বাজারে যে ৩টি ফ্রন্ট চেইন রিং বাইক পাওয়া যায় যাতে করে পাহাড়ি রাস্তায় সাইকেল চালাতে রাইডারের সুবিধা হয়। 
  • হাইব্রিড বাইকঃ এই জাতীয় বাইকের গিয়ার রোড বাইকের মতই অনেকটা। আপনি যদি প্রায়শই ক্যাম্পিং এবং ট্র্যাকিং করে থাকেন তাহলে এই বাইকগুলো আপনার জন্য সর্বোত্তম। পাশাপাশি হাইব্রিড বাইক ব্যবহারের ফলে আপনি আরও বেশি সংখ্যক কাপড়, প্রয়োজনীয় পানীয়, এবং খাবার বহন করতে পারবেন। 

৪. চিনে নিন সাইকেলের ধরণ  

সাইকেলের দোকানে গিয়ে আপনি অনেক ধরণের বাইক দেখতে পাবেন। তবে আপনি যদি আগে কখনোই বাইসাইকেল না কিনে থাকেন তাহলে আপনার পছন্দ এবং বাজেট অনুযায়ী পছন্দ করতে পারেন। তবে এক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে, সব ধরণের সাইকেল দিয়েই ট্র্যাকিং কিংবা কমিউটিং নাও করা যেতে পারে। বাংলাদেশে মূলত যেই ৩ ধরণের বাইসাইকেল পাওয়া যায়ঃ 

  • রোড বাইকঃ নিয়মিত ব্যবহার এবং দূরে ঘুরে আসার জন্য এই বাইকগুলো ভালো, এমনকি রাস্তার জ্যামেও চালানোর জন্য আরামদায়ক। এছাড়াও রোড বাইকে মিলবে ভালো হ্যান্ডেল বার পজিশন যা আপনাকে দেবে আরামদায়ক রাইডিং অভিজ্ঞতা। 
  • মাউন্টেইন বাইকঃ অফ-রোড রাইডিং ভালোবাসলে মাউন্টেইন বাইকের বিকল্প নেই। এছাড়াও মাউন্টেইন বাইকগুলো হাইওয়েতেও চালানো যেতে পারে। 
  • হাইব্রিড বাইকঃ কিছুটা রোড বাইক এবং কিছুটা মাউন্টেইন বাইসাইকেলের ফিচার সমৃদ্ধ হাইব্রিড বাইক কমিউটিং এবং সাইক্লিং করার জন্য বেশ ভালো। তবে হাইব্রিড সাইকেল ব্যবহারের সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো এই বাইকগুলোতে কিছুটা লম্বা গিয়ার সিস্টেম এবং ফ্রেম দেওয়ার কারণে চালিয়ে বেশ আরাম পাওয়া যায়। 

শেষ কথা

পরিশেষে সাইকেল কেনার পূর্বে টেস্ট রাইডিং এর কোনো বিকল্প নেই। টেস্ট রাইডের মাধ্যমে আপনি সাইকেলে ভ্রমণের অভিজ্ঞতা এবং সাইকেলটি টেকসই হবে কিনা তা কিছুটা হলেও বুঝতে পারবেন। 

যেহেতু সাইকেল কেনার ব্যাপারে বেশ কিছু ব্যাপার খেয়াল রাখা প্রয়োজন, তাই প্রয়োজন মত আলাদাভাবে সব কিছু নোট করে রাখলে সিদ্ধান্ত নিতে সুবিধা হবে। এছাড়াও আপনার যদি ইতোপূর্বে সাইকেল কেনার ব্যাপারে কোনো অভিজ্ঞতাই না থেকে থাকে তাহলে আমরা আশাবাদী আমাদের আজকের লেখার মাধ্যমে আপনি আপনার জন্য সঠিক সাইকেলটি বেছে নিতে পারবেন এবং সাইকেলের রক্ষণাবেক্ষণ সম্পর্কেও সুস্পষ্ট ধারণা পাবেন।  

হ্যাপি সাইক্লিং!

Facebook Comments
সাবস্ক্রাইব করুন

No spam guarantee.

Show More

Related Articles

Back to top button
Close
Close