হোম এবং লিভিং

বাসা বদলাচ্ছেন? এই ১০টি টিপস মনে রাখা জরুরি

দেখতে দেখতে এই মাসটিও প্রায় শেষ হয়ে এলো। বাসা বদলের চিন্তা-ভাবনা করছেন অনেকেই। আর বাসা বদল কিন্তু সহজ কোনো কথা নয়। বাসার সাথে জড়িয়ে থাকে হাজারো স্মৃতি এবং স্বপ্ন। কাজেই কেবল শারীরিক নয়, এটি একটি মানসিক প্রস্তুতিও বটে। এক্ষেত্রে বাসার সব সদস্যের সাহায্যে সময় এবং যত্ন নিয়ে সবকিছু করলে নতুন বাসায় ওঠা আপনার জন্য হবে স্বস্তির। আর তাই এই পরিবর্তনের জন্য কীরকম পরিকল্পনার প্রয়োজন তার কিছু টিপস নিয়ে আজ আমরা বিশদ আলোচনা করবো।

সব কাজের ছক কষে ফেলুনঃ

বাসা বদলের মতো লম্বা কাজে শেষ মুহূর্তে যেন কোনো কিছু ছুটে না যায়, সেজন্য শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত আপনার প্রয়োজনীয় এবং খুঁটিনাটি সব কাজের একটা তালিকা তৈরি করে ফেলুন। এতে বারবার মনে করার ঝামেলা থেকে আপনি বেঁচে যাবেন আর দিন ঘনিয়ে আসার সাথে সাথে সময়ের সাথে কাজের অগ্রগতি সম্পর্কেও অবহিত থাকতে পারবেন।

অপ্রয়োজনীয় জিনিস বিক্রি করে দিনঃ 

আপনি যেই নতুন বাসায় উঠবেন তা ভাড়া বাসাই হোক কিংবা নিজের, তা কিভাবে সাজাবেন তা ঠিক করে ফেলুন। কোন রুমে কোন আসবাবপত্র যাবে এবং কমন জায়গাগুলো কিভাবে গুছিয়ে নিবেন সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলুন। এতে করে নতুন বাসা অনুযায়ী  আপনার কোনো আসবাব বদলের প্রয়োজন থাকলে সেটা আগেভাগেই করে ফেলতে পারবেন। ঠিক একইভাবে অপ্রয়োজনীয় বা ব্যবহৃত জিনিসগুলো বিক্রি করে দিতে পারেন যার টাকা দিয়ে নতুন কিছু কিনতে পারেন। আবার কষ্ট করে সেটা অন্যত্র বহনও করতে হলো না। 

গুছিয়ে ফেলুন মূল্যবান জিনিস এবং প্রয়োজনীয় কাগজপত্রঃ

ঘরের বড় জিনিসগুলো নাড়াচাড়ার পূর্বেই নগদ টাকাপয়সা, অলংকার, দামি গ্যাজেট, প্রয়োজনীয় কাগজপত্র যেমন শিক্ষাগত সার্টিফিকেট, ব্যাংক-বীমার বা জমিজমার দলিল দস্তাবেজ, মেডিকেল প্রেসক্রিপশন ইত্যাদি সাবধানতার সাথে আলাদা স্থানে সরিয়ে ফেলুন। কাঁচের এবং অন্যান্য ভঙ্গুর তৈজসপত্র এগুলোও বাবল র‍্যাপ দিয়ে পেঁচিয়ে আলাদা একটা বাক্সে ভরে আগেই সরিয়ে নিন।

প্যাকিং এর বন্দোবস্ত করে ফেলুনঃ

প্যাকিং এর জন্য বড় কার্টন, নাইলনের মজবুত দড়ি, প্ল্যাস্টিকের ব্যাগ, বাবল র‍্যাপার, স্কচটেপ বেশি করে মজুদ করে রাখুন। এরপর প্রতিদিনের ব্যবহার্য জিনিসগুলো ছাড়া বাকি জিনিসপত্রগুলো বাক্সবন্দি করে ফেলুন। প্যাকিং করার সময় একই রুমের এবং একই রকম জিনিসগুলো একটি বাক্সে রাখুন এবং বাক্সের গায়ে নাম ল্যাবেলিং করে ফেলুন যেমনঃ বই, খেলনা, রান্নার সরঞ্জাম, লিভিং রুম ইত্যাদি। ধারালো জিনিস যেমন ছুরি, কাচি, বটি এগুলো কোনো বড় কন্টেইনারে ভরে ফেলুন। তরল প্রসাধনী বা পণ্য কোনো জারে ভরে মুখগুলো স্কচটেপ দিয়ে আটকে নিন। জামা-কাপড় বিছানার চাদরে মুড়িয়ে নিলে ধুলাবালি এবং কুঁচকে যাবার হাত থেকে রক্ষা পাবে। সবার শেষে বাসা বদলানোর আগের দিন নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস যেমন টুথপেস্ট, টুথব্রাশ, সাবান, চিরুনি, মোবাইল চার্জার এগুলো বাক্সে নিয়ে নিন।   

জরুরি সংযোগ নতুন ঠিকানায় বদলে নিনঃ 

বাসা বদলানোর অন্তত ৩০ দিন আগে আপনার ইন্টারনেট, ক্যাবেল ও সংবাদপত্রের হকারদের এ সম্পর্কে অবহিত করুন। যদি একই সার্ভিস এলাকার মধ্যে পড়েন তবে তাদেরকে নতুন ঠিকানা জানিয়ে দিন নতুবা নতুন এলাকায় সার্ভিস সরবরাহকারীদের সম্পর্কে জেনে নিন। এটা করলে আর নতুন বাসায় গিয়ে ইন্টারনেট বা ডিশের সংযোগ নিয়ে বিপদে পড়তে হবে না। মাসিক বেতনের ভিত্তিতে গৃহপরিচারিকা থেকে থাকলে তাদেরকেও কমপক্ষে ১ মাস পূর্বে জানিয়ে দিন।

বৈদ্যুতিক সংযোগের দিকে বিশেষ নজর দিনঃ 

বৈদ্যুতিক সংযোগ যেমন ফ্যান, লাইট, এয়ার কন্ডিশনার, টিভি, ফ্রিজ, মাইক্রো-ওয়েভ, ওভেন ওয়াশিং মেশিন, এবং গ্যাসের চুলা ইত্যাদির দিকে বিশেষ মনোযোগ দিতে হবে। কেননা এই জিনিসগুলো বেশি আগে থেকে স্থানান্তর করা সম্ভব নয়। ২-৩ দিন আগে থেকেই ফ্রিজ খালি করা শুরু করতে পারেন। ঘরে পচনশীল কোনো বাজার করা থাকলে সেগুলো রান্না করে ফেলাই ভালো। বাসা বদলানোর দিন যেহেতু আর রান্না করার সময় থাকবে না, সুতরাং কাটা-বাছা এবং রান্না করে আগে থেকেই ফ্রিজে রেখে দিতে পারেন। যদি ফ্রিজ খালি করে শেষের কয়েকদিন প্রসেসড বা ক্যানড ফুড খেতে পারেন তাহলে সবচেয়ে ভালো হয়।  

নতুন এবং পুরাতন ঘরের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতাঃ 

আপনি নিশ্চয়ই এলোমেলো এবং অপরিষ্কার একটা বাসায় উঠতে চাইবেন না, বিশেষ করে কোভিড-১৯ এর এই সংকটময় মুহূর্তে। সেজন্য বাড়িওয়ালা বা কেয়ারটেকারকে বলে আপনার নতুন বাসাটি আগে থেকেই পরিষ্কার করিয়ে নিন বিশেষ করে বাথরুম এবং রান্নাঘর যাতে কোনো ভাবেই অপরিষ্কার না থাকে তা নিশ্চিত করতে হবে। আর আগে থেকে বাসা রং করিয়ে নিলে শ্বাস-প্রশ্বাসজনিত কোনো সমস্যাও হবে না। নতুন বাসায় ওঠার পর সব ভালোভাবে সেট হয়ে গেলে ধুলাবালি ঝেড়ে তরল জীবাণুনাশক দিয়ে মুছে ফেলুন। একই ভাবে আপনার ছেড়ে আসা বাসাটিও যাতে ব্যবহার উপযোগী থাকে তা নিশ্চিত করুন। কোনো কিছু নষ্ট হয়ে থাকলে তা মেরামত করিয়ে নিন এবং পুরো ঘরটি পরিষ্কার করে নিন।

পিক-আপ ভ্যান বা ট্রাক ভাড়াঃ

আপনার বাসার মালামাল স্থানান্তর করার জন্য পিক আপ ভ্যান বা ট্রাক তো আবশ্যক। আপনার বর্তমান বাসা থেকে নতুন বাসার দূরত্ব, আসবাবপত্রের সংখ্যা এবং ধরণ ইত্যাদি বিবেচনা করে খুঁজে নিতে পারেন আপনার দরকারি রেন্টাল সার্ভিসটি। তবে তাঁদের নতুন বাসার ঠিকানা দিয়ে আগে থেকেই দরদাম করে নিন এবং বাসা বদলের আগের দিন পুনরায় একবার যোগাযোগ করে নিন। আর হাসিমুখে তাঁদের সাথে কথা বলুন বা বুঝিয়ে দিন, এতে উভয় পক্ষেরই সুবিধা।

সময়ের কাজ সময়ে করুনঃ 

কথায় বলে, “সময়ের এক ফোঁড়, অসময়ের দশ ফোঁড়”। বাসা বদলের মতো সময় সাপেক্ষ কাজ রাতারাতি যেমন করে ফেলা সম্ভব নয়। তাই সব কিছু আগের দিনের আশায় রেখে দিলে ভুলত্রুটি হবার সম্ভাবনা অনেক বেশি। আবার আপনিও কাজের চাপে অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় মিস করে ফেলতে পারেন। আপনার প্রতিবেশিদের সাথে বিদায় নেওয়া যার মধ্যে অন্যতম। এটা শুধু সামাজিক না নৈতিক দায়িত্বও বটে। আর যত বকেয়া বিল আছে তা পরিশোধ করে দিন। আপনার বাসার যত কাজ আছে সব একার করতে হবে তা নয়, সবাই মিলে কাজ ভাগাভাগি করে তালিকা অনুযায়ী যার যার জিনিস গোছাতে থাকলে সময়মতো সবই হয়ে যাবে। আর নতুন বাসায় ওঠার দিনটি ধার্য করতে পারেন কোনো ছুটির দিনকে। এতে রাস্তার জ্যামে সময় নষ্ট হবে না। আর সম্ভব হলে ১-২ দিন আগেই উঠে পরুন নতুন বাসায়, এতে আপনার বর্তমান বাসার মালিকেরও সুবিধা হয়। আর আপনিও বাসা গোছানোর জন্য হাতে সময় পেয়ে গেলেন। 

ইতিবাচক মনোভাব রাখুনঃ

একটা নতুন এলাকা, নতুন পরিবেশে যাচ্ছেন। বদলে যাচ্ছে অনেক কিছু। তাই নতুন জায়গায় নিজেকে মানিয়ে নিতে ইতিবাচক মনোভাব পোষণ করুন। হয়ত সেই নতুন জায়গাটিও এক সময় আপনার প্রিয় হয়ে উঠবে। ঘরে শিশু-কিশোর থাকলে এই পরিবর্তন তাদের বেড়ে ওঠার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। সুতরাং তাদেরও ধৈর্য সহকারে বুঝিয়ে বলুন যে কেন এই পরিবর্তনটা জরুরি আর তাদের বন্ধু বা খেলার সাথীদের সাথে যোগাযোগের ঠিকানা নিয়ে রাখুন। মনকে ভালো রাখতে হাসিখুশি থাকা খুবই জরুরি।

শেষকথাঃ

বাসা বদল একটি জটিল প্রক্রিয়া। কিন্তু পরিবারের সকলের সহায়তা এবং সঙ্গ সেই প্রক্রিয়াকে করে তুলতে পারে সহজ। আশা করছি এই টিপসগুলো আপনার বাসা বদলানোর কাজে সাহায্য করবে।

সকল ঝামেলা শেষে নতুন বাসায় ওঠা সুখকর হোক আপনার জন্য!

Facebook Comments
সাবস্ক্রাইব করুন

No spam guarantee.

Show More

Related Articles

Back to top button
Close
Close