চাকরিটপ ও বেস্ট

২০২৩ সালে যে সকল চাকরির চাহিদা থাকবে তুঙ্গেঃ বাংলাদেশে বেশি বেতনের ৬টি চাকরি

ভবিষ্যত চাকরির ক্ষেত্রে প্রযুক্তিগত উন্নতিগুলো শীঘ্রই আমাদের দেশের চাকরির বাজারেও উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন নিয়ে আসবে। প্রযুক্তি এবং দ্রুতগতির ইন্টারনেটের ব্যবহার বাংলাদেশে চাকরির বাজারে অনেক কাজের সুযোগ তৈরি করে চলেছে প্রতিনিয়ত।

বেশিরভাগ মানুষই বর্তমান সময়ের পরিস্থিতিতে জনপ্রিয় চাকরি সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করে থাকেন। তথাপি, যখন তারা তাদের স্নাতক বা চাকরির প্রস্তুতি সম্পন্ন করে, তখন তারা চাকরির বাজারে চাহিদার একটি তীব্র পরিবর্তনের সম্মুখীন হয়ে থাকেন।

বিক্রয় ডট কম-এর পক্ষ থেকে আমরা ২০২৩ সালে যেসকল চাকরির চাহিদা বেশি থাকবে এমন ৬টি বেশি বেতনের চাকরির তালিকা তৈরি করেছি। চলুন দেখে আসা যাক বর্তমানে দেশের বাজারে জনপ্রিয় ও বেশি বেতনের চাকরিগুলো।

২০২৩ সালে বাংলাদেশে বেশি বেতনের চাকরি

আপনি কি ফ্রেশ গ্র্যাজুয়েট? অথবা ক্যারিয়ার পরিবর্তন করতে চাইছেন? পরবর্তী ধাপে আমরা ২০২৩ সালে বাংলাদেশে ৬টি বেশি বেতনের চাকরির ব্যাপারে বিস্তারিত তুলে ধরেছি।

১. ডিজিটাল মার্কেটিং

ডিজিটাল মার্কেটিং বর্তমানে যেকোনো ব্যবসার জন্য অন্যতম স্তম্ভ এ ব্যাপারে কোনো সন্দেহের অবকাশ নেই। কারণ প্রায় সকল ব্যবসাই ধীরে ধীরে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম কেন্দ্রিক হয়ে যাচ্ছে, যা ক্রমশ বাজারে ডিজিটাল মার্কেটারদের জন্য চাহিদা তৈরি করছে।

আমাদের দেশে আজকাল ছোট ও মাঝারি আকারের ব্যবসাগুলোর দারুণ উন্নতি পরিলক্ষিত হচ্ছে, এবং অনলাইন কেন্দ্রিক এসকল ব্যবসা উদ্যোক্তাদের পক্ষে আরও বেশি সহায়ক হিসেবে জায়গা নিচ্ছে।

অফলাইন মার্কেটিং কৌশলের তুলনায় ডিজিটাল মার্কেটিং স্ট্র্যাটেজিগুলো পরিমাপযোগ্য। একজন ডিজিটাল মার্কেটার হিসেবে পেশায় ভালো করতে হলে আপনাকে সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং, ওয়েব অ্যানালিটিক্স, এসইও, ই-মেইল মার্কেটিং এবং অন্যান্য প্রাসঙ্গিক কাজ সম্পর্কে জানাশোনা থাকতে হবে।

সাম্প্রতিক দিনগুলোতে বাংলাদেশে ডিজিটাল মার্কেটিং চাকরির চাহিদা ব্যাপক বৃদ্ধি পেয়েছে, তাই এটা অনুমান করা সহজ যে ডিজিটাল মার্কেটিং জবের চাহিদা ২০২৩ সাল জুড়েই অনেক বেশি থাকবে।

বাংলাদেশে ডিজিটাল মার্কেটিং চাকরির বেতনঃ দক্ষতা এবং অভিজ্ঞতা অনুযায়ী বাংলাদেশে একজন ডিজিটাল মার্কেটার ১৫,০০০ – ১,০০,০০০ টাকা পর্যন্ত উপার্জন করতে পারেন।

২. সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটার

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি প্রতিষ্ঠানের উপস্থিতি নিশ্চিত করার জন্য ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, ইউটিউব, টুইটার, ইত্যাদির মতো বেশ কয়েকটি ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটাররা কাজ করে থাকেন। সাম্প্রতিক সময়ে ইন্টারনেটের এবং সোশ্যাল মিডিয়ার ব্যবহার আমাদের দেশে দ্রুত বৃদ্ধি পেয়েছে। আর সেজন্যেই ব্র্যান্ড সচেতনতা এবং সেলস বাড়ানোর জন্য প্রায় প্রতিটি প্রতিষ্ঠানেরই রয়েছে নিজস্ব সোশ্যাল মিডিয়া হ্যান্ডেল।

সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং হলো অনলাইন মার্কেটিং-এর একটি অংশ, এবং বর্তমানে এই পেশাটি আপনাকে ভালো উপার্জন করতে সহায়তা করতে পারে। বাংলাদেশে এই মুহূর্তে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে তারুণ্যমুখী এই পেশাটি।

বাংলাদেশে সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটার চাকরির বেতনঃ দক্ষতা এবং অভিজ্ঞতা অনুযায়ী বাংলাদেশে একজন সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটার ১০,০০০ – ৫০,০০০ টাকা পর্যন্ত উপার্জন করতে পারেন।

৩. ফুল-স্ট্যাক ডেভেলপার

একজন ফুল-স্ট্যাক ডেভেলপার হলেন মূলত একজন সফটওয়্যার প্রকৌশলী যার ফ্রন্ট-এন্ড এবং ব্যাক-এন্ড ডেভেলপিং-এর দক্ষতা রয়েছে। ফুল-স্ট্যাক ডেভেলপারদের অবশ্যই জাভাস্ক্রিপ্ট, এইচটিএমএল, পিএইচপি, পাইথনের মতো ব্যাক-এন্ড প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ, ইউজার ইন্টারফেস ডিজাইন (ইউআই), ইউজার এক্সপেরিয়েন্স ডিজাইন (ইউএক্স), ওয়েব ডিজাইনিং, সার্ভার এবং ডাটাবেস সম্পর্কিত জ্ঞান থাকতে হবে।

ফুল-স্ট্যাক ডেভেলপাররা সকল ধরণের সিস্টেম, সার্ভার, সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং সংক্রান্ত কাজ এবং এমনকি ডাটাবেস নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। আমাদের দেশে বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানই ‘সকল কাজের কাজী’ এমন কর্মীদের সন্ধান করে থাকেন যারা একটি নির্দিষ্ট চাকরি সম্পর্কিত প্রায় সকল ধরণের কাজ দেখাশোনা করতে পারে এবং বেশি দায়িত্ব নিতে পারে।

দেশের বিভিন্ন জেলায় আইটি পার্ক তৈরি এবং আইসিটি মন্ত্রণালয়ের স্টার্ট-আপে অর্থায়ন বাংলাদেশে সফটওয়্যার ডেভেলপারদের চাকরির সুযোগ দ্রুত বৃদ্ধি করছে। সুতরাং, আপনি যদি বাংলাদেশে বেশি বেতনের চাকরি খুঁজে থাকেন, ফুল-স্ট্যাক ডেভেলপার জব আপনার জন্য একটি ভালো সুযোগ হতে পারে।

বাংলাদেশে ফুল-স্ট্যাক ডেভেলপার চাকরির বেতনঃ দক্ষতা এবং অভিজ্ঞতা অনুযায়ী বাংলাদেশে একজন ফুল-স্ট্যাক ডেভেলপার ২০,০০০ – ১,০০,০০০ টাকা পর্যন্ত উপার্জন করতে পারেন।

৪. ইন্টেরিয়র ডিজাইনার

একটা সময়ে ইন্টেরিয়র ডিজাইনিংকে শুধুমাত্র ধনীদের জন্য একটি সার্ভিস হিসেবে বিবেচনা করা হতো, কিন্তু আপনি যদি গভীরভাবে লক্ষ্য করে থাকেন, আজকের দিনে প্রায় প্রতিটি বাসা-বাড়ির ক্ষেত্রেই এই পেশা সংক্রান্ত কাজ বা সম্ভাবনা খুঁজে পাবেন। দ্রুত নগরায়ন এবং দ্রুতগতির কর্মজীবন নাগরিকদের নিজেদের বসবাসের জায়গা ডিজাইন করতে বা সমস্ত আসবাবপত্র কেনার ক্ষেত্রে সময় স্বল্পতা নিয়ে এসেছে।

দেশের মেট্রোপলিটন শহরগুলোতে মানুষজন বাস করার জন্য এমন ধরণের অ্যাপার্টমেন্ট বেছে নেয় যেটি খুব সহজেই রক্ষণাবেক্ষণ করা যায় এবং যাতে ফ্ল্যাটের বেশিরভাগ স্পেসকে কাজে লাগানো যেতে পারে। আর এখানেই ইন্টেরিয়র ডিজাইনাররা কাজ করার ক্ষেত্রে ঐতিহ্যগত স্থাপত্য কৌশল ব্যবহার করে থাকেন।

বেশিরভাগ মানুষ বর্তমানে শহরমুখী এবং উন্নত জীবনযাত্রার মান খুঁজে থাকেন, আর এটিই ইন্টেরিয়র ডিজাইনারদের জন্য চাকরির সুযোগ বাড়ানোর পাশাপাশি, এই পেশাটিকে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ বেতনের চাকরিগুলোর মধ্যে একটি করে তুলেছে।

বাংলাদেশে ইন্টেরিয়র ডিজাইনার চাকরির বেতনঃ দক্ষতা এবং অভিজ্ঞতা অনুযায়ী বাংলাদেশে একজন ইন্টেরিয়র ডিজাইনার  ২০,০০০ – ২,০০,০০০ টাকা পর্যন্ত উপার্জন করতে পারেন।

৫. ইভেন্ট প্ল্যানার

দৈনন্দিন জীবন গতিশীল এবং ব্যস্ত হওয়ার দরুন, মানুষজন তাদের সোশ্যাল ইমেজ বজায় রাখতে তাদের উদযাপন বা ইভেন্টগুলো বেশ আড়ম্বরপূর্ণ করে করতে চায়, কিন্তু অনেক সময়েই এই নিয়ে প্ল্যান করার জন্য পর্যাপ্ত সময় তাদের থাকেনা। আর এই সময়েই তারা ইভেন্ট প্ল্যানারদের সন্ধান করে থাকেন; জন্মদিনের পার্টি থেকে শুরু করে একটি কর্পোরেট ইভেন্ট পর্যন্ত – ইভেন্ট প্ল্যানাররা সবকিছুর দেখভাল করে থাকেন।

ইভেন্ট প্ল্যানিং একটি চমৎকার পেশা যার প্রসার সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দ্রুত বৃদ্ধি পেয়েছে। একজন ইভেন্ট প্ল্যানার হওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষতার মধ্যে রয়েছে ব্যবস্থাপনা, যোগাযোগ, নেগোসিয়েশন সৃজনশীলতা, ইত্যাদি। ইভেন্ট পরিকল্পনাকারীরা জানেন কিভাবে সেরা মূল্যে সবথেকে ভালো উপায়ে প্রয়োজনীয় কাজগুলো সম্পন্ন করতে হয়।

তারা পরিকল্পনা এবং শুরু থেকে শেষ অতিথি থাকা পর্যন্ত সমস্ত কিছুর যত্ন নিয়ে থাকেন, এসব কাজই ইভেন্ট প্ল্যানিংকে বাংলাদেশের আগামী দিনের চাহিদাপূর্ণ চাকরিগুলোর মধ্যে একটি করে তোলে।

বাংলাদেশে ইভেন্ট প্ল্যানার চাকরির বেতনঃ দক্ষতা এবং অভিজ্ঞতা অনুযায়ী বাংলাদেশে একজন ইভেন্ট প্ল্যানার  ২০,০০০ – ৫০,০০০ টাকা পর্যন্ত উপার্জন করতে পারেন।

৬. রেডিমেড গার্মেন্টস সেক্টরের চাকরি

বেশ অনেক বছর ধরেই বিশ্বব্যাপী আরএমজি সেক্টরে বাংলাদেশ একটি উজ্জ্বল নাম। কমদামি অথচ উচ্চ মানের পণ্যের কারণে বেশিরভাগ বিশ্বমানের ব্র্যান্ড আমাদের দেশ থেকে আরএমজি পণ্য কেনে।

টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে স্নাতক, আরএমজি সেক্টরে চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে সহায়ক হতে পারে। এই সেক্টরে জনপ্রিয় কিছু ক্যারিয়ারের মধ্যে রয়েছেঃ পিএম (প্রোডাকশন ম্যানেজার), জিএম (জেনারেল ম্যানেজার), টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার, ফ্যাশন ডিজাইনার ইত্যাদি। ফ্যাশন বা মার্চেন্ডাইজিং ব্যাকগ্রাউন্ড থাকলে আরএমজি সেক্টরে আকর্ষণীয় বেতনের চাকরি পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

বাংলাদেশে রেডিমেড গার্মেন্টস সেক্টরের চাকরির বেতনঃ দক্ষতা, অভিজ্ঞতা এবং পদ অনুযায়ী বাংলাদেশে রেডিমেড গার্মেন্টস সেক্টরের চাকরিজীবী কেউ ৫,০০০ – ১,০০,০০০ টাকা পর্যন্ত উপার্জন করতে পারেন।

উপসংহার

দেশীয় প্রেক্ষাপটে বেশি বেতনের চাকরি পাওয়ার জন্য আপনাকে সবসময় আপনার দক্ষতা বাড়ানোর দিকে নজর রাখতে হবে। পাশাপাশি প্রয়োজনীয় সফট স্কিল যেমন যোগাযোগ দক্ষতা, সিভি লেখা, কভার লেটার লেখা, নেগোসিয়েশন দক্ষতা, ইত্যাদি আপনাকে আপনার গন্তব্যে পৌঁছাতে সাহায্য করতে পারে।

সময় নিন; আপনার বিশেষত্ব কিসে তা বোঝার চেষ্টা করুন। এটি কি রোবোটিক্স, ব্যাংকিং, নাকি আপনি প্রোগ্রামিং করতে ভালবাসেন? যাই হোক না কেন, বাংলাদেশের চাকরির বাজারে আসার পূর্বে প্রয়োজনীয় দক্ষতা অর্জন করার জন্য আমরা পরামর্শ দেব।

আপনার সাফল্য কামনা করছি!

চাকরি in Dhakaচাকরি in Chattogram
চাকরি in Dhaka Divisionচাকরি in Khulna Division
চাকরি in Sylhetচাকরি in Chattogram Division
Facebook Comments
সাবস্ক্রাইব করুন

No spam guarantee.

Show More

Related Articles

Back to top button
Close
Close