ফ্যাশন, স্বাস্থ্য এবং সৌন্দর্য্য

কোভিড ১৯ এবং বাংলাদেশঃ অনলাইন বিজনেসের মাধ্যমে হবে বাড়তি আয়

গত বছরের শুরু থেকেই পৃথিবীব্যাপী ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাস মহামারি অন্যান্য দেশের মতই আমাদের দেশেরও ছোট এবং মাঝারি সাইজের ব্যবসাগুলোকে প্রভাবিত করেছে মারাত্মকভাবে। যেসমস্ত ব্যবসাগুলো কখনো অনলাইনকেন্দ্রিক হওয়ার কথা ভাবেনি, বর্তমান পরিস্থিতি তাদেরকে ব্যবসার উদ্যোগ এবং পরিকল্পনা বদলে ফেলার জন্য প্রায় বাধ্য করছে বলা যেতে পারে। 

আপনার প্রতিষ্ঠানের অনলাইন উপস্থিতি থেকে শুরু করে ক্লায়েন্টের সাথে ভার্চুয়াল মিটিং করা এমনকি অনেকেই হোম ডেলিভারির মাধ্যমে পণ্য পৌঁছে দিয়ে হলেও নিজেদের ব্যবসাকে লাভজনক রাখা নিশ্চিত করতে চাইছেন। 

বাজারের এই স্থবির সময়ে ছোট এবং মাঝারি সাইজের প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য অনলাইন বিজনেস কীভাবে উত্তরণের সময়োপযোগী একটি মাধ্যম হতে পারে তার কথা চিন্তা করেই আমরা আজকে আলোচনা করেছি দুর্দান্ত কিছু আইডিয়া নিয়ে। যাতে করে করোনাভাইরাসকালীন এই সময়ে বন্ধের মুখে পড়ে যাওয়া ব্যবসাগুলো অনলাইন বিজনেসের মাধ্যমে আবার ঘুরে দাঁড়াতে পারে। 

১. অনলাইন বিজনেসের সাথে পরিচিত হওয়াকে সুযোগ হিসেবে নিন

প্রতিটি সফল ব্যবসার মূলেই রয়েছে গ্রাহক সন্তুষ্টি। তবে আপনার পুরো ব্যবসাকে অনলাইনে নিয়ে আসার জন্য জেনে রাখা প্রয়োজন বেশ কিছু নতুন উদ্যোগ যা আপনাকে অনলাইন বিজনেস-এর ব্যাপারে পরিষ্কার ধারণা দেবে। আপনার ব্যবসার সর্বপ্রথম গ্রাহক যেমন শুরুতেই আপনার কাছে শতভাগ নির্ভুল সার্ভিস আশা করেননি, ঠিক একইভাবে অনলাইনে ব্যবসা গুছিয়ে উঠতে কিছু সময় প্রয়োজন। 

ইন্টারনেটে আপনি অনলাইন ব্যবসা শুরু করার ক্ষেত্রে অনেক তথ্য উপাত্ত পেয়ে যাবেন। প্রায় প্রতিটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং মার্কেটপ্লেসকে ব্যবহার করে কীভাবে নিজের ব্যবসাকে দাঁড় করানো যায় এ ব্যাপারে অনেক আর্টিকেল এবং ভার্চুয়াল ট্রেনিং-এর সন্ধানও পাওয়া যাবে ইন্টারনেটেই। 

এছাড়াও অন্যদের থেকে কিছুটা এগিয়ে থাকতে চাইলে আপনি কোনো কোর্সেও অংশগ্রহণ করতে পারেন। লোকাল মার্কেট সম্পর্কে বিস্তারিত জানার জন্যে এটা খুবই কার্যকরী হতে পারে। 

২. ধীরে ধীরে জানুন অনলাইন বিজনেস-এর আদ্যোপান্ত  

আস্তে আস্তে আপনার ব্যবসার বিক্রি বা সেল বাড়ানোর জন্য আপনাকে গ্রাহকদের চাহিদা এবং কেনাকাটার হার সম্পর্কে জানতে হবে। তবে শুরুতেই আপনার আগের সমস্ত গ্রাহক অনলাইনে এসে কেনাকাটা করবে এমন ধারণা নিয়ে বসে থাকলে চলবে না। বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় মার্কেটপ্লেস- Bikroy.com প্রায়ই ছোট এবং মাঝারি সাইজের ব্যবসাগুলো কীভাবে অনলাইন বিজনেসের মাধ্যমে সফল হতে পারে এই সংক্রান্ত বিভিন্ন ওয়েবিনার আয়োজন করে থাকে, আপনি চাইলেই সেখান থেকে নতুন নতুন আইডিয়া নিতে পারেন। 

পরবর্তীতে আপনি যখন অনলাইন বিজনেস ধীরে ধীরে শিখতে থাকবেন সেই পর্যায়ে গ্রাহকদের সাথে আপনার অনলাইন ব্যবসার একটি সু-সম্পর্ক নিজ থেকেই তৈরি হবে। তবে ব্যবসার ধরণ অনুযায়ী আপনার গ্রাহকদের অনলাইনে কেনাকাটার সাথে মানিয়ে নিতে কিছুটা সময় প্রয়োজন হতে পারে। কাপড়ের ব্যবসা থেকে অটো মোবাইল পার্টস যেকোনো অনলাইন ব্যবসাই করোনাকালীন এই সময়ে সফলতার মুখ দেখতে পারে, প্রয়োজন শুধুই ধারাবাহিকতা এবং সময়োপযোগীতা।   

৩. খুঁজে নিতে হবে সম্ভাবনাময় প্ল্যাটফর্ম 

ফেসবুক এবং পিন্টারেস্ট-এর মত শক্তিশালী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোর রয়েছে কোটি কোটি ব্যবহাকারী। এসব মাধ্যমে সচরাচর ব্যবসার জন্য আপনি বিনামূল্যে পেজ খুলতে পারবেন এছাড়াও রয়েছে স্বল্পমূল্যে বিজ্ঞাপন দেওয়ার সুবিধা। পাশাপাশি ইন্সটাগ্রাম ব্যবহার করার মাধ্যমে আপনি সহজেই আপনার পণ্যের ছবি এবং অন্যান্য মার্কেটিং এর কাজ করতে পারেন বিনামূল্যে। 

অন্যদিকে ওয়ার্ক ফ্রম হোম বা বাসায় বসে কাজ করার প্রচলন আসার পর জুম, গুগল মিট, এবং স্কাইপের মত ভিডিও কনফারেন্সিং প্ল্যাটফর্মগুলোর চাহিদা এখন আকাশচুম্বী। যেকোনো জায়গা থেকেই ইন্টারনেটের মাধ্যমে কাজ করার সুবিধা থাকার জন্য আপনি একইসাথে অনেকগুলো মার্কেটের ব্যাপারে ভাবতে পারেন যেখান থেকে পণ্য কেনাবেচা করতে আপনার সুবিধা হবে। ইতোমধ্যেই অনেক ছোটখাট প্রতিষ্ঠান ই-কমার্স ব্যবসা করার মাধ্যমে লাভজনক পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। 

৪. গড়ে তুলুন শক্তিশালী নেটওয়ার্ক 

ঠিক যেই মুহূর্তে আপনি আপনার অনলাইন ব্যবসাকে একটি পূর্ণাঙ্গ রূপ দেওয়ার চেষ্টা করছেন, ঠিক একই সময়ে যেসব মানুষেরা ইতোমধ্যেই অনলাইনের মাধ্যমে ব্যবসা করে সফল হয়েছেন তাদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ করে যেতে হবে। এছাড়াও আপনার পরিচিত অনেকেই থাকতে পারেন যারা এভাবে ব্যবসা করে সফল হয়েছেন, যদি নাও থাকে সমস্যা নেই- ছোট বা মাঝারি সাইজের ব্যবসাগুলোর প্রতি নজর দিলেই এরকম অনেককে পেয়ে যাবেন। 

পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে রয়েছে উদ্যোক্তাদের গ্রুপ এবং ফোরাম, যেখানে আলোচনার পাশাপাশি অনেকের সাথেই আপনি ব্যক্তিগত পর্যায়ে পরিচিত হতে পারবেন। শুধু তাই নয়, নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে একে অন্যের ব্র্যান্ডিং করার সুযোগ তো থাকছেই।  

৫. নতুন পেমেন্ট মেথডগুলো সম্পর্কে অবগত হন

অনলাইনে ব্যবসা করার অন্যতম প্রধান একটি অনুষঙ্গ হলো বিভিন্ন পেমেন্ট মেথডের সাথে পরিচিত হওয়া। এছাড়াও আপনাকে মোবাইল ব্যাংকিং পেমেন্ট এবং কার্ড পেমেন্ট পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হবে কারণ এর সাথে গ্রাহকের গোপনীয়তাও জড়িয়ে থাকে। 

বিশেষত আপনি যখন ই-কমার্স ব্যবসা করছেন সেই সময়ে আপনি আপনার ওয়েবসাইটে বিভিন্ন পেমেন্ট গেটওয়ে সিস্টেম ইন্সটল করার জন্য পেশাদার কাউকে খুঁজে নিতে হবে। পাশাপাশি মোবাইল ব্যাংকিং বা পেমেন্ট সম্পর্কে অবগত না থাকলে লোকাল এজেন্টদের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন।

৬. গুরুত্ব দিন গ্রাহকদের মতামতকে 

লকডাউনের সময় যখন অনেকেই অনলাইন কেনাকাটার দিকে ঝুঁকছেন, ঠিক এই সময়টিই গ্রাহকদের কাছ থেকে আপনার পণ্যের/সেবার ব্যাপারে মতামত নেওয়ার মাধ্যমে পণ্য/সেবার মান বাড়ানোর উৎকৃষ্ট সময় হতে পারে। 

লোকাল বিজনেস লিস্টিং এর কথা একেবারে শুরু থেকেই মাথায় রাখা প্রয়োজন। আপনার লোকাল বিজনেসকে পরিপূর্ণতা দেওয়ার জন্য ব্যবহার করতে পারেন ‘গুগল মাই বিজনেস’ টুলটি। যার মাধ্যমে আপনি আপনার প্রতিষ্ঠানের ছবি, খোলা-বন্ধ রাখার সময়, যোগাযোগের তথ্য, এবং গুগল ম্যাপের ঠিকানা দিয়ে রাখার সুবিধা পাবেন। এসমস্ত তথ্য গ্রাহকদের মনে আপনার ব্যবসার প্রতি আস্থা বাড়ানোর সাথে সাথে আপনার ব্যবসাকে প্রসারিত করতে সাহায্য করবে। 

এছাড়াও আপনি যদি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো ব্যবহার করে আপনার ব্যবসার প্রচার এবং বিপণন করে থাকেন, সেক্ষেত্রে সেখানেই মিলতে পারে গ্রাহকদের মতামত। তবে চেষ্টা করতে হবে নিয়মিত এবং সঠিক সময়ে তাদের প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার মাধ্যমে নিজেদের উপস্থিতি জানান দেওয়ার। 

৭. সাইবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করুন 

অনলাইনকেন্দ্রিক ব্যবসা করার সময় আপনাকে সাইবার নিরাপত্তার বিষয়টিও মাথায় রাখতে হবে। যেমনঃ আপনার ব্যক্তিগত তথ্য নিরাপদ রাখার জন্য শক্তিশালী পাসওয়ার্ড ব্যবহার কিংবা অন্যান্য প্রটোকল ব্যবহার করা। এছাড়াও অনিরাপদ অনুভূত করলে আপনি ভিপিএন (ভার্চুয়াল প্রাইভেট নেটওয়ার্ক) ব্যবহার করে আপনার ওয়েবসাইটের সাথে সংযুক্ত হতে পারেন। 

পাশাপাশি ইন্টারনেটে স্যোশাল ইঞ্জিনিয়ারিং এর মাধ্যমে হ্যাকাররা বিভিন্ন ফিশিং স্ক্যাম করে হাতিয়ে নিতে পারে আপনার এবং আপনার গ্রাহকদের বিভিন্ন তথ্য। তাই অনলাইনে নিশ্চিন্তে এবং নিরাপদ ভাবে ব্যবসা করার জন্য বেছে নিতে পারেন বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় মার্কেটপ্লেস Bikroy.com-কে, পাশাপাশি ‘ভ্যারিফাইড ব্যাজ‘ নেওয়ার মাধ্যমে নিশ্চিত করুন আরও বেশি সংখ্যক গ্রাহক উপস্থিতি! 

শেষ কথা

Bikroy.com-সব সময় বলে থাকে ব্যবসার জন্য কোনো দিনই সমান নয়। এছাড়াও লকডাউনের এই সময় অতি অল্প বিনিয়োগে বিশেষ পূর্ব অভিজ্ঞতা ছাড়াই অনলাইন বিজনেসে ভালো করা যেতে পারে। তাই আপনারা যারা ছোট আকারে হলেও অনলাইন ব্যবসার কথা ভাবছেন Bikroy.com নিরন্তর তাদের সেবা প্রদানের লক্ষ্যে এই জরুরি অবস্থাতেও কাজ করে যাচ্ছে । 

আমরা প্রতিনিয়ত নতুন নতুন উদ্ভাবনের মাধ্যমে ছোট এবং মাঝারি সাইজের ব্যবসাগুলোর প্রসারের উদ্দেশ্যে এগিয়ে চলছি। তাই আপনিও যদি ঘরে বসে না থেকে অনলাইনের মাধ্যমে ব্যবসা করতে আগ্রহী হয়ে থাকেন, Bikroy-এ মেম্বারশিপ নেওয়ার মাধ্যমে সহজেই মিলতে পারে বাড়তি আয়ের সুযোগ। 

দীর্ঘ মেয়াদে আপনার ব্যবসার সাফল্য কামনা করছি। 

Facebook Comments
সাবস্ক্রাইব করুন

No spam guarantee.

Show More

Related Articles

Back to top button
Close
Close