চাকরিশিক্ষা

চাকরিতে আবেদন করার আগে যেসব তথ্য জেনে নেয়া উচিত

আপনি কি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সদ্য গ্র্যাজুয়েশন শেষ করেছেন? নাকি বর্তমানে কোথাও চাকরি করছেন ঠিকই, কিন্তু চাকরিটি আপনার ঠিক মনের মত বা আপনার জন্য সঠিক মনে হচ্ছে না? আমাদের প্রাপ্ত বয়সের বেশির ভাগ সময় জুড়ে আমরা এমন চাকরি খোঁজার চেষ্টা করতে থাকি, যেখানে আমরা আমাদের অভিজ্ঞতা ও দক্ষতাগুলোকে কাজে লাগিয়ে একটু ভিন্ন কিছু করতে পারি, আবার একই সাথে চাকরি করার মৌলিক সুবিধাগুলোও যথাসম্ভব অর্জন করতে পারি। কিন্তু চাকরি পাওয়ার অর্থাৎ নিয়োগ প্রক্রিয়ার কঠোর বাধা পার করে একেবারে অফার লেটার পাওয়া পর্যন্ত পুরো সময়টা বেশ একটা কঠিন পরীক্ষার সমান বলা চলে। কেননা, নিয়োগকারীরা আপনার সিভিতে উল্লেখ করা দক্ষতাগুলোর চেয়েও আরও বেশি কিছুর খোঁজ করেন। প্রচলিত নিয়োগ পদ্ধতিগুলোর মধ্যে বেশির ভাগেই মূলত দু’টি ধাপ থাকে, প্রথমে আবেদন করা ও তারপর বাছাইকৃত প্রার্থীদের ইন্টারভিউ গ্রহণ। দ্বিতীয় ধাপটি হলো এমন একটি সংকটপূর্ণ ধাপ, যেখানে এটা নির্ধারণ করা হয় যে চাকরিটির জন্য আপনি আসলেই উপযুক্ত কি না। ইন্টারভিউয়ের সময় বেসিক আচরণবিধি এবং নিজেকে সঠিক ভাবে প্রকাশ করার পদ্ধতিগুলো জানাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু তার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ হলো সঠিক তথ্য ও ধারণা নিয়ে ইন্টারভিউয়ের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করা। কেননা শুধুমাত্র সঠিক তথ্যই পারে প্রার্থী হিসেবে আপনাকে ইন্টারভিউ বোর্ডের সামনে সবার চেয়ে আলাদা করতে এবং জীবনের সেরা ইন্টারভিউটি দেয়ায় সাহায্য করতে।

আমাদের আজকের প্রতিবেদনে আমরা এমন কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পরিবেশন করেছি যেগুলো ইন্টারভিউ দিতে যাওয়ার আগে আপনার জেনে নেয়া দরকার। পাশাপাশি আমরা দিতে যাচ্ছি এমন কিছু বাড়তি টিপস যেগুলো আপনার ইন্টারভিউকে করে তুলবে বাধাহীন ও সাবলীল।

চাকরিটিতে ঠিক কী কী চাওয়া হয়েছে তা জানুন

যেকোনো ইন্টারভিউতে যাওয়ার আগে সর্বপ্রথম যে চাকরিতে আবেদন করছেন সেটি সম্পর্কে বিস্তারিত সব রকম তথ্য আপনাকে জেনে নিতে হবে। অনেক চাকরির বিজ্ঞাপনেই জব ডেসক্রিপশন বা চাকরির বিবরণ দেয়া থাকে, যেখানে নিয়োগকারীরা সম্ভাব্য প্রার্থীদের মধ্যে কী কী দক্ষতা ও বৈশিষ্ট্য খুঁজছেন সেগুলো তালিকা আকারে দেয়া থাকে, পাশাপাশি সেই পদে আপনাকে কী ধরণের কাজ ও অ্যাসাইনমেন্ট দেয়া হতে পারে সেটাও উল্লেখ করা হয়। একজন সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে আপনাকে ইন্টারভিউয়ের প্রস্তুতির প্রথম ধাপ হিসেবে সেই জব ডেসক্রিপশনটি ভালোভাবে খুঁটিনাটি পর্যবেক্ষণ করতে হবে। এই শর্ত বা চাহিদার তালিকাটি পড়ে দেখার মাধ্যমে আপনি নিচের কিছু কাজ করতে পারেন:

চাকরির সাথে আপনার দক্ষতার মিল খুঁজে বের করা

চাকরির পদটির জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষতাগুলো দেখে নেয়ার পর আপনি আপনার নিজস্ব দক্ষতা ও অভিজ্ঞতার একটি তালিকা বানাতে পারেন। সেই তালিকা অনুযায়ী চাকরিটি করার মত আপনার মধ্যে যে দক্ষতাগুলো রয়েছে সেগুলো মিলিয়ে নিতে পারেন। এমনটা করার মাধ্যমে আপনি এটা নিশ্চিত হতে পারবেন যে চাকরিতে আপনার পদে যে ধরণের কাজ করতে দেয়া হবে সেগুলো আপনি সফলভাবে করতে পারবেন কি না। পাশাপাশি চাকরিটি আপনার জন্য কতটুকু উপযুক্ত বা সেটা করা আপনার জন্য ঠিক হবে কি না সেটাও আগে থেকেই বুঝে নিতে পারবেন।

আজকাল নিয়োগকারীরা আপনার সিভিতে উল্লেখ করা শুধুমাত্র হার্ড স্কিলসগুলোই দেখেন না। বরং প্রায় সব ক্ষেত্রে, বিশেষ করে সার্ভিস ইন্ডাস্ট্রিগুলোতে প্রত্যেকটি প্রার্থীর সফট স্কিলস এর উপর তুলনামূলক বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়। এখান থেকে জেনে নিন কাস্টমার সার্ভিসের চাকরিতে কোন সফট স্কিলসগুলোকে বেশি প্রাধান্য দেয়া হয়

আপনার কোন দক্ষতাগুলো শক্তিশালী তা বুঝুন

চাকরির বিবরণে চাওয়া দক্ষতাগুলোর সাথে আপনার যোগ্যতার তালিকা মিলিয়ে দেখার পর আপনি আপনার মধ্যে থাকা শক্তিশালী দক্ষতাগুলোকে আলাদা করে যেগুলো চাকরিটির জন্য সবচেয়ে বেশি উপযোগী ও কার্যকরী সেগুলোকে বিশেষ ভাবে তুলে ধরতে পারেন। উদাহরণ স্বরূপ, আপনার আবেদন করা চাকরিটিতে যদি কর্মীর পরিচালনা করার দক্ষতা প্রয়োজন হয়, তাহলে ইন্টারভিউয়ের সময় আপনি নেতৃত্বদানের ক্ষমতার উপর বেশি করে গুরুত্ব আরোপ করতে পারবেন। ইন্টারভিউয়ের সময় চাকরির জন্য উপযোগী আপনার কোন দক্ষতাগুলোকে বেশি গুরুত্ব দিয়ে তুলে ধরবেন তা ঠিক করে নিতে পারলে, ইন্টারভিউয়ে প্রশ্নের উত্তর দেয়ার সময় আপনি শুধুমাত্র প্রাসঙ্গিক পয়েন্টগুলোর উপর ফোকাস ধরে রাখতে পারবেন।

আপনার প্রাপ্তি ও অর্জনগুলোর নমুনা প্রস্তুত রাখুন

আপনি আপনার শক্তিশালী দক্ষতা তুলে ধরার পর ইন্টারভিউয়ারদের একটি সাধারণ অভ্যাস হচ্ছে সেই সংক্রান্ত আরো কিছু ফলো-আপ প্রশ্ন আপনাকে করা। অনেক সময় এমন পরিস্থিতি আসবে যেখানে ইন্টারভিউয়ার একটি বাস্তব উদাহরণের মাধ্যমে আপনার কাছে জানতে চাইবেন যে আপনার এই শক্তিশালী দিকগুলো কখনও কোনো কঠিন পরিস্থিতির সময় কাজে লাগিয়ে সফল হয়েছেন কি না। এই রকম অবস্থায় ইন্টারভিউয়ারদের সামনে বলার জন্য আপনার সফলতার কিছু গল্প কিংবা ভালো কিছু উদাহরণ আগে থেকেই আপনার হাতে প্রস্তুত থাকা দরকার। ইন্টারভিউ দিতে যাওয়ার সময় এই ধরণের কিছু স্মৃতি ও উদাহরণ আপনার মনে আগে থেকেই প্রস্তুত করা থাকলে ইন্টারভিউয়ারের সামনে দক্ষতা নিয়ে কথা বলার সময় আপনার মধ্যে আরো বেশি আত্মবিশ্বাস কাজ করবে। ফলে ইন্টারভিউয়ার একদিকে যেমন আগ্রহ নিয়ে আপনার কথা শুনবেন, অন্যদিকে আপনার কথায় প্রভাবিতও হবেন সহজে। প্রভাবশালী একটি জবাব তৈরি করার জন্য আপনি স্টার (STAR) পদ্ধতি অনুসরন করতে পারেন :

  • Situation বা পরিস্থিতি
  • Task বা আরোপিত কাজ
  • Action বা আপনার পদক্ষেপ
  • Results বা ফলাফল

কোম্পানিটি ঠিক কেমন সেটা ভালো ভাবে জেনে নিন

চাকরির জন্য আবেদন করার সময় বেশির ভাগ প্রার্থীই যে বিপদজনক ভুলটি করে থাকেন তা হলো যে তারা আগে থেকে কোম্পানিটি সম্পর্কে খুঁটিনাটি রিসার্চ করতে ভুলে যান। যদিও অনেক ক্ষেত্রে কোম্পানি সম্পর্কে তথ্য জানা বা রিসার্চ করাটা তেমন একটা দরকার নেই বলে মনে হয়, তবুও অনেক ক্ষেত্রে ইন্টারভিউয়ের সময় এই ব্যাপারে দুই একটা কথা ঠিকই এসে যায়। অনেক ইন্টারভিউয়ার হুট করে কোম্পানি সম্পর্কে কিছু প্রশ্ন আপনাকে জিজ্ঞেস করবেন, আর তখন যদি আপনি ঠিকভাবে সেই প্রশ্নগুলোর উত্তর দিতে না পারেন, তাহলে অন্যান্য প্রার্থীদের তুলনায় কিছুটা হলেও পিছিয়ে পড়ার ঝুঁকি আপনার থেকে যাবে। তাছাড়াও ইন্টারভিউ দিতে যাওয়ার আগে কোম্পানিটি সম্পর্কে সামান্য কিছু পড়াশোনা করে নিলে ইন্টারভিউ শেষ হওয়ার পর আপনি নিয়োগকারীদের ২-১টা ভালো প্রশ্ন করতে পারবেন, যা আপনার ইম্প্রেশন তাদের সামনে আরো ভালো করে তুলতে পারে।

কোম্পানি সম্পর্কে কিছুটা রিসার্চ করার অভ্যাস আপনাকে যে শুধু ভালো ইন্টারভিউ দেয়ার ব্যাপারেই সাহায্য করবে তা না, একই সাথে আপনি কোম্পানিটি সম্পর্কে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানতে পারবেন। এতে করে আপনি জেনে বুঝে এটাও সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন যে তাদের কোম্পানিতে আপনি আদৌ কাজ করতে চান কি না। বেতনের ধরণ, বাড়তি সুবিধা, এইচআর পলিসি এবং সামগ্রিকভাবে সেই প্রতিষ্ঠানের রীতিনীতি ইত্যাদি প্রার্থীদের জন্য প্রত্যাশিত একটি চাকরির সুযোগকে গড়ার কিংবা ভাঙ্গার ক্ষমতা রাখে।

নিম্নোক্ত উপায়গুলো অবলম্বন করে আপনি একটি কোম্পানি সম্পর্কিত রিসার্চ সম্পন্ন করতে পারেনঃ

  • প্রতিষ্ঠানটির ওয়েবসাইট ভালোভাবে সার্চ করে পর্যবেক্ষণ করুন
  • কোম্পানিটির সোশ্যাল মিডিয়া একাউন্টগুলো ভালো ভাবে ঘুরে দেখা – ফেসবুক, লিংকডইন, ইউটিউব ইত্যাদি পর্যবেক্ষণ করুন, – ফেসবুকে তাদের হোম পেইজ ও ‘এবাউট আস’ পেইজটি পড়ে দেখুন
  • গুগল ও বিং এর মত সার্চ ইঞ্জিন ব্যবহার করে কোম্পানিটির সম্পর্কে বিভিন্ন প্রতিবেদন, নিউজ বা ঘোষণা ইত্যাদি খুঁজে বের করুন
  • সাধারণ মানুষ প্রতিষ্ঠানটি ও তাদের পণ্য সম্পর্কে কেমন ধারণা রাখেন ও কতটা পছন্দ বা অপছন্দ করেন সেসব জানার জন্য বিভিন্ন রিভিউ খুঁজে দেখুন

এসবের পাশাপাশি আপনি সেই প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ব্যক্তিদের নাম ও বেসিক তথ্য খুঁজে বের করতে পারেন, তবে সেটা অবশ্যই কারো গোপনীয়তা ও ব্যক্তিগত ব্যাপারে হাত না দিয়ে করতে হবে! এতে করে আপনি আপনার পরিচিতদের মধ্যে এমন কোন ব্যক্তিকে খুঁজে পেতে পারেন যিনি কোম্পানিটির সাথে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে জড়িত, আর সম্ভব হলে তিনি আপনার ইন্টারভিউতে বেশ ভালো সহযোগিতা করতে পারবেন।

চাকরিটি কোন ইন্ডাস্ট্রির তা ভালোভাবে জানুন ও বুঝুন

কোম্পানির উপর রিসার্চকে আরো এক ধাপ এগিয়ে নেয়ার জন্য আমরা পরামর্শ দিব চাকরিটি কোন ইন্ডাস্ট্রির সে ব্যাপারেও ভালো ভাবে রিসার্চ করে নিতে। বাংলাদেশের মত একটি উন্নয়নশীল দেশে আপনি চাইলেই বিভিন্ন ধরণের ইন্ডাস্ট্রিতে চাকরি খুঁজে পাবেন, কিন্তু সব ইন্ডাস্ট্রি যে আপনার জন্য উপযুক্ত এমনটা নাও হতে পারে।

সামগ্রিক ভাবে ইন্ডাস্ট্রিটি নিয়ে রিসার্চ করার অনেক রকম সুবিধা রয়েছে। এতে করে আপনার পছন্দের কোম্পানিটির পাশাপাশি তাদের প্রতিদ্বন্দ্বী অন্যান্য প্রতিষ্ঠান এবং তাদের পলিসি বা নীতিমালা এবং সংস্কৃতি এসব বিষয়েও আপনার ভালো রকম ধারণা হয়ে যাবে। ফলে আপনি তাদের সাথে আপনার পছন্দ করা কোম্পানিটির তুলনা করে আপনার সুবিধা ও চাহিদা অনুযায়ী আপনার পক্ষে সেরা ও উপযোগী চাকরিগুলো খুঁজে নিতে পারবেন। এছাড়াও আপনি ঐ ইন্ডাস্ট্রিতে একটি নির্দিষ্ট চাকরির জন্য বেতনের রেঞ্জ কেমন সেটাও বুঝতে পারবেন। যার ফলে ইন্টারভিউয়ের সময় আপনার বেতন নিয়ে কথা উঠলে যুক্তিসঙ্গত ভাবে সেটা নিয়ে আলাপ আলোচনা ও আপনার দাবি উপস্থাপন করতে পারবেন।

তাছাড়াও নির্দিষ্ট ইন্ডাস্ট্রিটি নিয়ে ভালোভাবে রিসার্চ করলে আপনি এটাও বুঝতে পারবেন যে কোন ক্ষেত্রগুলো ইন্ডাস্ট্রিতে ভালো করতে পারছে আর কোনগুলো পারছে না। আপনার রিসার্চকে আরো এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য আমাদের আরেকটি প্রতিবেদন পড়ে দেখে নিন ‘২০১৮ সালে বাংলাদেশের সেরা ১০টি চাহিদা সম্পন্ন চাকরি’।

ইন্টারভিউটি কোথায় নেয়া হবে সেটি বিস্তারিত জানুন

যখন আপনাকে ইন্টারভিউয়ের জন্য ডাকা হবে তখন সেখানে সময় মত পৌঁছানোটা খুবই জরুরি। ইন্টারভিউয়াররা সময়ানুবর্তীতা ও তৎপরতার মত মৌলিক গুণগুলো তাদের প্রার্থীদের মধ্যে খুঁজে থাকেন, আর আপনার ইন্টারভিউতে দেরি করে পৌঁছানোটা নিঃসন্দেহে একটি খারাপ ভাবমূর্তি তৈরি করে। যদি আপনি ইন্টারভিউয়ের জায়গায় ৩০ মিনিট দেরি করে পৌঁছান, তাহলে হয়তো আপনার ইন্টারভিউয়াররা এটা দেখেই আপনার প্রার্থী হওয়ার যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে পারেন, অর্থাৎ ইন্টারভিউটি দেয়ার সুযোগ আপনার আর নাও হতে পারে!

এমন পরিস্থিতি ঘটা থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য আগে থেকেই গুগল ম্যাপস কিংবা অন্য যেকোন লোকেশন নির্ধারক অ্যাপস ব্যবহার করে ইন্টারভিউয়ের জায়গাটি খুঁজে নেয়া ভালো। এতে করে আপনি জানতে পারবেন যে ঠিক কোন জায়গায় আপনাকে যেতে হবে এবং সেখানে যাওয়ার সবচেয়ে সহজ ও কম সময়ের উপায় কোনটি। ঢাকা শহরে ট্র্যাফিকের ঘনত্ব এবং ভয়াবহতা অনেক বড় একটা সমস্যা। আর সেজন্যই অনেক প্রার্থীরাই তাদের নিয়োগের দিন সময়মত অফিসে পৌঁছাতে পারেন না। অতএব আসল ইন্টারভিউয়ের দিনটায় একটু আগে ভাগে দিন শুরু করা ও রওনা দেয়াটাই বুদ্ধিমানের কাজ।

যদি ইন্টারভিউটি কোম্পানির নিজস্ব অফিসেই ঠিক করা হয়, তাহলে আগেই ২-১ বার সেই অফিসের পথে যাতায়াত করার মাধ্যমে আপনি এটা বুঝতে পারবেন যে প্রতিদিন আপনার বাসা থেকে অফিস এবং অফিস থেকে বাসায় যাতায়াত করতে কেমন সময় লাগতে পারে। একই সাথে ঐ জায়গাটায় অফিসে এসে কাজ করতে আপনার মাসে আনুমানিক কত খরচ হতে পারে। আপনার বাসা থেকে অফিস যদি অনেক বেশি দূরে হয় তাহলে সেখানে নিয়মিত কাজ করতে আপনার ভবিষ্যতে বেশ কিছু অসুবিধার সম্মুখীন হতেই হবে। তাই আপনি যদি আপনার পছন্দের কোম্পানিটিতেই চাকরি করার সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন, তাহলে অফিসের কাছাকাছি কোন একটি জায়গায় বাসা নেয়াটা আপনার জন্য সবচেয়ে ভালো হবে। আমাদের আগের প্রতিবেদনটি পড়ে দেখতে পারেন আপনার অফিসের কাছাকাছি কোন জায়গায় থাকার নানা রকম সুবিধা ও অসুবিধা

বাড়তি কিছু প্রস্তুতি নিন

পছন্দের কোম্পানি উপর ও ইন্ডাস্ট্রির উপর রিসার্চ সম্পন্ন করা এবং চাকরির বিবরণটি ভালোভাবে পড়ে দেখার পর আপনার হাতে সময় থাকে ইন্টারভিউয়ের জন্য বাড়তি কিছু প্রস্তুতি নেয়ার। কেননা আপনি যদি আপনার স্বপ্নের চাকরিটি পাওয়ার ব্যাপারে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ হন, তাহলে পূর্ব প্রস্তুতিই হতে পারে আপনার শ্রেষ্ঠ হাতিয়ার। আপনার কষ্ট করে সংগ্রহ করা সব গুলো তথ্য ও ধারণা সফল ভাবে কাজে লাগানোর জন্য নিচে উল্লেখিত কিছু বাড়তি ইন্টারভিউ টিপস মাথায় রাখতে পারেন! ভালো চাকরির জন্য নিজেকে এগিয়ে রাখতে করনীয়

ইন্টারভিউ দেয়ার চর্চা ও অভ্যাস গড়ে তুলুন

পুরনো একটি প্রবাদ রয়েছে যে “অনুশীলনই সাফল্যের মূল চাবিকাঠি”, আর যেকোনো কোম্পানিতে ইন্টারভিউয়ের ক্ষেত্রেও একই কথা খাটে। সত্যিকারের কোন একটি ইন্টারভিউ দিতে যাওয়ার আগে আপনাকে কিছু কৌশল ও বুদ্ধি খাটানোর এক্সপার্ট হতে হবে, যাতে করে আপনার প্রথম ইম্প্রেশনটি জোরালো ও প্রভাবশালী হয়। ইন্টারভিউয়ের সময় কী করা উচিত আর কী করা উচিত না ইত্যাদি বেসিক আচরণবিধি সম্পর্কে জানতে আমাদের বিশেষ প্রতিবেদনটি পড়ে দেখুন। এছাড়াও আপনার পরিবার ও বন্ধুদের সাথে আগে থেকেই ইন্টারভিউ দেয়ার চর্চা ও অভ্যাস গড়ে তুলুন, যাতে করে বাস্তবে ইন্টারভিউ দেয়ার জন্য আপনি পুরোদমে প্রস্তুত থাকতে পারেন! এ ক্ষেত্রে আরও দেখে নিতে পারেন আমাদের  আরেকটি প্রবন্ধ ইন্টারভিউ বোর্ড-এ কি করা উচিৎ আর কি উচিৎ না

সাধারণ প্রশ্নগুলোর সহজ ও সাবলীল উত্তর তৈরি করে রাখুন

বেশির ভাগ ইন্টারভিউতেই কিছু সাধারণ প্রশ্ন আপনাকে করা হবে, যেমন- “আমাদের কোম্পানিতে এই চাকরিটি কেন করতে চান? “ কিংবা “ আগামী ৫ বছরের মধ্যে নিজেকে কোথায় দেখতে চান?” তাই ইন্টারভিউ শুরু হওয়ার আগেই এই ধরণের প্রশ্নের বিপরীতে কেমন উত্তর দিবেন সেগুলো ভেবে রাখা উত্তম। এই উপায়ে ইন্টারভিউয়ের সময় এ প্রশ্নগুলোর উপযুক্ত উত্তর খুঁজে খুঁজে হয়রান না হয়ে বরং আত্মবিশ্বাসের সাথে তাদের সামনে উত্তর দিতে পারবেন।

এছাড়াও শেষের দিকে আপনার পক্ষ থেকে ইন্টারভিউয়ারকে জিজ্ঞেস করার জন্য কিছু প্রশ্ন আগেভাগেই তৈরি করে রাখা উচিত, যাতে করে চাকরিটির পদ ও এই কাজের ব্যাপারে আরো বেশি কিছু তথ্য আপনি ভালোভাবে জেনে নিতে পারেন।

ইন্টারভিউ চলাকালীন সময়ে করণীয়

ইন্টারভিউয়ের প্রস্তুতি নেয়ার পথে এটিই আপনার সর্বশেষ ধাপ। সরাসরি ইন্টারভিউয়ের সময় আপনার উচিত ইন্টারভিউয়ারদের হাতে দেয়ার জন্য আপনার সিভির বেশ কিছু হার্ড কপি হাতে রাখা। আবার একই সাথে সিভি সংক্রান্ত যেকোন ধরণের প্রশ্নের জবাব দেয়ার জন্য রেফারেন্স হিসেবে আপনার নিজের হাতেও একটি কপি রাখার উচিত। তাছাড়াও আপনার সিভিতে বেশ কয়েকজন ব্যক্তির নাম ও যোগাযোগের বৃত্তান্ত রেফারেন্স হিসেবে রাখার জন্য এক্সপার্টরা পরামর্শ দিয়ে থাকেন, যাতে করে আপনার ব্যাকগ্রাউন্ড সম্পর্কিত তথ্যগুলো সত্যায়িত করা নিয়োগকারীদের জন্য সহজ হয়। একই সাথে আপনার ঐ দিনের ইন্টারভিউয়ারের সাথে যোগাযোগ করার জন্য প্রয়োজনীয় নাম্বার ও ইমেইল এড্রেস আপনার কাছে থাকা ভালো। এতে করে চূড়ান্ত সময়ে কোন জরুরি অবস্থার কারণে আপনি ইন্টারভিউয়ে পৌঁছাতে দেরি করলে বা যেতে না পারলে তাদেরকে জানানো সহজ হবে।

শেষ কথা

সব শেষে আমরা এটুকু পরামর্শ দিতে চাই যে ইন্টারভিউয়ের ঠিক আগ পর্যন্ত কোম্পানিটির সম্পর্কে লেটেস্ট খবরাখবর জানা ও খোঁজ নেয়ার মাধ্যমে ঐ কোম্পানিতে সমসাময়িক কোন উল্লেখযোগ্য পরিবর্তনের সাথে আপনি আপ-টু-ডেট থাকতে পারবেন এবং সেই তথ্যকে আপনার চাকরি পাওয়ার রাস্তা সহজ করার জন্য কাজে লাগাতে পারবেন। যদি আপনি এই তথ্যটি ইন্টারভিউ চলাকালীন সময়ে নিয়োগকারীদের সামনে তুলে ধরতে পারেন, তাহলে তারা আপনার তৎপরতা ও কোম্পানি সম্পর্কে ধারণা রাখার মাত্রা দেখে ইমপ্রেসড হতে বাধ্য! আমাদের এই সব টিপস মাথায় রেখে চললে আপনার পরবর্তী ইন্টারভিউটি দেয়ার জন্য আপনি সর্বোচ্চ মাত্রায় প্রস্তুতি থাকতে পারবেন। 

আপনি কি এখনও নিজের জন্য সেরা ক্যারিয়ার অপশন খুঁজছেন? শত শত চাকরির বিজ্ঞাপনের মধ্যে সার্চ করে শুধুমাত্র আপনার জন্য সেরা চাকরির সুযোগ গুলো খুঁজে পাওয়ার জন্য BikroyJOBS আপনাদের পাশেই রয়েছে সব সময়। 

আপনার এলাকার মধ্যে শত শত চাকরির বিজ্ঞাপন খুঁজে পেতে ও সরাসরি অনলাইনে চাকরির আবেদন করার জন্য ব্রাউজ করুন BikroyJOBS -এ! শুভকামনা রইলো!

Facebook Comments
সাবস্ক্রাইব করুন

No spam guarantee.

Show More

Related Articles

Back to top button
Close
Close