মোবাইল

সুন্দর ডিজাইন এবং কার্যকক্ষমতাসম্পন্ন মাইক্রোম্যাক্স ক্যানভাস নিট্রো-৩ ই৩৫২ অত্যন্ত সুলভ মূল্যে

বাংলাদেশের মধ্যমমানের স্মার্টফোনের বাজার খুবই প্রতিযোগিতামূলক। স্থানীয় এবং আন্তর্জাতিক উৎপাদনকারীরা গ্রাহকদের টানতে প্রতিনিয়তই বাজারে নিয়ে আসছে নতুন নতুন সুবিধাসম্বলিত পণ্য এবং গ্রাহকদের জন্য দিন দিন বড় ধরণের অফার ঘোষণা করছে।এমন একটি প্রতিযোগিতামূলক বাজারে ‘মাইক্রোম্যাক্স ক্যানভাস নিট্রো ৩ ই৩৫২’মডেলের মোবাইল কতটা ভাল করতে পারবে?

ডিজাইন:
নান্দনিক এই মোবাইলের বাজারে নিট্রো ৩ অন্যদের ছাপিয়ে গেছে।এই স্মার্টফোনটির প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো এর পেছনের অংশটি ফক্স লেদারের উপকরণ দিয়ে তৈরি এবং রিমোভেবল (অপসারণযোগ্য)। এটির রিভিউ ইউনিট চমৎকার বেগুনী রংয়ের যা এটিকে দেখতে অনেক বেশি লেদারের মতো করেছে। এটিতো এই মোবাইলের সৌন্দর্যের অর্ধেক গল্প মাত্র সৌন্দর্যের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে এটির পেছনের দিকে যেসব মেটারিয়াল ব্যবহার করা হয়েছে তা অত্যন্ত দৃষ্টি নন্দিত এটিকে করেছে আকর্ষণীয়।উন্নত উপকরণ দিয়ে তৈরি করার কারণে এই ডিভাইসটির উপরের অংশ অনেক মজবুত এবং আঙ্গুলের দাগ পড়ে না।

Micromax Canvas Nitro side viewBack view of Micromax Canvas Nitro

ডিভাইসটির চতুর্দিকে কিছুটা গোলকৃতির এবং হালকা প্লাস্টিক দিয়ে মাঝখান পর্য়ন্ত বাকানো।ফোনটির সামনের দিকে সমতল হওয়ার কারণে এটি হাতে ধরার ক্ষেত্রে সুবিধাজনক। প্লাস্টিকের অংশটি অমসৃণ মনে হলেও প্রকৃতপক্ষে এটি অত্যন্ত মসৃণ।ফোনটি ৮.৭ মিলিমিটার চিকন এবং অপেক্ষাকৃত ছোট ফুট প্রিন্টের কারণে একহাত দিয়ে ব্যবহার খুবই সহজ।

 

পারফরমেন্স এবং হার্ডওয়ার:

মাইক্রোম্যাক্স নিট্রো ৩-এ গেমস ও অন্যান্য এ্যাপ্লিকেশন চমৎকার কাজ করে, কারণ এর রয়েছে একটি অক্টা-কোর ১.৪ গিগাহার্টজ প্রসেসর এবং ২জিবি র‌্যাম। ট্রানজিশন এনিমেশনগুলো খুবই মসৃণ এবং কোনো ফ্রেইম বাদ পড়েছে এমন পাওয়া যাবে না। ডিভাইসটিকে পরীক্ষা করতে আমরা এতে মডার্ন কমবেট-৫, অ্যাসফাল্ট-৮ এবং নোভা-৩ দিয়েছি। ডিফল্ট সেটিংয়ে ক্যানভাস-৩ কোনো ধরনের ঝামেলা ছাড়াই চলেবে, শুধু গেমসের চুড়ান্ত পর্যায়গুলোতে ছোটখাটো কিছু সমস্যা ছাড়া।

Performance & Hardware ofMicromax Canvas Nitro

২৫০০ এমএএইচ (মিলি এম্পিয়ার আওয়ার)ইউনিটের ব্যাটারি ছিল খুবই সাধারণ। আমি পুরো দিন ব্যবহার করতাম। বেশিরভাগক্ষেত্রেই রাত ১১টার আগেই চার্জ শেষ হয়ে যেত। পাওয়ার সেভিং মুডে নিয়ে আরো বেশি সময় ব্যবহার করতে চাইতাম। কিন্তু সেক্ষেত্রে এমন সুযোগ ছিল না। এখানে পারফরমেন্স কমিয়ে পাওয়ার সেইভ করাটা খারাপ না।

Battery life of Micromax Canvas Nitro

এই ফোনের স্পিকারও বেশ ভাল। যদিও অডিও সর্বোচ্চ ভলিউমে সাউন্ড হলে কিছুটা ফেটে যাবে বলে মন হয়।ফোনের পেছনের অংশে স্পিকার হলেও খুব বেশি সুবিধা হবে না। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এটি প্রয়োজনের তুলনায় যথেষ্ট হবে। অডিওর চেয়ে এর কল কোয়ালিটি অত্যন্ত চমৎকার।আমি ব্যবহারের সময় কোনো কলড্রপ হয়নি এবং যারা কল করেছেন তারাও বলেছেন কলের সময় এর কথা খুবই স্পষ্ট শুনতে পাওয়া যায়।

মাইক্রোম্যাক্স নিট্রো-৩-এ একটি মাইক্রো এসডি কার্ড স্লট রয়েছে যেটির মাধ্যমে এর স্টোরেজ ক্ষমতা ৩২ জিবি পর্যন্ত বাড়ানো যাবে। এটি মূল মেমরি ১৬ জিবি (যার ১০.৮২ জিবি গ্রাহকের ব্যবহারযোগ্য) স্টোরেজ ক্ষমতার বাইরে। এছাড়া এই মোবাইলে দুটি মাইক্রো সিম কার্ড স্লটও রয়েছে।

সফটওয়ার:

Micromax Canvas Nitro Lolipop Version

মোবাইলটির অ্যান্ড্রোয়েড ৫.১-এ ললিপপে প্রধানত স্টক করা বিভিন্ন সুবিধা রয়েছে। এতে একটি থার্ড পার্টি হোম লাঞ্চার রয়েছে যেটিতে বেশ কিছু কাস্টমাইজেশন ফিচার রয়েছে যেমন, ট্রানজিশন ইফেক্ট পরিবর্তনের ক্ষমতা। মোবাইলটিতে কো অ্যাপস ড্রয়ার না থাকায় কোন অ্যাপস ডাউনলোড করার জন্য নতুন ফোল্ডার তৈরি করতে হবে।বাকী ইন্টারফেস ব্যবহারকারীগুলো নিরেট অ্যান্ডোয়েড। লাঞ্চার নিজেই অনেক মসৃণ এবং মৌলিক সঙ্কেতের কার্যকারিতা রয়েছে, যেমন নোটিফিকেশন ট্রে ওপেন করার সময় এটি নিচের দিকে সুইপ করে।

Micromax Canvas Nitro Phone Details

ক্যামেরা:

Camera of Micromax Canvas Nitro

নিট্রো-৩ এর মূল ক্যামেরাটি ১৩ মেগাপিক্সেল ইউনিটের।অন্যদিকে সামনের দিকের ক্যামেরাটিও ৫ মেগাপিক্সেলের। উভয় ক্যামেরাতে রয়েছে একটি করে এলইডি ফ্লাশ। হ্যাঁ আপনি ঠিকই পড়ছেন! উভয় ক্যামেরাতেই রয়েছে একটি করে এলইডি ফ্লাশ। এছাড়াও এর মধ্যে আপনি পাবেন এইচআরডি, প্যানারোমা, মাল্টি এঙ্গেল এবং ফেইস বিউটি’এর মতো নানা সুবিধা। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে আপনি ‘ডিফল্টসেটিং’ই পাবেন।

Photography with Micromax Canvas Nitro Photography with Micromax Canvas Nitro 3 Photography with Micromax Canvas Nitro 2 Photography with Micromax Canvas Nitro 1 Selfie wih Micromax Canvas Nitro

এই ক্যামেরা দিয়ে অতিরিক্ত আলো এবং কম রংয়ের উপস্থিতি থাকলে আলোর সমন্বয় করে ছবি তোলা যাবে।‘ওভারএক্সপোজড’এর মাধ্যমে আলোর সমন্বয় হেয়ে যাবে। তবে পর্যাপ্ত আলো এবং রংয়ের উপস্থিতি থাকলে এই ক্যামেরা দিয়ে খুব ভালো ছবি আসে। সামনের ক্যামেরাটি দিয়ে ভালো ছবি আসে, তবে এর সাথে ফ্লাশ ব্যবহার করা একটু ঝামেলার। এক্ষেত্রে ফ্লাশ বেশি আলো দেয় এবং সেলফি তোলার ক্ষেত্রে অনেক সময় ছবি মূল ফোকস থেকে সরে যেতে পারে। যদিও বড় গ্রুপ সেলফির ক্ষেত্রে ভাল কাজ করে কেননা এটি সাধারণত ফেইসের কাছাকাছি থাকে না।

 

ডিসপ্লে:

Display of Micromax Canvas Nitro

নিট্রোর ১২৮০/৭২০ রেজোলিউশনের সাথে ৫ ইঞ্চি আইপিএস (ইন-প্ল্যান সুইচিং) ডিসপ্লে দেখতে বেশ চমৎকার। বিভিন্ন দিক থেকে দেখলেও এর উজ্জ্বলতা বা দীপ্তি (ব্রাইটনেস) একই রকম দেখাবে। এর সর্বোচ্চ আলোর মাত্রার কারণে ঘরের বাইরে আলোর মধ্যেও খুব সহজেই স্ক্রীন পড়া যায়। আবার অন্ধকারের মধ্যেও আলোর মাত্রা সহনীয় মাত্রায় কমে যাওয়ায় সহজেই পড়া যায়।ডিসপ্লের রং পাশের কম রংয়ের দৃশ্যের সাথে মিশে যায়। কিন্তু সার্বিকভাবে জিনিসটি খুবই সুন্দর বলেই মনে হয়। এছাড়া করনিংস গরিলাগ্লাস-৩ আপনার ডিসপ্লেকে দাগ পড়া এবং ফাটল ধরা থেকে রক্ষা করবে।

উপসংহার:

মাইক্রোম্যাক্স নিট্রো-৩ ই৩৫২ আকর্ষণী সব ডিজাইন নিয়ে বাজারে আসছে।মোবাইলটির পেছনের অংশ ফক্স চামরার তৈরি এবং প্যাকটির কিছু নির্দিষ্ট ও বিশেষ কার্যকারিতা রয়েছে। কোম্পানিগুলো গ্রাহকদের টানতে মূলত ডিজাইনেই বেশি দৃষ্টি দেয়, যদিও স্পেসিফিকেশনও সমান গুরুত্ব বহন করে। চুড়ান্তভাবে যে জিনিসটা পার্থক্য গড়ে দেয় তা হচ্ছে মোবাইলের দাম। ‘মাইক্রো ম্যাক্স ক্যানভাস নিট্রো-৩ এর দাম মা্ত্র ১০ হাজার ৯৫ টাকা। এই দামের মধ্যে ক্যানভাস নিট্রো অত্যন্ত উপযোগী এবং ভালো মানের একটি মোবাইল। কারণ মোবাইল বাজারের অন্য প্রতিযোগীরা একই মানের মোবাইল ও প্যাকেজের জন্য আর বেশি দাম চাচ্ছে। মোবাইল কেনার জন্য আপনার বাজেট যদি সীমিত হয় এবং ভালো মানের পণ্য কিনতে চান তাহলে মাইক্রোম্যাক্স ক্যানভাস নিট্রো-৩ ই৩৫২ কিনতে পারেন। আর যদি এর চেয়ে বেশি সক্ষমতা থাকে তাহলে আপনার জন্য আরও অসাধারণ ও উন্নত মডেলের কিছু মোবাইল রয়েছে।

সবিস্তার বিবরণ:
ডিসপ্লে ৫ ইঞ্চি এইচডি (১২৮০*৭২০) আইপিএস এর সাথে তিনটি গোরিলা গ্লাস
আয়তন/মাপ ১৪৪.৩এমএম*৭২এমএম*৮.৭এমএম
প্রসেসর ৩২-বিট অক্টা-কোর ১.৪ গিগাহার্টজ মিডিয়া টেক এমটি ৬৫৯২
র‌্যাম ২জিবি
রোম ১৬জিবি (১০.৮২জিবি ব্যবহারযোগ্য এবং মাইক্রো এসডি কার্ডসহ ৩২জিবি পর্যন্ত বৃদ্ধি করা যাবে
জিপিইউ মালি ৪৫০-এমপি
ব্যাটারি ২,৫০০ মিলি এ্যাম্পিয়ার আওয়ার
টক টাইম ৯ ঘণ্টা
স্ট্যান্ডবাই টাইম ৩৭৫ ঘণ্টা
ক্যামেরা মূল্ ক্যামেরা ১৩ মেগাপিক্সেল এবং ফ্রন্ট ক্যামেরা ৫ মেগাপিক্সেল
কানেক্টিভিটি অপশন ওয়াইফাই/বিটি ৪/এফএম জিপিএস
ফ্রিকোয়েন্সি ব্যান্ড জিএসএম-৮৫০/৯০০/১৮০০ মেগাহার্টজ ডব্লিউসিডিএমএ-৯০০/২১০০ মেগাহার্টজ
ভিডিও ফরমেট এমপি ফোর, থ্রি জিপি
অডিও ফরমেট এমপি থ্রি, এমআইডিআই, ডব্লিউএভি, এএসি
এফএম সাপোর্ট করে

Facebook Comments
সাবস্ক্রাইব করুন

No spam guarantee.

Show More

Related Articles

Back to top button
Close
Close