চাকরি

চাকুরী খোঁজার জন্য যা করবেন – পরিকল্পনা করে চাকুরী খুঁজুন

কর্মহীন অনেক লোকের কারনে চাকুরীর বাজার খুবই প্রতিযোগিতাপূর্ণ হতে পারে। প্রতিযোগিতায় আলাদাভাবে নিজের অবস্থান তৈরি করে নিতে কিছু কাজ করতে হবে, কিন্তু চাকুরী খোঁজার জন্য চাকুরী প্রত্যাশীদের মধ্যে অনেকেই এই সহজ ধাপগুলো অনুসরণ করেন না। বাংলাদেশে কিংবা ঢাকায় কোনো কাজ খোঁজার জন্য আপনি যদি গবেষণা করেন এবং সে অনুযায়ী আপনার জীবনবৃত্তান্ত সাজান, তবে তখন অন্যদের তুলনায় আপনি অনেক এগিয়ে যাবেন। এর মাধ্যমে আপনি কাজ খোঁজার জন্য দরকারি ধাপসমূহ, জীবনবৃত্তান্ত লেখার জন্য প্রয়োজনীয় পরামর্শ এবং চূড়ান্তভাবে সাক্ষাৎকার প্রক্রিয়া সম্বন্ধে সহায়তা পাবেন।

কীভাবে জীবনবৃত্তান্ত সাজাবেন?

কোনো নিয়োগকারী বা নিয়োগদানকারী ব্যবস্থাপকের সাথে যোগাযোগের প্রথম উপায় হলো জীবনবৃত্তান্ত। এটিই হলো আপনার প্রাথমিক উপায়, তাই একে যথাসম্ভব পেশাদারিত্বের সাথে সাজিয়ে নেয়া উচিত। বিষয়টি এমন নয় যে, নিয়োগদানকারী ব্যবস্থাপক আপনার জীবনবৃত্তান্ত দেখার জন্য টস করবেন।

কৌশলগত নির্দেশনা

আপনার অভিজ্ঞতার সাথে সাথে আপনার জীবনবৃত্তান্তের দৈর্ঘ্যও পরিবর্তিত হয়, কিন্তু সংক্ষিপ্ত এবং যুতসই শব্দ ব্যবহারের মাধ্যমে তা এক পৃষ্ঠায় সীমাবদ্ধ রাখা উচিত। যদি অতিরিক্ত শব্দ বাদ দেয়া সম্ভব হয়, তবে আপনার তাই করা উচিত। নিয়োগকারীদের চাওয়া হলো আপনি সঠিক জায়গায় থাকেন এবং এজন্য আপনি কীভাবে তাঁদের কোম্পানির জন্য সম্পদ হতে পারেন তা প্রমাণ করুন। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ এবং দক্ষতাসমূহ হাইলাইট করুন।

ফন্ট, মার্জিন এবং আকার

আপনি যদি সবার চেয়ে আলাদা হতে চান, তবে নিশ্চয়ই বাজে কারনে আলাদা হতে চাইবেন না। উদ্ভট লিপি বা ফন্ট, এবং উজ্জ্বল, মোটা রঙের ব্যবহার পেশাদারিত্বের পরিচয় বহন করে না। ফন্টগুলো সহজপাঠ্য হতে হবে, যেমন Times New Roman, এবং পাতায় কী পরিমাণ তথ্য সন্নিবেশিত করা হবে তার উপর ভিত্তি করে ফন্টের আকার ১০ বা ১২ হওয়া উচিত। আপনার জীবনবৃত্তান্তে এক ইঞ্চি মার্জিন থাকা উচিত, যেন পাঠ করতে সুবিধার জন্য যথেষ্ট পরিমাণ সাদা জায়গা থাকে।

কার্যকর কী-ওয়ার্ড ব্যবহার ও হাইলাইট করার দক্ষতা

ছোট করার জন্য জীবনবৃত্তান্ত অধিকাংশ বাক্য নির্দেশক ক্রিয়া দিয়ে শুরু করা উচিত। যদিও এই পদ্ধতিটি অধিকাংশ যোগাযোগের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়, তবে জীবনবৃত্তান্তে তা থাকতে হবে। আপনি ক্রিয়াগুলোকে এমনভাবে ব্যবহার করবেন যেন সেগুলো আপনার কাঙ্খিত বিষয়কে পেশাদারিত্বের সাথে ফুটিয়ে তোলে, এবং আপনার ইন্ডাস্ট্রি বা শিল্পের সাথে সংশ্লিষ্ট কী-ওয়ার্ড তাতে অন্তর্ভুক্ত থাকে। উদাহরণ স্বরূপ, আপনি যদি ফাইন্যান্সের চাকুরী খুঁজেন, তবে কী-ওয়ার্ড হিসেবে আপনি নির্ভুলতা, খুঁটিনাটি বিষয়ের উপর মনোযোগ এবং বিশ্লেষণক্ষমতা ইত্যাদি ব্যবহার করবেন।

কীভাবে কভার লেটার লিখবেন?

কভার লেটারের গুরুত্ব

চাকুরী খুঁজেন এমন প্রায় ৫০% লোক কভার লেটার যুক্ত করেন না। এ কারণে কভার লেটার যুক্ত জীবনবৃত্তান্তগুলোর ভিড়ে কভার লেটার বিহীন জীবনবৃত্তান্তগুলো হারিয়ে যাবে। জীবনবৃত্তান্তকে যদি পরিচয় বলা চলে, তবে কভার লেটার হলো ঐ কোম্পানিতে আপনার পরিচয়ের কারণ। ঐ কোম্পানির জন্য আপনি কেন একটি সম্পদ হতে পারেন, সে কারণটি তাঁদেরকে বুঝিয়ে বলুন। প্রত্যেকটি কভার লেটারই কোনো নির্দিষ্ট কোম্পানিকে উদ্দেশ্য করে লেখা উচিত। এটি কোনো ফরমে আবেদনপত্র নয়, বরং তা ঐ কোম্পানির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে হবে।

কোম্পানিটি নিয়ে গবেষণা করুন

কভার লেটারে কোম্পানি নিয়ে কোনো পরিসংখানের সূত্র উল্লেখ করুন যেন তাতে আপনার সুনির্দিষ্ট আগ্রহ প্রকাশ পায়। এই বর্ণনা যেন আপনার আপনার অভিজ্ঞতার সাথে খাপ খায় তা নিশ্চিত করুন। গত বছর কোম্পানিটি যদি অনেক বেশি বিক্রি করে থাকে, তবে সেই বিক্রিকে আপনি কীভাবে আরও বাড়াতে পারেন তা উল্লেখ করুন। আপনাকে নিয়োগ প্রদান করলে কীভাবে তা কোম্পানির জন্য আশীর্বাদ হতে পারে তা উল্লেখ করুন।

নিজেকে ব্র্যান্ডিং করুন

শুধুমাত্র কোম্পানির জন্য নয়

আপনি যখন ব্র্যান্ডিং-এর ব্যাপারে চিন্তা করেন, তখন আপনি বড় কোম্পানি এবং কর্পোরেশন নিয়ে চিন্তা করেন। তাঁরা একটি ধারণা নিয়ে কাজ করেছেন এবং ঐ ধারণার উপর ভিত্তি করে তাঁদের ব্র্যান্ড তৈরি করেছেন। বিষয়টি হলো তাঁরা কীভাবে গ্রাহকদের নিকট পরিচিত হতে চায়। চাকুরী খোঁজার জন্য এবং আপনার ব্র্যান্ডিং-এর জন্য, বিশেষ করে হিসাবরক্ষণ ও বিপণনের কাজের জন্য আপনাকে ঐক্যবদ্ধ উপায় বিবেচনা করতে হবে। এমন একটি শব্দ বা শব্দগুচ্ছ খুঁজুন যাকে কেন্দ্র করে আপনি আপনার ব্যক্তিগত ব্র্যান্ড তৈরি করতে ইচ্ছুক এবং কাজ খোঁজার সময় তার দিকে মনোযোগ থাকে। আপনি একটি একিভুত ছবিও চাইবেন। অনেক লোক পেশাদার ছবি, ব্যয়বহুল কার্ড স্টক এবং জীবনবৃত্তান্তের সাথে খাপ খাওয়ানো খামের মাধ্যমে অনলাইনে তাঁদেরকে ব্র্যান্ড করা শুরু করছেন।

লিঙ্কডইন প্রোফাইল

নিয়োগকারীদের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য অনলাইন সাইট হলো সর্বোত্তম উপায়গুলোর একটি। সম্ভাব্য প্রার্থীগণ যখন তাঁদের কোম্পানিতে আবেদন করেন, তখন আবেদনকারী সম্বন্ধে গবেষণা করার জন্য নিয়োগদানকারী ব্যবস্থাপক লিঙ্কডইন-এ যেতে পারেন। আপনার জীবনবৃত্তান্ততে এবং পেশাদার প্রোফাইলে একই রকম তথ্য সন্নিবেশিত করার বিষয়টি নিশ্চিত করবেন।

নিজেকে নিয়ে গুগল করুন

আপনি আপনার অনলাইনের সকল তথ্য অনেক বেশি ফুলানো ফাঁপানো দেখতে ইচ্ছুক। অনলাইনে এমন কোনো ছবি বা বিষয় আপলোড করবেন না যা আপনি আপনার নিয়োগকারীকে দেখাতে আপনি ইচ্ছুক হবেন না। তাঁরা গুগলে খুঁজবেন এবং সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে সময় নষ্ট করার পূর্বে আবেদনকারীকে নিয়ে গবেষণা করবে।

চাকুরীর অনুসন্ধান অনন্য করুন

অনলাইনে অনুসন্ধান

চাকুরী প্রত্যাশীদের জন্য অনলাইনে অনুসন্ধান করা এখনও একটি চমৎকার উপায় হওয়া সত্ত্বেও অনন্য চাকুরীর সুযোগের জন্য আপনার উচিত অনুসন্ধানের পরিধি বড় করা। Bikroy.com-এর মতো সাইটে ঢাকার জন্য আপনি অনেক চাকুরীর বিজ্ঞাপন পাবেন। এখানে আপনি পাবেন হিসাবরক্ষণের চাকুরী, ফাইন্যান্সের চাকুরী এবং বিপণনের চাকুরী, তবে মনে রাখবেন, এখানে কিন্তু চাকুরী প্রত্যাশীদের সংখ্যাও অনেক। যখন Bikroy.com-এর মতো কোনো সাইট দেখবেন, তখন অনুসন্ধান করার সময় আপনার কী-ওয়ার্ড এবং দক্ষতাসমূহকে বিবেচনায় নেবেন। আপনার কাঙ্খিত শিল্পের বাইরেও চিন্তা করুন। আপনি যদি ফাইন্যান্সের চাকুরী খুঁজেন তবে আপনি আপনার নিজের জেলায় তা করতে পারেন। ব্যবসায়িক জগতের প্রায় প্রত্যেকটি খাতেই প্রশাসনিক এবং দাপ্তরিক পদ রয়েছে।

স্থানীয়ভাবে অনুসন্ধান করুন বা আপনার অনুসন্ধানের পরিধি বৃদ্ধি করুন।

আপনি যদি আপনার স্থানীয় বাজারে অনুসন্ধান করেন, তবে আপনার চারপাশের কোম্পানিগুলোতে কভার লেটার সহ জীবনবৃত্তান্ত পাঠাতে মোটেও ঘাবড়াবেন না। তাঁরা হয়তো এখনও বিজ্ঞাপন দেয়া শুরু করেনি বা জরুরী ভিত্তিতে শুন্যস্থান পূরণ করতে হতে পারে, এবং এভাবে প্রথমেই আপনি আপনার প্রতিদ্বন্দ্বিতা কমিয়ে ফেলতে পারেন।

আপনি চূড়ান্তভাবে যখন আপনার সাক্ষাৎকার দেন, তখন তাঁদেরকে তাঁদের সময় দেয়ার জন্য ধন্যবাদ সম্বলিত একটি নোট দিতে ভুলবেন না। এটি হলো এমন আরেকটি জায়গা, চাকুরী অনুসন্ধানের ক্ষেত্রে যেখানে আপনি অন্য সবার চেয়ে আলাদা হতে পারেন।

Facebook Comments
সাবস্ক্রাইব করুন

No spam guarantee.

Show More

Related Articles

Back to top button
Close
Close