চাকরি

বাংলাদেশে মোটরগাড়ির কাজ এবং ড্রাইভিং পেশা

বাংলাদেশে পছন্দ অনুসারে বাছাই করে নেয়ার মত বিভিন্ন ধরনের চাকুরি রয়েছে। বাংলাদেশে সবসময় লোক নিয়োগের উচ্চ চাহিদা রয়েছে এমন একটি চাকুরিখাত হলো পরিবহণ শিল্প। ছোটবড় বিভিন্ন কোম্পানী সবসময়ই ড্রাইভার নিয়োগ করছে। এই খাতে সবসময় পদ খালি থাকে, কারণ এখানে চাকুরি বদলের হার খুব বেশি। ড্রাইভাররা খুব ঘন ঘন এক কোম্পানী বদল করে আরেক কোম্পানীতে যোগ দেন। ফলে কোম্পানীগুলো শূন্যপদ পূরণের জন্য নতুন লোক নিয়োগে বাধ্য হয়। একজন বাস ড্রাইভার বা ট্যাক্সি ড্রাইভার হিসেবে আপনি কতটা আয় করার আশা করেন তা নির্ভর করছে আপনার নিয়োগকর্তা, আপনার নির্ধারিত কর্মঘন্টা এবং আপনি কোন এলাকায় গাড়ি চালাচ্ছেন তার উপর। ঢাকায় যত ধরনের চাকুরি রয়েছে সেগুলোর মধ্যে পরিবহণ শিল্পেই সুযোগসুবিধা সবচেয়ে বেশি। যেসব নিয়োগকর্তা লাইসেন্সধারী ও প্রশিক্ষিত ড্রাইভার চান সেসব জায়গায় চাকুরি পেতে আপনাকে যতটা প্রশিক্ষণ নিতে হবে সেরকম প্রশিক্ষণ সমাপ্ত করতে আপনাকে খুব বেশি সময় ব্যয় করতে হবে না। ড্রাইভার হিসেবে পেশাজীবন শুরু করাটা বেশ সহজ, কারণ এখানে যত শূন্যপদ থাকে তাতে যে কোনো একটা জায়গায় কাজ পেয়ে যাওয়াটা কঠিন নয়। বাংলাদেশে মোটরগাড়ি এবং ড্রাইভিং খাতে সচরাচর যেসব চাকুরি আপনি খুঁজে পাবেন এখানে তার কয়েকটির বিবরণ দেয়া হলো:

ট্যাক্সি ড্রাইভার

বাংলাদেশে সহজলভ্য পরিবহণ সংক্রান্ত বিভিন্ন চাকুরির মধ্যে এটাই হলো সবচেয়ে বেশি প্রচলিত। আপনার যদি একটি লাইসেন্স, সুপারিশ করার মতো ভালো কেউ এবং সামান্য অভিজ্ঞতা থাকে, তাহলে যেকোনো একটা ট্যাক্সি সার্ভিস কোম্পানীতে কাজ পেতে আপানাকে কোনো ঝামেলাই পোহাতে হবে না। আর আপনার যদি লাইসেন্স না থাকে তাহলে আপনাকে সেটার জন্য আবেদন করতে হবে এবং উপযুক্ত প্রশিক্ষণ নিতে হবে ও নিবন্ধন করে নিতে হবে। এর জন্য খরচ যা লাগবে সেটা নির্ভর করবে আপনি কোন শহরে রয়েছেন তার উপর। আরেকটি জরুরী ব্যাপার হলো আপনাকে শহরের রাস্তাঘাট সম্পর্কে জানাশোনা থাকতে হবে, কারণ রাস্তাই হলো আপনার কাজের জায়গা। ছোটখাট কোম্পানীর ট্যাক্সিগুলোতে কোনো জিপিএস সিস্টেম থাকে না, কারণ সেগুলো খুবই ব্যয়বহুল। সুতরাং, ড্রাইভারকে সবগুলো রাস্তার অবস্থান জানতে হবে। আবার এমন অনেকেই রয়েছেন যারা কোনো ট্যাক্সি সার্ভিস কোম্পানীতে নয় বরং নিজের গাড়ি চালাতে পছন্দ করেন যাতে লাভের টাকার ভাগ কোনো ট্যক্সি সার্ভিস কোম্পানীকে না দিয়ে পুরোটাই নিজের কাছে রাখা যায়। অনেকেই এভাবে বেশ ভাল আয় উপার্জন করছেন। যাহোক, কোনো ট্যাক্সি সার্ভিস কোম্পানীর হয়ে গাড়ি চালানো ড্রাইভারের চাইতে নিজস্ব গাড়ি চালান এমন ট্যাক্সি ড্রাইভারের খরচ বেশি হয়। উদাহরণস্বরূপ, আপনি যদি স্বনিয়োজিত ড্রাইভার হয়ে থাকেন, তবে আপনাকে নিজ খরচে গ্যাস কিনতে এবং নিজের গাড়ির মেরামত খরচ পুরোটাই বহন করতে হবে। কিন্তু আপনি যদি কোনো ট্যাক্সি সার্ভিস কোম্পানীর হয়ে কাজ করেন, তবে সমস্ত খরচই কোম্পানী বহন করবে। দয়া করে মনে রাখবেন যে, বাংলাদেশে লাইসেন্স এবং নিবন্ধন ছাড়া নিজস্ব ট্যাক্সি সার্ভিস ব্যবসা পরিচালনা করা অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হয়।

বাস ড্রাইভার

বাংলাদেশে বাস একটি অতিসাধারণ জনপরিবহণ। ফলে এখানে বাস ড্রাইভিংয়ের চাকুরির ক্ষেত্রে লোকের ব্যপক চাহিদা রয়েছে। যাহোক, বাস ড্রাইভারদের ক্ষেত্রে সাধারণ একটি লাইসেন্স ছাড়াও বিশেষ প্রশিক্ষণ অবশ্যই থাকতে হয়। বাস ড্রাইভিংয়ের চাকুরিতে আবেদন করার পূর্বে আপনার শহরে বাস ড্রাইভিংয়ের ক্ষেত্রে বিশেষ কী কী গুণ থাকা দরকার সে সম্পর্কে খোঁজখবর করে ঠিকঠাক জেনে নিতে হবে। ট্যাক্সি ড্রাইভিংয়ের ক্ষেত্রে যেমন, বাস ড্রাইভিংয়ের ক্ষেত্রেও ঠিক তেমনই, আপনার আয় উপার্জন নির্ভর করবে আপনি কোন কোম্পানীর হয়ে কাজ করছেন তার উপর। স্থানীয় কোনো স্কুলবাস চালিয়ে আপনি যা আয় করবেন তার চেয়ে একটি সিটিবাস চালিয়ে অনেক বেশি আয় করতে পারবেন। বিভিন্ন কোম্পানীতে খোঁজখবর নিয়ে দেখতে পারেন কারা কেমন বেতন দেয়। একথা আপনার ভালভাবে বুঝে নেয়া দরকার যে, বাস ড্রাইভার হিসেবে আপনি যত বেশি অভিজ্ঞতা অর্জন করবেন আপনার জন্য চাকুরির সুযোগ ততই বেশি হবে। শুধু তাই নয় যারা মাত্রই লাইসেন্স গ্রহণ এবং প্রশিক্ষণ শেষ করেছেন তাদের তুলনায় অভিজ্ঞ ড্রাইভারেরা শুরুতেই মোটা বেতন পেয়ে থাকেন।

মেকানিক

ড্রাইভারের চাকুরি পাওয়ার চাইতে মেকানিকের চাকুরি পাওয়া তুলনামূলকভাবে কঠিন, কারণ তাতে বেশ খানিকটা লেখাপড়া এবং প্রশিক্ষণ থাকতে হয়। যাহোক, মেকানিকরা ড্রাইভারদের চাইতে উল্লেখযোগ্য রকমের বেশি টাকা উপার্জন করে থাকেন, কারণ এটা এমন একটা দক্ষতাসমৃদ্ধ পেশা যার উচ্চ চাহিদা রয়েছে। এ পেশার জন্য দরকারি যন্ত্রমেরামত কৌশল শিক্ষার কোনো বিদ্যালয় থেকে যদি আপনি সফলভাবে প্রশিক্ষণ সমাপ্ত করে থাকেন, তবে অনেক কোম্পানীই আপনাকে তাদের চাকুরিতে নেয়ার জন্য মুখিয়ে থাকবে। মেকানিকেরা বিভিন্ন ক্ষেত্রে কাজ পেতে পারেন। তবে বাস কোম্পানীগুলোতে তাদের বাসগুলোর কোনোটি নষ্ট হওয়ামাত্র তা মেরামত করিয়ে রাস্তায় ফিরিয়ে আনার জন্য দক্ষ মেকানিক প্রয়োজন হয়। একইভাবে, ডেলিভারি কোম্পানীগুলোর ডেলিভারির কাজে ব্যবহৃত যানবাহনগুলোকে সম্পূর্ণ চালু অবস্থায় রাখতে তাদেরও মেকানিক দরকার হয়। আপনি অবশ্য স্থানীয় কোনো গাড়ি মেরামতের দোকানেও কাজ পেতে পারেন। কিছু কিছু ক্ষেত্র রয়েছে যেখানে অল্প অভিজ্ঞতাতেও কাজ হয়। যেমন: ইঞ্জিনের তেল পরিবর্তন, লুব্রিকেটিংয়ের কাজ বা টায়ার পরিবর্তনের মত বিশেষায়িত কাজের দোকানগুলো। এই ধরনের কাজগুলো তুলনামূলকভাবে সহজ এবং কোনো দোকানে শিক্ষানবিশ হিসেবে কাজ করতে করতেই তা শিখে ফেলা যায়।

ডেস্প্যাচার

আরেক ধরনের চাকুরি আছে যেটা আপনি বেছে নিতে পারেন। এই চাকুরিতে ড্রাইভার হওয়ার তুলনায় কম চাপ গ্রহণ করতে হয়। একজন ডেস্প্যাচারকে কোনো ট্যাক্সি কোম্পানীর হয়ে কাজ করতে হয়। ডেস্প্যাচারেরকাজ হলো নিজস্ব বেতার সিস্টেমের মাধ্যমে ড্রাইভারদের সাথে যোগাযোগ রাখা এবং কোনো সেবাগ্রাহক যাত্রীকে কখন কোথা থেকে তুলে নিয়ে গন্তব্যে পৌঁছে দিতে হবে তা বলে দেয়া। ট্যাক্সি ভাড়া করতে ইচ্ছুক এমনসব যাত্রীর কাছ থেকে ডেস্প্যাচার ফোনকল গ্রহণ করেন । সেবাগ্রাহক যাত্রীর ঠিকানাসহ যাত্রীর বাসায় ট্যাক্সি পাঠানোর চাহিদাকৃত সময়টি লিখে রাখতে হয়। ডেস্প্যাচার হিসেবে চাকুরি পেতে হলে আপানকে সেবাগ্রাহক যাত্রীর খুঁটিনাটি বিষয় সম্পর্কে সতর্ক থাকতে হবে। ড্রাইভারকে সঠিক তথ্য সরবরাহ করাটা ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। ড্রাইভারকে আপনি যদি ভুল ঠিকানা কিংবা ভুল সময় জানান তাহলে সেবাগ্রাহক যাত্রীকে সময়মত গাড়িতে উঠিয়ে নেয়া সম্ভব হবে না। ফলে তারা অন্য কোনো কোম্পানীর ট্যাক্সি ডেকে নেবেন।

এয়ারপোর্ট শাটল

এয়ারপোর্ট শাটল চালানো এই হিসেবে বাস চালানোর মতই যে, এতে ড্রাইভারকে সবসময় একই রুটে চালাতে হয়। এয়ারপোর্ট শাটল সাধারণত একটি ভ্যানগাড়ি হয়ে থাকে যেটাতে বিমানবন্দরে নামা যাত্রীদেরকে তুলে নিয়ে তাদের হোটেলে পৌঁছে দিতে হয় অথবা হোটেল থেকে তুলে নিয়ে বিমানবন্দরে পৌঁছাতে হয়। এয়ারপোর্ট শাটলে সাধারণত ১০ জনের বেশি যাত্রী বহন করা হয় না। অন্যান্য ড্রাইভিং চাকুরির চাইতে এই চাকুরিতে চাপ তুলনামূলকভাবে কম। বাস বা ট্যাক্সি ড্রাইভিংয়ের চাকুরির চাইতে এই চাকুরিতে শূন্যপদের সংখ্যা কম, কারণ এই ধরনের চাকুরিগুলো শুধুমাত্র বিমানবন্দরের আশেপাশে ছাড়া অন্য কোথাও নেই।

Facebook Comments
সাবস্ক্রাইব করুন

No spam guarantee.

Show More

Related Articles

Back to top button
Close
Close